মোসলেম উদ্দিন রনি
স্টাফ রিপোর্টার।।
মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ হলো ঈদ-উল-আজহা। সবচেয়ে বড় আয়োজনে ও ভাবগম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ঈদ-উল-আজহা পালন করা হয়। এবছরের ঈদ-উল-আজহা আর মাত্র কয়েকদিন বাকি।
সোমবার (২৬জুন) লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোরবানিকে সামনে রেখে মানুষ কিনতে শুরু করেছেন ছুরি-চাকু-বটি, চাপাতি। আবার অনেকে একটু আগেভাগে দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম শান দিয়ে দিচ্ছেন।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ও বাজার ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার তুষভান্ডার, চৌধুরীহাট, ভুল্লারহাট, দহগ্রাম, কালভোরভ, বুড়িহাট, চাপারহাট, চন্দ্রপুর, কাকিনা, কাজিরহাট, সোনারহাট, শিয়ালখাওয়া, সুঘানদিঘি, শান্তিগঞ্জ ইত্যাদি বাজারসহ বিভিন্ন হাটবাজারে কিছু কিছু কামারের দোকান আছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পেশাদার এসব কামাররা লোহা কিনে সেগুলোকে আগুনে পুড়ে দা, বটি, চাকু, চাপাতিসহ লোহার বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করছেন। তৈরিকৃত জিনিসপত্র দিয়ে নিজ নিজ দোকান সাজিয়ে রেখেছেন। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক ক্রেতা তাদের চাহিদা মোতাবেক কামারের দোকান থেকে জিনিস কিনছেন।
এ বিষয়ে কাজিরহাট বাজারের অন্যতম (কামার) আব্দুল হামিদ (৬৯) বলেন, আমি ৫০ বছর থেকে এ পেশায় আছি। আমার জীবনের পুরোটা সময় পার করেছি এসব কাজ করে। এক সময় আমাদের বেশ কদর ছিল, বর্তমানে তা আর নেই। এখন হাতে তৈরী জিনিসের কদর কমে গেছে। তাই সারাবছর তেমন কোন কাজ থাকেনা। তবে ধান কাটার মৌসুম ও কোরবানি উপলক্ষে আমাদের কাজের চাহিদা বেড়ে যায়। এসময় আমার দৈনিক এক হাজার টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় হলেও, ব্যয় বাদে আমার হাতে থাকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।
উপজেলার তুষভান্ডার, চৌধুরীহাট, ভুল্লারহাট, দহগ্রাম, কালভোরভ, বুড়িহাট, চাপারহাট, চন্দ্রপুর, কাকিনা, কাজিরহাট, সোনারহাট, শিয়ালখাওয়া, সুঘানদিঘি, শান্তিগঞ্জ ইত্যাদি বাজারসহ বিভিন্ন হাটবাজারে কিছু কিছু কামারের দোকান আছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পেশাদার এসব কামাররা লোহা কিনে সেগুলোকে আগুনে পুড়ে দা, বটি, চাকু, চাপাতিসহ লোহার বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করছেন। তৈরিকৃত জিনিসপত্র দিয়ে নিজ নিজ দোকান সাজিয়ে রেখেছেন। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক ক্রেতা তাদের চাহিদা মোতাবেক কামারের দোকান থেকে জিনিস কিনছেন।
উপজেলার চাপারহাট বাজারের (কামার) জবা কর্মকার (৪০) বলেন, কয়েক বছর পূর্বেও চাপারহাট বাজারে অর্ধশত কামারের দোকান ছিল। কিন্তু মেশিনের তৈরি লোহার যন্ত্রপাতির দাপটে তা কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে চাপারহাট বাজারে ৮-১০ টি কামারের দোকান রয়েছে। এছাড়াও সোনারহাট বাজারের (কামার) কমল কৃষ্ণ(৩৫) বলেন, আমি অন্য কোন কাজ তেমন পারিনা, তাই বাধ্য হয়েই বাপ-দাদার এই ঐতিহ্যবাহী কর্মকে এখনো ধরে রেখেছি। এ আয় দিয়েই সংসার ও ছেলে মেয়েদের পড়ালেখার খরচ বহন করি।
আগত ঈদ-উল-আজহার আনন্দ যেন সবার ঘরের দরজায় কড়া নাড়ছে। আর এই ঈদকে সামনে রেখে কোরবানীর পশু জবাইয়ের অন্যতম উপকরণ চাকু, দা, ছুরি, বটি, চাপাতিসহ লোহার বিভিন্ন সামগ্রীর চাহিদা বেড়েছে। এসব তৈরীতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন পেশাদার কামার সম্প্রদায়। তারা যেন দম ফেলার সুযোগ পাচ্ছেন না।
জানা গেছে, ধান কাটার মৌসুমে কাঁচি এবং কোরবানী ঈদে চাকু, ছুরি, চাপাতি, বটির বেশি দরকার পড়ে। তখন এসব তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সব এলাকার কামার সম্প্রদায়। কামার পাড়ার দিন-রাত টুং টাং শব্দে মুখরিত থাকে আশপাশের এলাকা। এবছরও এর ব্যতিক্রম হচ্ছেনা।
কামাররা এসব নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মৌসুমি চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারীও বিক্রি করেন বলে জানা গেছে। অনেক ক্রেতা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার লোহার দাম অনেক বেশি হওয়ায় লোহার তৈরি জিনিসের দামও বেড়েছে। দা ২৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, ছুরি ছোট ১৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা, বটি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, চাপাতি ১,০০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা করে বেচা-কেনা হচ্ছে। কামররা বলছেন, লোহার দাম ও শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় যন্ত্রপাতির দাম একটু বেড়েছে।
অনেকে জানান, মেশিনে তৈরি আধুনিক যন্ত্রের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও ঈদুল আযহার মৌসুমে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আলোর মুখ দেখে। তবে কামার শিল্পীরা আশংকা প্রকাশ করে বলেন, মেশিনের সাহায্যে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হওয়ার ফলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তবা এই পেশা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তখনকার প্রজন্ম কামার কে? তাদের কাজ কি? তারা কি ধরনের জিনিস বানায় বা বানাত? এবিষয়ে চিনতে-জানতে পারবে না। অন্তত বাংলার ঐতিহ্য হিসেবে এই কামার শিল্পটাকে টিকিয়ে রাখতে সকলকে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন সুশীলজন।