আজ ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানো ও সংরক্ষণের নিয়ম

  • In বিশেষ সংবাদ
  • পোস্ট টাইমঃ ২৮ জুন ২০২৩ @ ০৪:৫০ অপরাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ২৮ জুন ২০২৩@০৫:২৬ অপরাহ্ণ
কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানো ও সংরক্ষণের নিয়ম
ছবি- ফাইল ছবি

।।বিডি হেডলাইন্স ডেস্ক।।

সঠিক নিয়মে চামড়া না ছাড়ানো ও দক্ষতার অভাবে অনেক চামড়া ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ত্রুটিযুক্ত চামড়ার দাম কমে যায় এবং দেশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ কারণে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে সঠিকভাবে চামড়া ছাড়ালে চামড়ার মান ভালো থাকে। বিক্রিও হয় ভালো দামে। তাই সঠিক পদ্ধতিতে চামড়া ছাড়ানো ও সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরী। প্রায়ই দেখা যায়, চামড়ার নানা স্থানে কাটা দাগ, ছুরির দাগ ও পচন ধরার চিহ্ন থাকে। তাই নিখুঁতভাবে চামড়া ছাড়ানো ও সংরক্ষণ এবং এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উপর জনসচেতনতা গড়ে তোলা উচিত।

কোরবানির গুরুত্ব:
কোরবানি হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি ইবাদত। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের জন্য শরিয়ত নির্দেশিত উপায়ে কোনো প্রিয় বস্তু আল্লাহ তায়ালার দরবারে পেশ করা। কোরবানি মানে শুধু আত্মত্যাগই নয়, বরং আল্লাহর সঙ্গে বান্দার ভালোবাসার অনন্য এক নিদর্শন।

পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে কোরবানিদাতা মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করেন। এবং হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম ও বিশ্ব নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ বাস্তবায়ন করে থাকেন। সামর্থ্যবানদের সবাই কোরবানি করবেন। কিন্তু কোরবানির পর পশুর চামড়া কী করবেন? কীভাবে এর ব্যবহার করবেন? কোরবানি দাতা ইচ্ছা করলেই চামড়া বিক্রির টাকা নিজের কাজে খরচ করতে পারবেন না। যারা জাকাত, ফিতরা পাওয়ার উপযুক্ত তারাই কোরবানির পশুর চামড়ার অর্থ পাওয়ার হকদার। তবে এ ক্ষেত্রে এতিম, গরিব তালিবুল ইলম তথা ইলমে দ্বীনের গরিব শিক্ষার্থীকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তা দেয়া উচিত। তালিবুল ইলম তথা ইলমে দ্বীনের শিক্ষার্থী যদি এতিম বা গরিব হয়, তবে তাকে জাকাত, ফিতরা ও কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য দানে বেশি সওয়াব রয়েছে।

চামড়ার সরকারি মূল্য নির্ধারণ:
পবিত্র কোরবানির পশু চার চামড়া দিয়ে দেশের সিংহভাগ চামড়া জাত দ্রব্য উৎপাদিত হয়। চামড়া দেশের গরুত্বপূর্ণ ও অর্থনৈতিক সম্পদ। চামড়াখাত থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এবারের ঈদে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ঢাকার বাইরে গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবারে রাজধানীতে প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা, বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে বকরি ও খাসির চামড়ার দাম একই থাকবে।

কিভাবে চামড়া ছড়াবেন:
কোরবানির পশুকে কোরবানির আগের রাত থেকে দানাদার খাবার (খড়, ভুসি, ঘাস) খাওয়ানো বন্ধ করা। পানি, ভাতের মাড়সহ তরল খাবার দেয়া। কোরবানির দিন ভোরে পশুকে ভালোভাবে গোসল করানো, শরীরের ময়লা পরিষ্কার করে দেয়া। কোরবানির দিন সকালে পশুকে পরিষ্কার পানি পান করতে হবে। এতে জবাইয়ের পর চামড়া ছাড়ানো সহজ হয়। কোরবানির স্থান হিসেবে সমতল জায়গা বেছে নেয়া উচিত।

পশুকে শোয়ানোর সময় দেহে যেন আঘাত না পায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কংক্রিটের মেঝে অথবা এবড়ো-খেবড়ো রাস্তায় গরু জবাইয়ের ব্যবস্থা করা ঠিক নয়। জবেহ্ করার অন্তত ২ ঘণ্টা পূর্বে পশুকে পর্যাপ্ত পানি পান করাতে হবে। এতে দেহ থেকে চামড়া ছাড়ানো সহজ হয়।

চামড়া ছাড়ানোতে যদি একেবারেই অনভিজ্ঞ হন তবে ইউটিউব থেকে বিভিন্ন ভিডিও দেখে নিতে পারেন। অনেকগুলো পদ্ধতির ভিডিও দেয়া আছে। দেখে দেখে ধারণা নিতে পারেন। কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানোর ব্যাপারে যে নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে সেগুলো হচ্ছে জবাইয়ের জন্য অত্যন্ত ধারালো ছুরি ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু চামড়া ছাড়ানোর জন্য ব্যবহার্য ছুরি অপেক্ষাকৃত কম ধারালো হতে হবে। কারণ, ধার বেশি হলে চামড়া কেটে যেতে পারে (মাথা বাঁকানো ছুরি চামড়া ছাড়ানোর জন্য বেশি উপযোগী)।

পশুর দেহের স্পন্দন একেবারে থেমে যাওয়ার পর চামড়া ছাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। পশুকে শিরদাঁড়ার ওপর চিত করে শুইয়ে দুই পাশে ঠেস দিতে হবে। এরপর ছুরির মাথা দিয়ে গলার জবাই করার স্থান থেকে গলা, সিনা ও পেটের ওপর দিয়ে মলদ্বার পর্যন্ত সোজাভাবে হালকা করে কাটতে হবে। সামনের দুই পায়ের গোড়ার কাটা থেকে পায়ের ভেতরের অংশ দিয়ে সোজা চামড়া ফাড়া দিয়ে উরি ফলকের ওপর দিয়ে কেটে বুকের লম্বা কাটার সঙ্গে সংযোগ করতে হবে।

পেছনের দুই পায়ের ক্ষেত্রেও একইভাবে চামড়া কাটতে হবে। এরপর পায়ের গোড়া থেকে পায়ের এবং পেটের চামড়ার কিছু অংশ ছিলতে হবে। পরে চার পা এবং নাড়িভুঁড়ি ছাড়াতে হবে। ছাগল ও ভেড়ার চামড়া ছাড়ানোর সময় যদি পশুকে উঁচুতে কোনোকিছুর সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে দেয়া যায়, তাহলে চামড়া ছাড়ানো সহজ ও সুবিধাজনক হবে। ছাগল ও ভেড়ার চামড়া ছাড়ানোর সময় ছুরি ব্যবহার না করে কাঠ বা পিতলের মুণ্ড অথবা হাতের মুঠি দিয়ে ঠেসে ঠেসে টেনে মাংস থেকে চামড়া আলাদা করা যায়।

চামড়া সংরক্ষণের নিয়মাবলি:
জবাইয়ের পর চামড়া আড়াআড়ি কাটার জন্য সূচালো মাথার ছুরি ও চামড়া ছাড়ানোর জন্য অবশ্যই বাঁকানো মাথার ছুরি ব্যবহার করতে হবে। কোরবানির পশু জবাইয়ের পর রক্তমাখা ছুরি কোনোভাবেই পশুর চামড়ায় মোছা যাবে না, এতে চামড়ার ক্ষতি হতে পারে। কাঁচা চামড়ার বড় ধরনের ত্রুটি (লেস-কাটা) অসতর্কতা, অজ্ঞতা ও ভুল ছুরি ব্যবহারের কারণে হয়ে থাকে বিধায় এ ধরনের ভুল ছুরি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।

চামড়া ছাড়ানোর পর লবণ দিয়ে সংরক্ষণের আগে অবশ্যই চামড়ায় লেগে থাকা চর্বি, মাংস, রক্ত, মাটি ও গোবর ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। চামড়া ভালভাবে পরিস্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। চামড়ায় লেগে থাকা অতিরিক্ত গোশ্ত, চর্বি এবং ঝিল্লি ভালভাবে ছুরি দিয়ে উঠিয়ে ফেলবেন, নইলে ওই সব জায়গায় লবণ প্রবেশ করতে পারবে না।

চামড়ার গোশতের পিঠ উপরের দিকে রেখে মুঠি মুঠি লবণ চামড়ায় ছড়িয়ে হাতে দিয়ে ভালভাবে ঘষে লাগিয়ে দেবেন এবং প্রথমবারের লবণ চুষে নিলে দ্বিতীয় বার একই নিয়মে লবণ লাগাবেন। চামড়া সংরক্ষণের জন্য এভাবে লবণ লাগাতে প্রতিটি গরুর চামড়ার জন্য ৫ থেকে ৭ কেজি এবং প্রতিটি ছাগল/ভেড়ার চামড়ার জন্য ১.৫ থেকে ২ কেজি লবণের প্রয়োজন হবে।

চামড়া ছাড়ানোর ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে অবশ্যই লবণ লাগাতে হবে। সংরক্ষণের জায়গা একটু উঁচু ও ঢালু হতে হবে, যাতে চামড়া থেকে পানি ও রক্ত সহজেই গড়িয়ে যেতে পারে। চামড়া সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা আমার, আপনার সকলের দায়িত্ব। এই জাতীয় সম্পদ সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণের মাধ্যমে ও বাজারজাতকরণের ফলেই উপযুক্ত মূল্য পাওয়া যায় এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়ক হয়।

পশুর বর্জ্য সরানো:
পশুর রক্ত ও বর্জ্য থেকে উৎকৃষ্ট জৈব সার পাওয়া যায়। এতে শতকরা প্রায় ১০ ভাগ নাইট্রোজেন থাকে, যা ইউরিয়া সারের মত কাজ করে। এছাড়া এতে রয়েছে ফসফরাস ও পটাসিয়াম। জমির উর্বরতা বাড়ানোর জন্য এ সার খুবই উপযোগী। তাই পশুর এ বর্জ্যকে ফেলনা মনে করে অপচয় করা মোটেই উচিত নয়।

যেখানে সেখানে গরু জবাই না করে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নির্দিষ্ট স্থানে অথবা সম্ভব হলে যে জমিতে সহসাই ফসল উৎপাদন করবেন, সে জমিতে পশু জবাই করুন। পশু জবাইয়ের পর কেবল রক্তের ওপর মাটি চাপা দিন। কিছু দিনের মধ্যেই তা পচে সারে পরিণত হয়ে যাবে। পশুর নাড়ি ভুঁড়ি ও মল ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মনে রাখতে হবে, কোন অবস্থাতেই কোরবানির বর্জ্য ড্রেনে বা খোলা জায়গায় ফেলে রাখা যাবে না। এতে পরিবেশ দুষিত হবে এবং স্বাস্থ্যহানিকর বিভিন্ন রোগের বিস্তার ঘটাতে পারে।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights