আজ ১৪ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ৬ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের বিদেশি পর্যবেক্ষক কারা?

  • In জাতীয়, শীর্ষ
  • পোস্ট টাইমঃ ৩১ জুলাই ২০২৩ @ ০৬:১৬ অপরাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ৩১ জুলাই ২০২৩@০৬:১৬ অপরাহ্ণ
ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের বিদেশি পর্যবেক্ষক কারা?

।।বিশেষ প্রতিবেদক।।

ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের (ইএমএফ) আমন্ত্রণে সফররত বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। ফোরামের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবেদ আলী এর আগে সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন নামক সংস্থার মহাসচিব ছিলেন, যা ছিল একটি ভুয়া সংগঠন। সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন এর কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পরবর্তী সময়ে সার্ক সচিবালয় থেকে বাংলাদেশকে অনুরোধ করা হয়। ফোরাম যাদেরকে পর্যবেক্ষণে এনেছে, তাদের নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।

সর্বশেষ গত ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ইএমএফ এবং সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন এই দুইটি সংস্থার সমন্বয়ে কানাডা থেকে পর্যবেক্ষণে এসেছিলেন তানিয়া ফস্টার। তিনি ২০১৮ সালের ভোট নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে ফিরে গিয়ে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে নেতিবাচক এবং আগের মন্তব্যের বিপরীত মন্তব্য করেন।

সরকারের একটি ঘনিষ্ট সূত্র দেশের স্বনামধন্য এক জাতীয় দৈনিককে বলেন, ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবেদ আলী এর আগে সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন নামক সংস্থার মহাসচিব ছিলেন। সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান ছিল। প্রতিষ্ঠানটি অবৈধভাবে সার্কের লোগো ব্যবহার করায় সার্ক সচিবালয় থেকে তা প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশে চিঠি দিয়েছিল। ওই সময় এই ভুয়া প্রতিষ্ঠান নিয়ে একাধিক লিফলেটও প্রকাশ হয়।

ইএমএফের আমন্ত্রণ ও সমন্বয়ে গত ২৮ জুলাই থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও চীনের ছয়জন সদস্যের একটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষদের দল আগামী জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণে বর্তমানে বাংলাদেশ সফর করছেন। এই দলটি রোববার সকালে নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের টেনেট ফাইন্যান্স ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের রাজনৈতিক বিশ্লেষক টেরি এল ইসলে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সমর্থন করে না। সংবিধান তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুর্নবহাল করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা একটি ভালো আইডিয়া হলেও নির্বাচন কমিশন তা পুর্নবহাল করতে পারবে না। কারণ হচ্ছে এর কোনো আইনি কাঠামো নাই এবং এই মুহুর্তে এটা সম্ভব না। তিনি আরো বলেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের মতামত নয়, আমার ব্যক্তিগত মত।

ইএমএফের আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের এই দলটির সঙ্গে রোববার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল কিন্তু বৈঠকটি হয়নি। তার আগে রোববার দুপুরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ব্যস্ত থাকায় দুপুরের পরিবর্তে রোববার সন্ধ্যায় বৈঠকের পুর্নসূচি ঠিক করা হয়। রোববার দুপুরে রাজনৈতিক বিশ্লেষক টেরি এল ইসলে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নির্বাচন পূর্ব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে এসেছি। বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আমরা বৈঠক করছি। বিএনপির সঙ্গেও আমরা বৈঠকে বসতে চেয়েছিলাম। নির্বাচন নিয়ে তাদের উদ্বেগ শুনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজী হয়নি। বিষয়টি আমাদের হতাশ করেছে।

ইএমএফের আমন্ত্রণ ও সমন্বয়ে গত ২৮ জুলাই থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও চীনের ছয়জন সদস্যের এই আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষদের দল সম্পর্কে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এমন একটি সংস্থা গতবারও (২০১৮ সালের ভোটে) কী একটা নাম দিয়ে বিদেশ থেকে পর্যবেক্ষক এনেছিল, তার মধ্যে কানাডার একজন ভদ্র মহিলা ছিল। ওই ভদ্র মহিলা ২০১৮ সালের ভোট নিয়ে দেশে যা বলে গেছেন, দেশ ছাড়ার পর তার উল্টো কথা বলেছেন। এখন সেই সংগঠনই যদি এবারও বিদেশি পর্যবেক্ষক আনেন তবে তা সম্পূর্ণ পক্ষপাতদুষ্ট। তাদের উদ্দেশ্যই হচ্ছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নয়, পর্যবেক্ষণের নামে কাউকে সুবিধা করে দেওয়া। শুধু

সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের কার্যক্রম স্বচ্ছ নয়। গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারা যে পর্যবেক্ষক এনেছিল, ওই পর্যবেক্ষকরা কনফারেন্স করে বক্তব্য দেওয়ার দুইদিন পর তারা তাদের দেশে ফিরে গিয়ে ঠিক উল্টো বক্তব্য দিয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে যে এরা নিরপেক্ষ নয়। তারা নিরপেক্ষ হলে এমন হত না।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ এই প্রতিবেদককে বলেন, ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম প্রকৃত কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল নয়। তারা ২০১৮ সালের আগে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিল বলে আমার জানা নাই। আবার ২০১৮ সালের নির্বাচনে পর্যবেক্ষণের নামে তারা কী করেছিল তা সবাই জানে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন তাদেরকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার অনুমতি দিয়ে আমাদেরকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অনুমতি দেয়নি, যা ছিল বেআইনি।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম নামের সংগঠনটি ২০১৮ সালের আগে সংগঠিত হয়েছে। ২০১৮ সালের আগেও তারা কাজ-টাজ করেছে। তারা আগেও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে এবং বিভিন্ন জনের মতামত নিয়েছে। আমি এদের সম্পর্কে এর বেশিকিছু জানি না।

ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম নিয়ে প্রশ্ন ওঠা এবং গত নির্বাচনে কানাডার ভদ্র মহিলার বিপরীত মন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ইএমএফ সদস্য এবং অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি এই বিষয়ে জানি না। আপনিন একটা ব্যক্তি দেখান যাকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন নাই। একটা প্রতিষ্ঠান দেখান, যাকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন নাই। প্রশ্ন কেউ না কেউ করবেই। আমি দেখেছি, ইলেকশন অবজারভ করে তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই কারো না কারো সম্পৃক্ততা রয়েছে, ওমুক পার্টি বা তমুক পার্টি। প্রশ্ন থাকবে, প্রশ্ন উঠবে এটাই গণতান্ত্রিক চর্চা।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights