আজ ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

পায়ে হেটে দম্পতির টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ভ্রমণ

পায়ে হেটে দম্পতির টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ভ্রমণ

মো: রনি মিয়াজী
পঞ্চগড় প্রতিনিধি।।

প্রতিটি প্রাণ মূল্যবান, আত্মহত্যা নয় বাঁচতে শিখি-এমন লক্ষ্য নিয়ে পায়ে হেটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ভ্রমণ করলো শারাবান তহুরা শান্তা ও আল ইমরান শাওন নামের এক দম্পতি। ৯২৭ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে শনিবার দুপুরে বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্টে ভ্রমণ শেষ করেন তারা।

দম্পতিরা জানান, গত ২৭ জুন আমরা টেকনাফ থানায় চিঠি দিয়ে চলে যাই টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে। পরের দিন ২৮ জুন থেকেই শুরু করি পায়ে হেটে ভ্রমণ। প্রথম দিন শাহপরীর দ্বীপ থেকে বড় ডিল পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার হাটি। সেখানে থাকার জায়গা না পাওয়ায় মরিসবুনিয়া নামের একটি স্কুলের নৈশ প্রহরীর বাড়িতে রাত যাপন করি। সে রাতে পাহাড়ী হাতি আমাদের থাকা স্থানসহ আশেপাশে জায়গায় আক্রমণ করে। আমরা গভীর রাতে সবাই দৌড়াদৌড়ি করে স্কুলের পাকা বিল্ডিংয়ে আশ্রয় নিই।

পরের দিন ছিল ঈদের দিন। আমরা ঈদের দিন ৩৬ কিলোমিটার হেটে বড়ডিল মরিশবুনিয়া স্কুল থেকে ইনানী বিচ পর্যন্ত আসি। এ সময়টাতে আমরা পুরোটা পথ মেরিন ড্রাইভের অস্বাভাবিক রোধ আর সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আসি। ঈদের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে ১০ দিনে ৪০০ কিলোমিটার একবারে হাঁটি। এরপর অফিসের ব্যস্ততা, মায়ের অসুস্থ্যতা ও পারিবারিক কিছু কারণে কয়েক সপ্তাহর পর আবার সপ্তাহের ছুটির দিতে শুরু করি হাটা। এভাবে আমরা নীলফামারী রেল স্টেশন পেরিয়ে হাটতে হাটতে উত্তরের সীমান্ত তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত পৌছে ভ্রমণ শেষ করি।

জানা যায়, শারাবান তহুরা শান্তা পেশায় একজন ব্যাংকার। রাজধানী ট্রাস্ট ব্যাংক ঢাকার খাজা গরীবে নেওয়াজ শাখার জুনিয়র হিসেবে কাজ করছি। অপরদিকে তার স্বামী আল ইমরান শাওন একজন আর্কিটেক্ট। মন্ডল গ্রæপ অব কোম্পানীতে আর্কিটেক্ট হিসেবে জব করছে। চাকরি ফাঁকে ছুটির সময়গুলো ঘুরে বেড়ান বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গাগুলোতে। তারা আন অফিশিয়ালি বাংলাদেশের ১ম সর্বোচ্চ চূড়া সাকা হাফং, ২য় সর্বোচ্চ জোতলাং, ৪র্থ সর্বোচ্চ জোগী হাফং, তাজিংডন, কেওক্রাডং ও বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলার প্রচুর পরিমানে ঝর্ণা ঘুরেছেন।

পায়ে হেটে ভ্রমণের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, কিশোর কিশোরীদের অনাকাংখিত আত্মহত্যার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে আমাদের এ ইভেন্ট জার্নি ছিল। আমরা পথে পথে বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলেছি। এর মধ্য দিয়েই নিজের দেশকে খুব কাছ থেকে দেখতে পায়ে হেঁটে পথ পাড়ি দিলাম টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। এ জার্নিতে প্রতিবন্ধকতা সব থেকে বড়টা হলো শারীরিক সক্ষমতা। তবে মানসিক শক্তি দিয়ে সেটা অতিক্রম করেছি। আমার খুব কাছের কিছু বন্ধু ও ট্রাভেল গ্রুপ আউটডোর বিডির স্বত্তাধিকারি জুয়েল রানা ভাই খুব সহায়তা করেছে। ওরাই আমার ব্যাক সাপোর্ট। কিছু কিছু জায়গা আমার হাসবেন্ড শাওন বেশি সামনে চলে গেলে আমি পিছনে একা হাঁটতে গেলে মেয়ে হিসেবে বুলিং এর স্বীকার হতে হয়েছে। তবে অনেক উৎসাহ ও পেয়েছি।

শান্তা আরও জানান, বিশেষ করে আমি যখন ব্যাংকে চাকরির আগে টিএমএসএস পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের লেকচারার হিসেবে ছিলাম। তখন আমার এক ছাত্র মিনহাজুল ইসলাম নামের এক ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়তো। মহামারি করোনার সময় লম্বা ছুটিতে সে মানসিক ভাবে ঠিক না থাকতে পেরে আত্মহত্যা করেছে। সে আত্মহত্যার পর থেকেই সচেতনতা তৈরির লক্ষে আমাদের মাথায় এই চিন্তা আসে। সে চিন্তা থেকেই আমরা ভ্রমণে বের হয়ে তা সফল করতে পারলাম। আমাদের এ ভ্রমণে কিশোর, আজিজ, এহসান,নাজমুল, টুসি, আরিফ, আজিজ ও আমার কলিগরাও অনেক সহায়তা করেছেন। আমার মা ও শাশুড়ী এ বিষয়ে যথেষ্ট পজিটিভ ছিলেন। শুরুর দিকে দিকে প্রবাল দাদা আমাদের রুট প্লানে হেল্প করেছেন। তিনি আগে টেকনাফ টু তেতুলিয়া কমপ্লিট করেছিলেন। একই কথা বলেন শান্তার স্বামী আল ইমরান শাওনও।

আউটডোর বিডির ফাউন্ডার জুয়েল রানা বলেন, আমি ঘুরতে ভীষণ পছন্দ করি। আমরা তো অনেকভাবে ঘুরাঘুরি করতে পারি। গাড়িতে, বিমানসহ নানাভাবে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি স্বনির্ভরভাবে ঘুরাঘুরি করতে। সে পরিকল্পনা করেই আমি আউটডোর বিডি নামে প্রতিষ্ঠান খুলেছি। ঘুরাঘুরির জন্য যেসব প্রয়োজন হয় তা আমরা প্রভাইট করি। যখন জানলাম আমার শান্তা ও শাওন পায়ে হেটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ভ্রমণ করবে। আমরা চেষ্টা করেছি তাদের এ ভ্রমণকে সাপোর্ট দিতে। আমি হয়তো পায়ে হেটে তেঁতুলিয়ায় আসিনি, তবে আমি তাদের পাশে সার্বক্ষণিক সাপোর্টে ছিলাম। যাদের এরকম ঘুরাঘুরির স্বপ্ন রয়েছে, তারা জানাতে পারেন, আমরা আউটডোর বিডি থেকে তাদেরকে উৎসাহিত করে সে ভ্রমণকে সাকসেস করতে।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights