আজ ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ২০শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

কাহালুতে মাটি খুঁড়ে অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধারঃ আটক-৩

কাহালুতে মাটি খুঁড়ে অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধারঃ আটক-৩

।।কাহালু (বগুড়া) প্রতিনিধি।।

বগুড়ার কাহালু উপজেলা মালঞ্চা ইউনিয়নে শিবা কলমা গ্রামের নিখোঁজ বিধান চন্দ্র সরকার (২০) এর অর্ধ-গলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের উপস্থিতিতে ও তাদের দেখানো স্হান থেকে শুক্রবার দুপুরে উপজেলার শিবা কলমা গ্রামের পূর্ব মাঠে জমি পানি সেচের ড্রেনের নিচে পুঁতে রাখা লাশ মাটির খুঁড়ে উদ্ধার করেন পুলিশ।

গত ১১ এপ্রিল, ২৩ ইং তারিখে রাতে বিধান চন্দ্র সরকার শিবা কলমা গ্রামের মন্দির থেকে বাড়ী ফেরার পথে নিখোঁজ হয়। পরেরদিন বিধান চন্দ্র সরকার এর পিতা শ্রী অনিল চন্দ্র সরকার কাহালু থানায় একটি জিডি দায়ের করেন। যাহার নং-৬১১। জিডি দায়েরের পর থেকে থানা পুলিশ নিখোঁজ বিধান চন্দ্রকে খুঁজে বের করার জন্য তাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখেন।

পরবর্তীতে খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে ভিকটিম নিখোঁজ হওয়ার দেড় মাস পর ভিকটিম এর পিতা অনিল চন্দ্র সরকারকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ফোনে জানান তার ছেলে ভিকটিম বিধান তাদের হেফাজতে আছে। তার ছেলেকে ফেরত পেতে চাইলে ৬ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করেন তারা।

বিধানের বাবা তাৎক্ষণিক ভাবে বিষয়টি বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীকে (বিপিএম, পিপিএম) জানান- তার সার্বিক দিক-নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) স্নিগ্ধ আখতার (পিপিএম) এর তত্ত্বাবধায়নে ডিবি বগুড়ার ইনচার্জ মোঃ সাইহান ওলিউল্লাহ এর নেতৃত্বে নিখুঁত গেয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে টিম ডিবি বগুড়ার একটি চৌকস টিম ও কাহালু থানা পুলিশ যৌথ অভিযান শুরু করে।

অবশেষে, ২৩ জুন ভোর রাতে কাহালু থানা ও বগুড়া সদর থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত মূল পরিকল্পনাকারী সহ ৩ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার কৃত আসামীরা হলেন কাহালু উপজেলার শিবা কলমা গ্রামের শ্রী বিদু চন্দ্র প্রামানিকের পুত্র শ্রী বিপুল চন্দ্র প্রামানিক (৩৫), শ্রী জিতেন চন্দ্র বর্মনের পুত্র শ্রী দিনেশ চন্দ্র (৪১) ও একই গ্রামের শ্রী যুক্তবাবু চন্দ্রের পুত্র শ্রী উৎপল চন্দ্র (২৪)। এ সময় আসামীদের কাছ থেকে মুক্তিপন দাবি করার ১টি বাটন মোবাইল ফোন সিমকার্ড সহ জব্দ করা হয়।

লাশ উদ্ধারের পর শিবা কলমা চারমাথায় সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিং কালে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) স্নিগ্ধ আখতার পিপিএম জানান, আসামীরা ভিকটিম বিধান এর পূর্ব পরিচিত। ভিকটিমের পিতার কাছ থেকে অর্থ আদায় করার জন্য তাকে আটক করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ১১এপ্রিল/২৩ ইং তারিখে আসামীরা ভিকটিমকে কৌশলে শিবা-কলমা গ্রামের পূর্বে কাহালু থানার সীমান্তবর্তী ভাদাখাল নামক মানবশূন্য এলাকায় সন্ধ্যার পরে নিয়ে যায়। তারা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী একত্রে ভিকটিম সহ মদ্যপান করে। ভিকটিম নেশাগ্রস্থ হলে পূর্ব পরিকল্পনা মতে গ্রেফতারকৃত আসামী বিপুল ও উৎপল ভিকটিমের সাথে কথা বলতে থাকে এবং গ্রেফতারকৃত আসামী দিনেশ পেছন থেকে ভিকটিমের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। তাদের পরিকল্পনা ছিল ভিকটিমকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে অজ্ঞান করে ফেলা। কিন্তু আঘাত গুরুত্বর হওয়ার কারণে ভিকটিমকে তারা তাৎক্ষণিক হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। ভিকটিম আঘাতের ফলে পাশের নালায় পড়ে গেলে আসামীগণ তাকে পানিতে মাথা চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর তারা লাশ গোপন করার উদ্দেশ্যে পাশেই ভিকটিমকে মাটি খুড়ে পুতে রাখে। তাড়াহুড়ার কারণে আসামীরা কাজটি ঠিকমত করতে পারে নাই। পরেদিন ভোরবেলা আসামী বিপুল কি অবস্থা জানান জন্য লাশ পুতে রাখা স্থানে গেলে দেখতে পায় যে শিয়াল মাটি খুড়ে লাশের একটি হাত বের করে ফেলেছে। তাৎক্ষণিক আসামী বিপুল মাটি চাপা দেয়। বিপুল ৪/৫ দিন যাবত বিষয়টি নজরদারি করে এবং আসামী দিনেশ ও উৎপলের সাথে আলোচনা করে পরিকল্পনা মতে তারা ৪/৫ দিন পর লাশটি ওই স্থান হতে সরিয়ে প্রায় ৫০ গজ দূরে জমি সেচের ড্রেনের নিচে গভীর করে পুঁতে ফেলে। ঘটনার দেড় মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও কেউ কোন কিছু না বুঝতে পারার কারণে তারা মুক্তিপন আদায়ের লক্ষ্যে ভিকটিম এর পিতা অনিল চন্দ্রকে মোবাইল করে মুক্তিপন দাবী করতে শুরু করে। মুক্তিপন সংক্রান্ত ভিকটিমের পরিবারের দেওয়া তথ্যের ভিক্তিতে ডিবি পুলিশ ও কাহালু থানা পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামীদের শনাক্ত পূর্বক গ্রেফতার করেন।

লাশ উদ্ধার ও প্রেস ব্রিফিং কালে উপস্থিত ছিলেন আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া সার্কেল নাজরান রউফ, ডিবি বগুড়ান ইনচার্জ মোঃ সাইহান ওলিউল্লাহ, কাহালু থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাহমুদ হাসান, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এ বি এম ফিরোজ ওয়াহিদ, মালঞ্চা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নেছার উদ্দিন, ডিবির এস আই আশিকুর রহমান (আশিক)সহ থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের সদস্যবৃন্দ। উল্লেখ যে, মাহমুদ হাসান কাহালু থানায় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) থাকাকালীন সময়ে চাঞ্চল্যকর মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করে আসামী ধরতে সক্ষম হয়।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights