।।নিজস্ব প্রতিবেদক।। বাহাদুর শাহ পার্ক পুরান ঢাকার সদরঘাটের কাছাকাছি লক্ষ্মীবাজারে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক পার্ক। পার্কটি বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ইংরেজরা এই স্থানটি কিনে নেয়। তারা এটিকে একটি পার্কের রূপ দেয় এবং এর চারদিকে লোহা দিয়ে ঘিরে চার কোনায় চারটি দর্শনীয় কামান স্থাপন করে।
১৮৫৮ সালে রানি ভিক্টোরিয়ার নামানুসারে এই স্থানের নামকরণ হয় ‘ভিক্টোরিয়া পার্ক’।
আঠারো শতকের শেষের দিকে এখানে ঢাকার আর্মেনীয়দের বিলিয়ার্ড ক্লাব ছিল। যাকে স্থানীয়রা নাম দিয়েছিল আন্টাঘর। বিলিয়ার্ড বলকে স্থানীয়রা আন্টা নামে অভিহিত করত।
সেখান থেকেই এসেছে ‘আন্টাঘর’ কথাটি। ক্লাবঘরের পাশেই ছিল একটি মাঠ বা ময়দান, যা আন্টাঘর ময়দান নামে পরিচিত ছিল।
এ পার্কটি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে ১৮৫৭ সালে। ১৮৫৭ সালের ২২ নভেম্বর ইংরেজ মেরিন সেনারা ঢাকার লালবাগের কেল্লায় অবস্থিত দেশীয় সেনাদের নিরস্ত্র করার লক্ষ্যে আক্রমণ চালায়।
কিন্তু সিপাহিরা বাধা দিলে যুদ্ধ বেধে যায়। যুদ্ধে আহত এবং পালিয়ে যাওয়া সেনাদের ধরে এনে এক সংক্ষিপ্ত বিচারের মাধ্যমে তাদের দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারের পর ১১ জন সিপাইকে আন্টাঘর ময়দানে এনে জনসম্মুখে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হয়। স্থানীয় লোকদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতে লাশগুলো বহুদিন যাবৎ এখানকার গাছে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
১৯৫৭ সালে (মতান্তরে ১৯৬১ সালে) সিপাহি বিদ্রোহের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট’ (ডিআইটি)- এর উদ্যোগে এই পার্কে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। পার্কে ভেতরে এই চারকোনা স্মৃতিস্তম্ভটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে।
বর্তমানে পার্কটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। পার্কটিকে ঘিরে সাতটি রাস্তা একত্র হয়েছে। পার্কের উত্তর পাশে রয়েছে ‘সেন্ট থমাস চার্চ’ ও ঢাকায় প্রথম পানি সরবরাহ করার জন্য তৈরি ট্যাংক। উত্তর-পূর্ব কোণে আছে ঢাকার অন্যতম কলেজ ‘কবি নজরুল সরকারি কলেজ’ এবং ‘ইসলামিয়া হাই স্কুল’, পূর্ব পাশে রয়েছে ঢাকার অন্যতম প্রাচীন বিদ্যালয় ‘সরকারি মুসলিম স্কুল’, দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে রয়েছে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’। এ ছাড়া পার্কের ঠিক উত্তর-পশ্চিম পাশেই রয়েছে ঢাকার জজ কোর্ট।