আজ ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ৩১শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

পাল্টাপাল্টি ‘এক দফা’ দেশকে কি সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবে

  • In জাতীয়, শীর্ষ
  • পোস্ট টাইমঃ ১২ জুলাই ২০২৩ @ ১১:১৩ অপরাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ১২ জুলাই ২০২৩@১১:১৩ অপরাহ্ণ
পাল্টাপাল্টি ‘এক দফা’ দেশকে কি সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবে
ছবি- বিডিহেডলাইন্স

।।বিশেষ প্রতিবেদক।।

পাল্টাপাল্টি এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বুধবারের সমাবেশ থেকে রাজপথের প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপি শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে অনড় একদফা অবস্থান তুলে ধরে। এর প্রতিক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও ‘একদফা’ ঘোষণা করে বলা হয়, শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে। রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই দলের এই অনড় অবস্থান দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে পারে। ফেলতে পারে অনিশ্চয়তায়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলোপের পর এক যুগ ধরে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরোধ চলে আসছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে এলেও ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে বলে, ২০১৮ সালের ওই নির্বাচনের মধ্যদিয়ে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থার দাবির যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে পুরনো সেই দাবি জোরেশোরে তুলেছে বিএনপি; সেই লক্ষ্যে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচিতে রয়েছে দলটি। এদিকে এক যুগ ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ নির্দলীয় সরকারের দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

নির্বাচনের আগে পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকদের ঢাকায় অবস্থানের মধ্যে বুধবার দুই পক্ষই ঢাকায় সমাবেশ ডাকে এবং কোনো ধরনের গোলযোগ ছাড়াই সমাবেশ দুটি শেষ হয়।নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশ থেকে ফখরুল যখন এক দফার ঘোষণা দেন, তখন এক কিলোমিটার দূরে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ পাশের সড়কে সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন, শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদের বাইরে কোনো নির্বাচন হবে না।

“যুগপৎ ধারায় বৃহত্তম গণআন্দোলনের এক দফা-ভোটাধিকার হরণকারী কর্তৃত্ববাদী, অবৈধ সরকারের পদত্যাগ। আর কোন দফা নেই। ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার জন্য যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিচ্ছি,” সমাবেশে এ বক্তব্য দিয়ে মির্জা আলমগীর আগামী ১৮ ও ১৯শে জুলাই ঢাকাসহ সারাদেশে পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

বিএনপির সমমনা দলগুলোও আলাদাভাবে একই ঘোষণা ও কর্মসূচি প্রকাশ করেছে। এদিকে মিজা ফখরুলের ‘এক দফা’ ঘোষণার সময় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইটে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন দলটির সাধারণ ওবায়দুল কাদের। বিএনপির এক দফার কথা উল্লেখ করে এর পাল্টা ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদেরও এক দফা- শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই নির্বাচন হবে এবং শেখ হাসিনাই নেতৃত্ব দিবেন”।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি জানে নির্বাচনে তারা হেরে যাবে। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তায় তারা ভেসে যাবে। “আমাদের এক দফা সংবিধান সম্মত নির্বাচন। এ লক্ষ্যকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা কোনো বাধা দিবো না। কাউকে আক্রমণ করতে যাবো না। বিদেশী বন্ধুদের বলতে চাই – আপনারা চান সুষ্ঠু, অবাধ, ফেয়ার ইলেকশন। আমাদের লক্ষ্যও ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন। কিন্তু এতে যারা বাধা দিবে আমরা তাদের প্রতিহত করবো”। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “যাদের হাতে রক্তর দাগ তাদের সাথে আপোষ নয়, কোনো ডায়ালগ নয়”।

মানুষের ‘ভোটাধিকার’ আদায়ের দাবীতে বিএনপি নয়াপল্টনে তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করেছিলো। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে ‘ সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে’ সমাবেশ করেছে, যাকে ‘শান্তি সমাবেশ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন দলটির নেতারা। তবে দল দুটি এমন এক সময়ে পাল্টাপাল্টি কাছাকাছি দুটি ভেন্যুতে সমাবেশ করছে যখন ঢাকা সফরে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয় সদস্যের নির্বাচনী অনুসন্ধানী মিশন। সূত্র জানিয়েছে, পশ্চিমা কূটনীতিকদের টার্গেট করেই এই সময় কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।

এর আগে গত দশই ডিসেম্বর ঢাকায় নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চেয়েও পারেনি বিএনপি এবং তখন এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে দলটির কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছিলো। ওই ঘটনার জের ধরে তখন দলটির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও আটক করেছিলো কর্তৃপক্ষ। তবে এবার পুলিশ কিছু শর্ত দিলেও নয়াপল্টনেই দলটিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। একই সাথে ঢাকার বারটি জায়গা থেকে বিএনপির সমমনা দল ও জোটগুলো যুগপৎভাবে কর্মসূচি দিয়েছে। যদিও উভয় কর্মসূচির কারণে তীব্র ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। অনেক জায়গায় দেখা গেছে তীব্র যানজট। আবার গণপরিবহন কম থাকায় পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে যেতে হয়েছে অসংখ্য মানুষকে।

মূলত সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর থেকেই বিএনপির কর্মসূচিগুলোতে পুলিশ বা প্রশাসনের দিক থেকে বাধা কম দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এই নীতির আওতায় যে কোন বাংলাদেশি ব্যক্তি যদি সেদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য দায়ী হন বা এরকম চেষ্টা করেছেন বলে প্রতীয়মান হয় – তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাকে ভিসা দেয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্টনি ব্লিংকেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতি অনুযায়ী নতুন এ নীতির আওতায় পড়বেন বর্তমান এবং সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার-সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যবৃন্দ, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বিচারবিভাগ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সদস্যরা।

এ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় ঘটে যায় এবং এরপর থেকেই বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোকে ঘিরে নমনীয় আচরণ করতে দেখা যায় প্রশাসনকে। তবে আজকে দুই দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থান থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনুমান, আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত বিনা প্রতিরোধে বিএনপির দাবি মানবে না। তার নজিরও দেখা গেছে আজ সকালে। ঢাকার প্রবেশমুখ গুলোতে যানবাহনে পুলিশী তল্লাশির অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতারা। যাত্রীবাহী বাস চলাচলও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম থাকায় অসংখ্য মানুষকে পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। দুপুর বারটা নাগাদ ফাঁকা হয়ে যায় শাপলা চত্বর সহ মতিঝিল এলাকা। নেতাকর্মীদের মারধর ও হয়রানির অভিযোগও করা হয়েছে।

সূত্র বলছে, বিএনপি যে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাইছে না, তা নিয়ে পশ্চিমাদের নীরব সমর্থনও রয়েছে। সেই সমর্থনকে পুঁজি করেই তারা মাঠে নেমেছে। রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তাও দেখা দিতে পারে। সেই ২০০৬ সালের মতো সহিংসতার কবলে পড়তে পারে দেশ।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights