আজ ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায় না কেন

  • In শীর্ষ
  • পোস্ট টাইমঃ ২৪ জুন ২০২৩ @ ০৯:০৩ অপরাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ২৪ জুন ২০২৩@০৯:০৩ অপরাহ্ণ
প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায় না কেন
ছবি- বিডিহেডলাইন্স

।।কূটনৈতিক প্রতিবেদক।।

উপসাগরীয় অঞ্চলের (মধ্যপ্রাচ্য) ছয়টি দেশে কাজ করেন বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক শ্রমিক। এই ছয় দেশে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে বছরে ১০ হাজার প্রবাসী মারা যায়। সেখানে প্রতি দুইজনের মধ্যে একজনের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায় না। এমন মৃত্যুকে প্রাকৃতিক কারণ বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হিসেবে সনদ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে দূতাবাসের এগিয়ে আসা উচিত। অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠার রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) কর্তৃক ‘প্রাণঘাতী তাপ: উপসাগরীয় অঞ্চলে অভিবাসী কর্মীদের ওপর চরম তাপমাত্রা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনটি শনিবার রামরু এবং অভিবাসন ও উন্নয়নবিষয়ক বাংলাদেশ সংসদীয় ককাস যৌথভাবে প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকদের একটি বড় অংশ অবকাঠামো নির্মাণ খাতে কাজ করে। এই শ্রমিকদের দিনের বেলায় প্রচণ্ড তাপের মধ্যে তাঁদের কাজ করতে হয়। ফলে তাপজনিত নানা রোগে কিডনির পাশাপাশি, মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে শরীরের সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব দেশে তাপ আরও বাড়ছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীদের মৃত্যুঝুঁকি বাড়াচ্ছে অতিরিক্ত তাপ। চরম তাপ ও সূর্যালোকে দীর্ঘ সময় কাজ দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে ঠেলে দেয়, যার জন্য আজীবন চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এতে প্রবাসী কর্মীরা অকালমৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায় এবং কাজ করার ক্ষমতা হারায়। দিন ও রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি শরীরে ক্রমবর্ধমান চাপ সৃষ্টি করে এবং শ্বাসতন্ত্র ও হৃদ্‌রোগ, বহুমূত্র রোগ, কিডনি রোগের প্রভাবকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। কুয়েতের একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গ্রীষ্মের তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির জন্য ঝুঁকি গড়ে ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। সাধারণত উপসাগরীয় অঞ্চল দীর্ঘ সময় ধরে উত্তপ্ত থাকে। প্রতি বছরে ১০০ থেকে ১৫০ দিনের জন্য সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায়। বৈশ্বিক তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি বৃদ্ধি পেলে কুয়েত, বাহরাইন ও সৌদি আরবের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১৮০ দিনের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাবে। মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী কর্মীদের আবাসন, পুষ্টিকর খাবার, স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে রামরুর পক্ষ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, লাখ লাখ প্রবাসী কর্মী মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে, তাই তাদের সুরক্ষায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রবাসী শ্রমিকদের মৃত্যুর তদন্ত প্রক্রিয়া উন্নত করতে হবে। মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা। তাপ থেকে সুরক্ষার জন্য আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাতে হবে।

সংসদীয় ককাসের সদস্য ও সংসদ সদস্য খোদেজা নাসরিন আক্তার প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলেন, অধিকাংশ কর্মী দালালের মাধ্যমে বিদেশে যান। বিদেশে গিয়ে তারা কোনো সহযোগিতা পান না। মধ্যপ্রাচ্যের অসহনীয় গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই প্রবাসীরা জীবন যাপন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে তাঁদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। দূতাবাস প্রবাসী কর্মীদের এই ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে।

রামরুর নির্বাহী পরিচালক সি আর আবরার বলেন, এই মুহুর্তে বিশ্বব্যাপি একটি বড় বিষয় হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাবে অভিবাসী শ্রমিকেরা বড়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রবাসী কর্মীদের চিকিৎসাসুবিধা পাওয়ার কোনো অধিকারই নিশ্চিত হয়নি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে চিকিৎসক হিসেবে মো. মনিরুল ইসলাম ৩৩ বছর কাজ করেন। প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থেকে বলেন, সেখানে বেশিরভাগ প্রবাসবী শ্রমিক হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়েই মারা যান। তবে এটা মৃত্যুর সঠিক কারণ না। এসব মৃত্যুর পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে কিন্তু সেগুলো উল্লেখ করা হয় না। অথচ সৌদি আরবে মৃত্যুসনদের জন্য হাসপাতালের ফরমে সব ধরনের তথ্য দেওয়া থাকে, সব কারণ বলা থাকে। এসব কারণ জানার অধিকার সবার আছে। তাই দূতাবাসের উচিত এটা পরিষ্কার করে জানানো।

বাংলাদেশ অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ফরিদা ইয়াসমিন প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলেন, নারী কর্মীরা মানসিক চাপ নিয়েই মধ্যপ্রাচ্যে যান। তাঁদের কর্মস্থলে থাকার জায়গা ভালো নয়, তারা পুষ্টিকর খাবার পান না। প্রবাসে মৃত্যুর যথাযথ কারণ জানা যায় না এবং দূতাবাস সহায়তা করে না।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights