আজ ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

ঢাকা দখলে রাখবে আওয়ামী লীগ, হাসিনার অধীনে নির্বাচন ‘রক্ত দিয়ে’ প্রতিহতের ঘোষণা বিএনপির

  • In শীর্ষ
  • পোস্ট টাইমঃ ১২ জুলাই ২০২৩ @ ০৫:৫৭ অপরাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ১২ জুলাই ২০২৩@০৫:৫৭ অপরাহ্ণ
ঢাকা দখলে রাখবে আওয়ামী লীগ, হাসিনার অধীনে নির্বাচন ‘রক্ত দিয়ে’ প্রতিহতের ঘোষণা বিএনপির

।।বিশেষ প্রতিনিধি।।

ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ প্লাজায় আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে আজ থেকে ঢাকা দখলে রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। জানুয়ারিতে সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেখিয়ে দেওয়া হবে, বলা হয়েছে ওই সমাবেশে। এদিকে বিএনপির সামবেশ থেকে বলা হয়েছে, দেশের মানুষ আর শেখ হাসিনার সরকারকে চায় না। রক্ত দিয়ে হলেও তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রতিহত করবে।

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ পাশের সড়কে আজ বুধবার দুপুরে আয়োজিত আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ‘আজ থেকে ঢাকা দখলে রাখা হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করেই ঘরে ফিরে যাবো।’ নির্বাচন নিয়ে নানা ‘ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এসব ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগকে রুখতে পারবে না।’

চলতি বছরের শেষে বা জানুয়ারিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এই নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয়, সে ব্যবস্থা নিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও আহ্বান জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশে কেউ সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে তাদের ভিসা দেওয়া হবে না জানিয়ে সম্প্রতি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে অভিযোগ করে আসা বিএনপি আজকের সমাবেশ থেকেই সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করছে। এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে বক্তব্যে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘জানুয়ারি মাসে দেখিয়ে দেব, সুষ্ঠু নির্বাচন কাকে বলে, কত প্রকার ও কী কী।’

শেখ হাসিনাকে দেশের একমাত্র কান্ডারি দাবি করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে যেভাবে বলেছিলেন, “ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো।” ঠিক সেভাবেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা হবে।’

এদিকে আওয়ামী লীগের সমাবেশে মঞ্চের সামনে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টাকে কেন্দ্র করে বুধবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সমর্থকদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদের সমর্থকদের মারামারি শুরু হয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের সমর্থকদের চেয়ার ছুড়তে দেখা যায়। সে সময় মঞ্চ থেকে সবাইকে বসে পড়ার অনুরোধ জানাতে থাকেন মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন। মাইক হাতে নিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের মহানগরের নেতাকর্মীরা যারা সামনে আছেন, সবাই চেয়ারে বসে পড়ুন। আপনারা বিশৃঙ্খলা করবেন না।” মঞ্চে থেকে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি বলেন, “এই তোমরা বসে পড়, কোনো বিশৃঙ্খলা করা যাবে না।”

মঞ্চে উপস্থিত মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “পৌনে ২টার দিকে মহানগর দক্ষিণের মন্নাফি ভাইয়ের সমর্থকরা মঞ্চের সামনে চেয়ারে বসে যান, এ সময় রূপগঞ্জ থেকে গোলাম দস্তগীর গাজীর পক্ষে একটি মিছিল মঞ্চের সামনে চলে আসে, তখন সেখানে বসাকে কেন্দ্র করে চেয়ার ছোড়াছুড়ি শুরু হয়।”

আওয়ামী লীগের এই সমাবেশস্থল থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে নয়া পল্টনে চলছে বিএনপির সমাবেশ। ওই কর্মসূচি থেকে সরকারপতনের আন্দোলনের ‘এক দফা’ ঘোষণা আসবে বলে আগেই জানিয়ে রেখেছেন দলটির নেতারা। এমন এক সময়ে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের এই পাল্টাপাল্টি সমাবেশ চলছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা ঢাকায়। একইরকম ২৩টি শর্তে দুই দলকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ; যেখানে ব্যানারের আড়ালে লাঠি-রড বহন না করা, রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য না দেওয়ার মত শর্ত দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির সমাবেশে সকাল থেকেই দলের নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন। বেলা ১২টার মধ্যেই বিএনপির নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণে ভরে যায় সমাবেশস্থল। নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে তৈরি করা মঞ্চে গান পরিবেশন করা হয়। ফাঁকে ফাঁকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতারা বক্তব্য দিতে থাকেন।

রক্ত দিয়ে হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে না দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলেই কেবল নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আজ বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা একথা বলেছেন।

সমাবেশে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম সমাবেশে বলেন, ‘রক্ত দিয়ে হলেও আমরা এবারের নির্বাচন প্রতিহত করব।’ দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে চায় না বলে দাবি করেন বিএনপির এই নেতা। সে কারণে আওয়ামী লীগের আজকের সমাবেশে মানুষ নেই বলে দাবি করেন তিনি। তবে বিএনপির এই সমাবেশের পাল্টায় বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ পাশের সড়কে আওয়ামী লীগ যে সমাবেশ করছে, সেখানে বহু মানুষের উপস্থিতি রয়েছে।

বিএনপি নেতা আবদুস সালাম বলেন, ‘গত ১৪-১৫ বছরে শেখ হাসিনা কোনো কথা শুনেননি। তাই উনার এখন কোনো কথা বলারও দরকার নাই।’ তিনি বলেন, সরকারের কিছু কর্মকর্তা এখনো আওয়ামী লীগের ভাষায় কথা বলেন। তিনি তাঁদেরকে সতর্ক করেছেন।

এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদিনও। সমাবেশে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলেই নির্বাচন হবে। প্রধানমন্ত্রী আপনাকে যেতেই হবে।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ দাবি করেছেন, তাদের আজকের সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি প্রমাণ করেছে যে আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। বিএনপির চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচি শুরুর পর থেকে ১৭ নেতা-কর্মী বলে দাবি করেন তিনি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বরকতউল্লাহ বলেন, ‘এ জন্য আপনাদের বিচার হবে।’

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights