।। বিশেষ প্রতিনিধি ।।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ জয় ঠেকিয়ে রেখেছে পশ্চিমাদের দেওয়া আধুনিক অস্ত্র। এই অস্ত্র যদি রাশিয়াকে আরও দূর্বল করে, তাহলে পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। কেননা পুতিন আগেই বলে রেখেছেন, অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে তারা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারে পিছপা হবেন না।
ইউক্রেনকে যুদ্ধক্ষেত্র বানিয়ে পরাশক্তিগুলোর ক্ষমতা মহড়ার বর্ষপূর্তি হয়েছে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর অভিযানের মধ্য দিয়ে যে যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল, তার ফল নির্ধারিত হয়নি আজও। পরিস্থিতি বলছে, এই যুদ্ধের জয়-পরাজয় নির্ধারিত হওয়ার মতো বাস্তবতা তৈরি হয়নি। আবার যুদ্ধ থামার লক্ষণও নেই।
বরং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পরমাণু কর্মসূচি আরও বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। বিপরীতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ন্যাটোভূক্ত দেশগুলোর প্রতি ইঞ্চি ভূখণ্ড দখলে রাখার অঙ্গীকার করেন। সবমিলে উত্তেজনা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছায়।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ জয় ঠেকিয়ে রেখেছে পশ্চিমাদের দেওয়া আধুনিক অস্ত্র। এই অস্ত্র যদি রাশিয়াকে আরও দূর্বল করে, তাহলে পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। কেননা পুতিন আগেই বলে রেখেছেন, অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে তারা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারে পিছপা হবেন না।
ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর পূর্তির কিছু সময় আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি (নিউ স্টার্ট চুক্তি) স্থগিত করে বিশ্ব জুড়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করেন। তিনি পরিষ্কার করে দেন, ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে তিনি তাঁর কৌশল বদলাবেন না। একই সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য তিনি পশ্চিমাদের দায়ী করেন।
পুতিনের ভাষণের কয়েক ঘণ্টা পর রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দেন, পরমাণু চুক্তির প্রতি তাঁরা শ্রদ্ধাশীল। ইতোপূর্বে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার আগে তাঁরা তথ্য বিনিময় অব্যাহত রাখবেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, চুক্তি থেকে সরে যাব না, কিন্তু এটি স্থগিত রাখব; এই কথার মানে হলো রাশিয়া চুক্তির শর্ত মানছে কিনা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে তা পরিদর্শন করা আপাতত সম্ভব হবে না।
রাশিয়া ইতোমধ্যেই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী দুই দেশের পরমাণু অস্ত্রকেন্দ্র পরিদর্শন আর দ্বিপাক্ষিক আলোচনার যে বাধ্যবাধকতা ছিল; সেখান থেকে সরে এসেছে। ফাদারল্যান্ড দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বক্তব্যে পুতিন বলেন, রাশিয়া পরমাণু বাহিনীর পরিধি বাড়ানোর কাজে আরও মনোযোগী হবে।
নতুন প্রকল্পের আওতায় পরমাণুভিত্তিক ভূমি ও সাগর থেকে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র বানানো হবে। একইসঙ্গে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (যা নানান ধরনের পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম) মোতায়েন করা হবে বলেও জানান তিনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিন যদি সর্বোতভাবেই এখন পরমাণু অস্ত্র সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া ও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বন্ধ করে দেয়, তো সেটা মারাত্মক কিছুর ইঙ্গিত হতে পারে। ইউএন ইন্সটিটিউট ফর ডিজআর্মমেন্ট রিসার্চের সিনিয়র রিসার্চার অ্যান্ড্রুই বাকলিটস্কি বলেছেন, চুক্তি স্থগিত মানেই তা প্রত্যাহার নয়।
তবে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সে দিকেই গড়াতে পারে। সেন্টার ফর আর্মস কন্ট্রোল অ্যান্ড নন-প্রোলাইফেরেশন এর সিনিয়র পলিসি ডিরেক্টর জন আর্থ দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, পুতিনের এই অবস্থান ‘পুরোপুরি প্রতীকী’। তিনি মনে করছেন, বাইডেনকে যুদ্ধ বন্ধের চাপ দিতেই পুতিন এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন। ‘যেন রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের ক্ষেত্রে তাদের শর্ত মানতে বাধ্য করতে পারে।’ বলেছেন তিনি।
মার্কিন সাংবাদিক নরম্যান সলোম্যান বলছেন, এক বছর আগে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে, যুদ্ধের মিডিয়া কভারেজ আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) পরিস্থিতিকে এড়িয়ে গেছে। তার মতে,বিশ্ব জুড়ে গণহত্যার অস্ত্র হতে পারে এটি।
সলোম্যান জানাচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্র কলোরাডো, মন্টানা, নেব্রাস্কা, নর্থ ডাকোটা ও ওয়াইমিং জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভূগর্ভস্থ সাইলোতে এমন ৪০০ আইসিবিএম রয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়া তার নিজস্ব প্রায় ৩০০টি আইসিবিএম মোতায়েন রেখেছে। প্রাক্তন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব উইলিয়াম পেরি আইসিবিএমকে “বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক অস্ত্রের অন্যতম” বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে “এগুলি এমনকি দুর্ঘটনাজনিত পারমাণবিক যুদ্ধের সূত্রপাত করতে পারে।” সলোম্যান বলছেন, এখন, বিশ্বের দুই পারমাণবিক পরাশক্তির মধ্যে তীব্র উত্তেজনায় পারমাণবিক সংঘর্ষ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে।