আজ ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ২০শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

সিপিডির সংলাপ: বাজেট বাস্তবায়নে যে ১৩ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে সরকারকে

  • In জাতীয়, শীর্ষ
  • পোস্ট টাইমঃ ১৮ জুন ২০২৩ @ ০৮:২৭ অপরাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ১৮ জুন ২০২৩@০৮:৩২ অপরাহ্ণ
সিপিডির সংলাপ: বাজেট বাস্তবায়নে যে ১৩ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে সরকারকে

।।নিজস্ব প্রতিবেদক।।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) বলছে, প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট চলমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও সংকট সমাধানে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে । এটি বাস্তবায়ন করতে সরকারকে ১৩ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বলে মনে করছে তারা। চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে- সামষ্টিক অর্থনীতির লক্ষ্য অর্জন, রাজস্ব আদায়ের কঠিন লক্ষ্যপূরণ, ব্যাংকিংখাত থেকে অতি ঋণ করা, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট, মুদ্রা বিনিময় হার, সরকারি ব্যয় কম হওয়া, রফতানি আয়ের কম প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ কমে যাওয়া, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কমে যাওয়া, খেলাপি ঋণ, কম রেমিট্যান্স প্রবাহ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সংকট এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি। রোববার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘বাজেট সংলাপ-২০২৩’ এ এসব কথা তুলে ধরে সিপিডি। সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন- পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘সরকার যে বাজেট প্রস্তাবনা দিয়েছে তাতে লক্ষ্যমাত্রা গুলো উচ্চাভিলাষী। এই লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জন করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। আগামী অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধিও যে লক্ষ্য ৭.৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে রাখা সম্ভব হবে না। এছাড়া রফতানি প্রবৃদ্ধি, রাজস্ব আদায় এবং বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব লক্ষ্য বাস্তব সম্মত হয়নি।

বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংকিং খাত থেকে অধিক ঋণ গ্রহণের লক্ষ্য বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তিতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। সেই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ সংকট কাটানোর কোনো উদ্যোগের কথা বলা নেই বাজেটে। উন্নয়ন ক্ষেত্রে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের অবস্থা বেশি ভালো নয়। বাজেটে বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়নি বলেও জানান ফাহমিদা খাতুন।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বর্তমান সংকটময় সময়ে চ্যালেঞ্জগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করা না গেলে আগামীতে অর্থনীতিতে সমস্যার সৃষ্টি হবে। বাস্তবতা বিবেচনা করেই সব কিছু চিন্তা করা উচিত। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির ব্যাপক চাপ রয়েছে। সেদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া দরকার। সরকার ব্যাংক থেকে ধার করছে, এতে ব্যক্তি ঋণ কমে যাবে। বিনিয়োগ রক্ষণশীল রেখে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির চাপ সহ্য করা কঠিন হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাজেট এখন প্রস্তাবিত। এটা খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। বাজেট সরকার তৈরি করছে। রবীন্দ্রনাথের একটা কথা আছে, অবহেলার চেয়ে আঘাত উত্তম। আমাদের বাজেট যে অবহেলিত নয়, সেটা বড় বিষয়। আরও আঘাত আসবে, কিন্তু অবহেলা চাই না।

তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফীতি বাজেটের সঙ্গে সম্পর্ক নয়। এটা চলমান রয়েছে। সত্যি কথা হলো, আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। বিশেষ করে ৩০ শতাংশ দ্ররিদ্র মানুষের জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। সামাজিক সুরক্ষা দিতে বিভিন্ন খাতে ভাতা ও আওতা বাড়িয়েছি। তাদের সুবিধার জন্য কম দামে পণ্য সরবরাহ করছে সরকার। বিদ্যুতের সংকট সাময়িক। মাঝে একটি সমস্যা ছিল, আবার ঠিক হয়ে যাচ্ছে। যেকোনো বিষয়ে এটা হতে পারে। হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে বিদ্যুৎ পৌঁছি দিয়েছি এটা কি ক্রেডিট নয়।

আয়কর রিটার্নে ২ হাজার টাকা করের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ট্যাক্স রিটার্নে ২ হাজার টাকা সবার জন্য নয়। সরকারি ৪০ ধরনের সেবা যারা নিতে যাবেন, তাদের জন্য ন্যূনতম ২ হাজার টাকা। সাধারণ মানুষের জন্য নয়। তারপরও যদি এটা নিয়ে সমস্যা তৈরি করে, নাও হতে পারে। এক সময় ভ্যাট নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল, এটা এখন বাস্তবায়িত।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যপূরণ সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। দেশের আর্থিক খাতে আস্থার সংকট রয়েছে। এটি ব্যাংকিং এবং শেয়ারবাজার উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে। সরকারে অভ্যন্তরীণ ঋণ গত ৫০ বছরের যেভাবে বাড়েনি গত এক বছরে তার চেয়ে বেশি বেড়েছে। আগামী অর্থবছরে টাকা ছাপিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ঋণ যোগান দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু সেটি ঠিক হবে না। তবে রিজার্ভ সংকট কাটাতে পাইপলাইনে জমে থাকা ঋণের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার খরচ বাড়ানো যেতে পারে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘বিদ্যুতের অবস্থা খুবই খারাপ। ঢাকা শহরে কিছুটা অবস্থা ভালো হলেও গ্রামের অবস্থা খুবই খারাপ। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের কারণে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বাজেটে এ সমস্যা সমাধানে খুব বেশি জোর দেওয়া হয়নি। বড় বাজেট দিয়ে বেপরোয়া কর আরোপ করা হচ্ছে। এতে সরকার খুশি হলেও আমরা আতংকিত।

নতুন আয়কর আইনে এনজিওকে কোম্পানি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোম্পানি করের আওতায় আনার সমালোচনা করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দালাল শ্রেণি তৈরি করছে। তিনি বলেন, খাতা কিনতে হয় শিক্ষার্থীদের। সেখানে কলমের ওপর আমরা ট্যাক্স বসিয়ে দিয়েছি। সোশ্যাল সেফটি নেট প্রোগ্রামগুলোর বরাদ্দ ১০.৮ শতাংশ কমেছে। বুঝলাম সেখানে আইএমএফের একটা ইনস্ট্রাকশন ছিল।

প্রস্তাবিত আয়কর আইন প্রসঙ্গে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, অবাক বিস্ময়ে, হতভম্ব হয়ে লক্ষ্য করলাম কোম্পানি অ্যাক্ট বিশাল বিশাল পরিবর্তন তারা নিয়ে আসলো। সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এনজিও, সমিতি, নট ফর প্রফিট সবকিছুই ঢুকে গেছে। প্রতিটি আইনে তো একটা স্পিরিট থাকে। কোম্পানি অ্যাক্টে কী করে নট ফর প্রফিট কোম্পানিতে ঢুকে গেলো। আজ সেটা সংসদে তোলা হচ্ছে। এটা কী করে হলো, কার মাথা থেকে এসেছে জানি না, কী লাভ হবে?

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, বাজেট পাসের আগে আয়কর আইন পাস করা হচ্ছে। এটা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। আইনের সঙ্গে অর্থবিলের সম্পর্ক নেই্। কেন এটা করা হচ্ছে, আমার বোধগম্য নয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ডলারের বিনিময় হার কৃত্রিমভাবে অনেকদিন ধরে রেখেছে। কৃত্রিমভাবে ধরে রাখার অনেকগুলো কারণ আছে। কৃত্রিমভাবে ধরে রাখার ফলে যখন সংকট আসলো তখন তা আর ধরে রাখা যায়নি । কারণ আপনি কৃত্রিমভাবে যখন কোনো কিছু ধরে রাখবেন, এটার একটা সময় আছে, কিন্তু যখন বিপদটা আসবে সাসটেন করতে পারবেন না। এখন ১০৭, ১০৮, ১১০ এ চলে গেছে (ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার)।

তিনি আরও বলেন, এটি আমদানিতে প্রভাব ফেলছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রমান্বয়ে টাকা ছাপিয়েই যাচ্ছে। ৭০ থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকার মতো ছাপিয়েছে। সেটা আবার মূল্যস্ফীতিকে পুশ করছে। যার ফলে প্রচণ্ড মূল্যস্ফীতি। কেন আপনি এলসি খুলতে পারবেন না, কেন রিজার্ভ নেই? এ ইন-ব্যালেন্স কেন হয়েছে? সেটা আজকে প্রশ্ন তুলতে হবে। রিজার্ভ হঠাৎ করে ফল করার পেছনে কারণটা কি? আবার যে রিজার্ভটা আজকে দেখাচ্ছে, সেটাও তো প্রশ্নবিদ্ধ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব অনুযায়ী ২০ থেকে ২১ বিলিয়ন ডলার। যদিও ২৭ বা ২৮ বিলিয়ন ডলার বলা হয়।

আপনি রিজার্ভ নিয়ে ইডিএফ ফান্ডে দিয়েছেন। ইডিএফ ফান্ডে যারা নিয়েছে, সবগুলোর টাকা বাইরে পাচার হয়েছে। মোস্ট অব দেম হ্যাব বিকাম ডিফল্টার। এগুলো সব ব্যাড লোন হয়ে গেছে। দিজ মানি ইজ আনলাইকলি টু ক্যাম ব্যাক। আবার অনেকগুলো প্রজেক্টে বিনিয়োগ করেছেন, যেখানে রিজার্ভ থেকে বিনিয়োগের কোনো সুযোগ নেই।
ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার বলেন, রক্ষণশীল বিনিয়োগের বছর চলছে। এই সময়ে শ্রমিকের মজুরির চাহিদা পূরণের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা করলে মুদ্রাস্ফীতির বাজারে কিছুটা সাহায্য করবে বলে মনে করি।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights