মিঠু মুরাদ
পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি।।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলার বাউরা ইউনিয়নে প্রায় ৫০ টি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। প্রতিষেধক না থাকায় উপজেলা জুড়ে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। ফলে আতংকিত হয়ে পড়েছেন খামারি ও কৃষকেরা। গোপনে লাম্পি স্কিন রোগ আক্রান্ত গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ।
পাটগ্রাম উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার গরু রয়েছে। ক্ষুরা রোগের চেয়েও লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) ভয়ংকর। লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাসজনিত রোগ। এটি মশা, মাছি, আঁঠালী মাইটের মাধ্যমে এ রোগটি দ্রত এক প্রাণি থেকে অন্য প্রাণিতে ছড়ায়। এ রোগ নিয়ন্ত্রণে খামার বা গোয়াল ঘর পরিস্কার পরিছন্ন রাখা, মশা নিধন ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা। খামারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কীটপতঙ্গ, মশামাছি, মাইট নিয়ন্ত্রন করা। খামারের আক্রান্ত প্রাণি দ্রæত অন্যত্র সরিয়ে নেয়াসহ মশারীর ভিতরে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। বর্তমানে রোগটি এ উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ার ফলে অনেক খামারি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ রোগে আক্রান্ত হয়ে উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের আমেনা বেগমের একটি গরু , আবু বক্করের একটি, জামাল হোসেনের একটি সহ পাটগ্রাম উপজেলায় ৩৫০-৪০০টি গরু মারা গেছে। উপজেলার একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতিক সরেজমিনে স্থানীয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার একজন কৃষক দুটি গরু নিয়ে এসেছেন চিকিৎসার জন্য। পরে ওই কার্যালয়ের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা: শ্যামল চন্দ্র রায় গরু দুটির চিকিৎসা দেন। এতে দেখা গেছে গরুর পুরো শরীরে থাকা চামড়ায় গুটি হয়ে ফুলে রয়েছে। এ সময় গরুর শরীরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা দেখা দেয় এবং গরু খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দেয়। অনেক সময় গরুর বুকের নিচে পানি জমে ও পা ফুলে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। তাছাড়াও প্রচন্ড জ¦র আসে। পরে তিনি এলএসডি রোগের বিষয়ে নানা পর্রামশ দেন।
বাউরা ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক ইসমাঈল হোসেন বলেন, ‘আমার একটি গরুর গায়ে গুটি- গুটি বের হয়েছে। গরুর শরীরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা দেখা দেয় এবং গরু খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয়। গরুটিকে অনেক চিকিৎসা দিয়েছি ভালো হয়নি। ভালো না হওয়ায় কসাইর কাছে বিক্রি করেছি।’
এ সময় একই ইউনিয়নের বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, লাম্পি রোগে আমার একটি গরু মারা গেছে। এ রোগে প্রথমে গরুর চামরায় গুটি-গুটি উঠে, পা ফুলে যায়, ঘন-ঘন নিঃস্বাস নেয়, মুখদিয়ে লালা পড়ে, কোনো কিছু খেতেই পারছে না। সঠিক চিকিৎসা না থাকায় চরম সমস্যায় পড়েছি।
উপজেলার জোংড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, প্রায় মাস খানেক আগে এই রোগটি তাদের গ্রামে দেখা দিয়েছে। এই রোগে বেশি ভাগ কমবয়সী গরু আক্রান্ত হচ্ছে। আমার তিনটি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে । চিকিৎসা করেও দ্রত সেরে উঠছে না।
পাটগ্রাম উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শ্যামল চন্দ্র রায় বলেন, ‘এ রোগে দুই-চারটি গরু খবর মারা যাওয়ার খবর তিনি শুনেছেন। তবে তাদের কাছে গরুর মালিকের নামের তালিকা নেই। তিনি আরও বলেন, এলাকার মানুষকে সচেতন করতে ইতিমধ্যে প্রচারপত্র বিতরণ করা হচ্ছে। এ রোগের ভ্যাকসিন না থাকায় রোগটির প্রকোপ দ্রত বিস্তার লাভ করছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’