আজ ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সিরাজগঞ্জে উল্লাপাড়া মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুল নিয়ে যত অপকর্ম রাকিবুলের

  • In অনুসন্ধান
  • পোস্ট টাইমঃ ১৬ নভেম্বর ২০২৩ @ ০১:২২ অপরাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ১৬ নভেম্বর ২০২৩@০১:২২ অপরাহ্ণ
সিরাজগঞ্জে উল্লাপাড়া মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুল নিয়ে যত অপকর্ম রাকিবুলের

উজ্জ্বল অধিকারী
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি।।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুলে পিওন পদে ভূয়া নিয়োগ দিয়ে ৮ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাকিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে। চলতি বছরের ৩ জুলাই কোন নিয়োগ বিধি না মেনে, রেজুলেশন ছাড়াই উল্লাপাড়া ঝিকিরা এলাকার রোকন আলী নামে এক ব্যক্তিকে পিওন পদে চাকরি দিয়েছেন তিনি। ২০১৭ সালে নভেম্বর মাসে নৈতিকতা স্খলনের অভিযোগে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদকে বরখাস্ত করে স্কুল পরিচালনা কমিটি। এরপর মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘ ৬ বছর দায়িত্ব পালন করেন সহকারী শিক্ষক রাকিবুল ইসলাম।

এসময়ে রাকিবুল ইসলাম বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে যায়। আব্দুল মজিদ প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে থাকাকালীন এই প্রতিষ্ঠানে দুটি শাখা ছিল। দুটি শাখার বিপরীতে শিক্ষার্থীদের সকালে এবং বিকালে শ্রেণি পাঠদান পরিচালনা করা হতো। কিন্তু রাকিবুল ইসলাম দায়িত্ব পেয়ে নতুন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে আরেকটা শাখা খোলে। মাধ্যমিক শিক্ষা কারিকুলাম অনুযায়ী ২ টি শাখায় প্রতিটি শ্রেণিতে আসন সংখ্যা সর্বোচ্চ ২৪০ জন এর স্থলে ৩টি শাখা দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে ভর্তি করা হয় ৪ থেকে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী।

এমন অনিয়মের কারনে তার (রাকিবুল) সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মান তলানিতে চলে যায়। জেএসসি এবং এসএসসির পরীক্ষার ফলাফলও বিপর্যয়ে পৌঁছে। আব্দুল মজিদ প্রধান শিক্ষক থাকাবস্থায় ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ২ টি শাখা মিলে সর্বোচ্চ ২শ ৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতো। কিন্তু বর্তমানে প্রতিটি শ্রেণিতে এটি বেড়ে দাড়িয়েছে ৪’শ থেকে ৫’শ। অর্থ্যাৎ আসন ক্যাপাসিটির চেয়ে দ্বিগুণ। ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ২৭৩ জন এবং ২০১৭ সালে ২৯৯ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। পরবর্তী রাকিবুল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ২০২১ সালে ৫০১ জন, ২০২২ সালে ৪৬৮ জন এবং ২০২৩ সালে ৪৩২ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা অংশগ্রহণ করে।

শিক্ষার্থীদের মেধার মূল্যায়ন না করে নিজের ইচ্ছামতো স্কুলের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হতো বলে অভিযোগ রাকিবুলের বিরুদ্ধে । বিজ্ঞান স্কুলে ২টি শাখায় মাধ্যমিক কারিকুলাম অনুযায়ী ২৪০ জন ভর্তির করার কথা থাকলেও রাকিবুলের ৬ বছর অনিয়ম ছিলো, নিয়ম। কোন আইনের তোয়াক্কা না করেই প্রতিনিয়ত দূর্নীতি করে গেছেন তিনি। অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে দূর্বল শিক্ষার্থীদেরকেও ভর্তি করা হতো। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির ইতোপূর্বের অর্জিত সুনাম নষ্ট হয়েছে। পাঠদানের সময় শ্রেণি কক্ষে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী থাকায় সঠিক মূল্যান করা সম্ভব হয়নি বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন। এই শিক্ষকদের সাথে কথা হলে তারা আরো জানান, রাকিবুল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণ করার পর অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়িয়েছে। এতে পাঠদানে হিমসিম খেতে হতো শিক্ষকদের । শ্রেণি কক্ষে এক বেঞ্চে বসতে হতো ৬ জনকে।

শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে, ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ জানান, একটি বেঞ্চে ৪ জন ভালোভাবে বসা যায়। সেখানে আমাদেরকে বসতে হচ্ছে ৫ থেকে ৬ জন। এতে লেখাপড়ার মনোযোগ নষ্ট হতো।

বিজ্ঞান স্কুল সূত্রে জানা যায় প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ বরখাস্ত হবার সময় প্রতিষ্ঠানটির নামীয় ব্যাংক হিসাব এবং ট্রাস্টে মোট ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা জমা ছিল। এর মধ্যে উত্তরা ব্যাংক উল্লাপাড়া শাখায় ১ কোটি ৩০ লাখ, ইউসিবি ব্যাংকে ১ কোটি ২০ লাখ, অগ্রনী ব্যাংকে ৭০ লাখ,সিরাজগঞ্জ এবি ব্যাংকে ৮০ লাখ এবং প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টে জমা ছিল ৩০ লাখ টাকা। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাকিবুল ইসলাম ৬ বছরে অতিরিক্ত বেতন আদায়, দ্বিগুণ শিক্ষার্থী নিয়েও প্রতিষ্ঠানটির নামীয় ইউসিবি ব্যাংকের হিসাব নাম্বারে ২০২৩ সালের ব্যাংক স্টেটমেন্টে রয়েছে মাত্র ২ হাজার ১শত টাকা। অন্যান্য ব্যাংকে হিসাবে ও প্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টে নেই কোন জমানো টাকা। একই সঙ্গে শিক্ষকদের বেতন এবং অন্যান্য বকেয়াসহ বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে ঘাটতি রয়েছে ৫০ লাখ টাকা এবং ব্রেঞ্চ ক্রয়, বালু ক্রয়ে বিক্রেতাদের নিকট বকেয়া ১০ লাখ টাকা।

রাকিবুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন প্রতি মাসে বেতন নিয়েছেন ৯২ হাজার টাকা। সেই সাথে প্রতি মাসে সম্মানী ভাতা হিসেবে নিয়েছেন ২৫ হাজার টাকা। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই নিজের ইচ্ছামতো বেতন বাড়িয়েছেন তিনি।

চলতি বছরের অক্টোবরের ৩০ তারিখে আদালতের নির্দেশ মেনে উল্লাপাড়া বিজ্ঞান স্কুলে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ যোগদান করার পর রাকিবুলের এসব অনিয়মগুলো উঠে আসছে। রোকন আলী নামে এক পিওন নিয়োগেরও অনিয়ম উঠে এসেছে এবং কোন প্রকার নিয়োগ বিধি মানা হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ।

টাকার মাধ্যমে পিওন পদে চাকুরী দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন রাকিবুল ইসলাম। তিনি জানান রোকন নামে ছেলেটিকে খন্ডকালিন হিসেবে বিজ্ঞান স্কুলে চাকরি দেওয়া হয়েছিল তার কাছে কোন প্রকার টাকা নেওয়া হয়নি । আর বিজ্ঞান স্কুলে অর্থ আত্মসাৎ এর বিষয়ে জানতে চাইলে কথা বলেনি।

পিওন পদে চাকুরী হারানো রোকন আলী জানান তাকে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাকিবুল ইসলাম তার কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা নিয়েছে কিন্তু পরে তিনি জানতে পারেন তার নিয়োগপত্র সঠিক নয়। এঘটনায় তিনি আদালতে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন।

উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুলের বর্তমান সভাপতি মোঃ উজ্জল হোসেন জানান, সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাকিবুল ইসলাম স্কুল তহবিল থেকে অর্থ আত্মসাৎ এর বিষয়টি অনুসন্ধান করা হচ্ছে। রাকিবুল এর বিষয়ে অভিযোগগুলো প্রমাণ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights