।।ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক।।
পাঁচ মাস আগে বেলুনকাণ্ডে স্থগিত হয়ে যাওয়া চীন সফর রবিবার শুরু করতে যাচ্ছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। চীন বলে আসছিল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণে বেলুনগুলো ওড়ানো হয় তবে সাগর পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর পর সেগুলো ধ্বংস করে দেয় আমেরিকার সামরিক বিমান।
ব্লিনকেনের সফরে চীনের শীর্ষ কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার বৈঠক হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। গত শুক্রবার অবশ্য চীনের প্রেসিডেন্ট মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সঙ্গে বেইজিংয়ে সাক্ষাৎ করেন।
বিশ্বের দুই পরাশক্তির বিরোধের তালিকা দীর্ঘ। বহু বিষয়ে তাদের মতভেদ রয়েছে এমনকি সম্ভাব্য সহযোগিতার ক্ষেত্র নিয়েও দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। এরমধ্যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে এনেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সম্পর্ক সংস্কার
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর সবার আগে যে বিষয় সামনে আনে তা হলো দুই দেশের কূটনীতিক যোগাযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠা। গত মাসে প্রথমবার এই বরফ গলে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায়। তখন সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তারা চীনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
তবে চীন সফর করা বাইডেন প্রশাসনের সবচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তা হতে যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। ২০১৮ সালের অক্টোবরের পর এটাই কোনো মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম বেইজিং সফর।
প্রাক সফরের এক ব্রিফিংয়ে প্রেসিডেন্টের উপসহকারী এবং ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক সমন্বয় কার্ট ক্যাম্পবেল বলেন, এখন আলোচনা শুরুর ভালো সময় কারণ এতেই সংঘাতের ঝুঁকি কমে। তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক অগ্রাধিকারের যেসব বিষয়ে আমাদের একসঙ্গে কাজ করা উচিত সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে এমন মতভেদগুলো আমর চলতে দিতে পারি না।’
তবে ব্লিনকেনের সফর নিয়ে চীনের প্রতিক্রিয়া খানিকটা শীতল। বুধবার রাতে ব্লিনকেনের সঙ্গে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং বলে দেন, সম্পর্কের সাম্প্রতিক অবনতির জন্য কাকে দায়ী করতে হবে তা খুবই পরিষ্কার। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত চীনের উদ্বেগকে শ্রদ্ধা করা, চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধ করা এবং চীনের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং প্রতিযোগিতার নামে উন্নয়ন স্বার্থকে অবজ্ঞা করা থামানো।
ব্লিনকেনের সফর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রও খুব বেশি আশাবাদী নয়। এই সফরে হওয়া বৈঠকগুলো থেকে যদি পরবর্তীতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো বৈঠক হয় তাহলে সেখান থেকে হয়তো কিছু একটা তৈরি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
বাণিজ্য সংঘাত কমানো
চীনের সঙ্গে সংঘাতের ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পথে হাঁটছে না বাইডেন প্রশাসন। ট্রাম্পের আমলে চীনের তৈরি পণ্য আমদানিতে লাখ লাখ ডলার শুল্ক আরোপ করা হয়। তবে বাইডেন তা বহাল রাখতে চান না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাইডেন আরও কঠিন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কৈরি কম্পিউটার চিপ চীনে রপ্তানি সীমিত করতে চান। তবে এর জবাবে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় কম্পিউটার মেমরি চিপ উৎপাদক মাইক্রোনের চিপ কেনা বন্ধ করে দিয়েছে।
ফলে কার্ট ক্যাম্পবেল চীনের উদ্বেগ স্বীকার করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এতদিন যা করেছে তা ব্যাখ্যা করতে পারবে এবং ভবিষ্যতে কী করতে পারে তাও ব্যাখ্যা করতে পারবে।
দুই পরাশক্তির বিরোধের ক্ষেত্র যদি কম্পিউটার প্রযুক্তি হয় তাহলে হয়তো সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে অবৈধ মাদক ব্যবসা। যুক্তরাষ্ট্র চায় চীন তাদের উৎপাদন করা একটি রাসায়নিক উপাদান রপ্তানি সীমিত করুক। ফেটানিল তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিকটি হেরোইনের কয়েকগুণ বেশি শক্তিশালী মাদক। গত সাত বছরে যুক্তরাষ্ট্রে এই মাদকের মাত্ররিক্ত ডোজে মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।
যুদ্ধ এড়ানো
বেলুনকাণ্ডের পর খবর ছড়ায় রাশিয়ায় অস্ত্র পাঠানোর কথা চিন্তা করছে চীন। এসব অস্ত্র ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহার হতে পারে- এমনটাও শোনা যায়। ভিয়েনায় চীনা কর্মকর্তাদের ব্লিনকেন স্পষ্ট করে বলেছেন, চীন যদি রাশিয়াকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দেয় তাহলে পরিণতি হবে মারাত্মক।
দক্ষিণ চীন সমুদ্র ও তাইওয়ান প্রণালীতে বারবার মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের যুদ্ধজাহাজ। চীন এসব এলাকাকে নিজের বলে দাবি করে আর যুক্তরাষ্ট্র এগুলোকে আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা বিবেচনা করে। ব্লিনকেন এবং কূটনীতিক দল বলেছে তাদের সফরের লক্ষ্য উত্তেজনা ঝুঁকিহীন করা এবং পুনরায় যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা। এরচেয়ে বেশিকিছু এখন আশা কঠিন।