আজ ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা

  • In শীর্ষ
  • পোস্ট টাইমঃ ১৭ জুন ২০২৩ @ ০৯:৫৯ অপরাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ১৭ জুন ২০২৩@০৯:৫৯ অপরাহ্ণ
বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা

।।বিডিহেডলাইন্স ডেস্ক।।

ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ ও বিশাল কাখোভকা বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে দেশটির বিস্তীর্ণ জমি সেচের পানি থেকে বঞ্চিত হবে। ফলে সেসব জমিতে ফসল ফলানোর সুযোগ নেই। একইসঙ্গে রয়েছে ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান হামলা ও কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো অবরুদ্ধ করে রাখার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি। এ অবস্থায় গত বছরের জুলাইয়ে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ‘কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তি’ (ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনেশিয়েটিভ) বা শস্য রপ্তানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখন বলছেন, তিনি আর এই চুক্তিতে থাকবেন না। সবমিলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট প্রকট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ইউক্রেনের কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রায় ছয় লাখ হেক্টর জমিতে পানি যেত কাখোভকা বাঁধের রিজার্ভার থেকে। বাঁধটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ফলে সমস্ত পানি বের হয়ে বন্যা হয়েছে। এবার দেখা দিয়েছে খরার আশঙ্কা। ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, ওই বাঁধ থেকে যে জমিতে পানি যেত, সেখানে আর পানি পৌঁছাবে না। ফলে ওই জমিগুলো চাষের অযোগ্য হয়ে পড়বে। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব দেখা যাবে বিশ্ব বাজারে। খাদ্যশস্যের দাম বাড়বে। খাদ্যের অভাবও তৈরি হতে পারে।

ইউক্রেনের কৃষি মন্ত্রণালয়ের দাবি, ওই অঞ্চলের জমিতে ৪০ লাখ টনের খাদ্যশস্য এবং তেলের বীজ তৈরি হতো। যার বাজারমূল্য সব মিলিয়ে এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। এই বাজারটি এবার সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। তবে সমস্যার সূত্রপাত আগেই। পূর্ব ইউরোপের এই অঞ্চলের বেশ অনেকটা অংশ আগেই রাশিয়া দখল করেছিল। গত দেড় বছর ধরে সেখানে লাগাতার যুদ্ধ চলছে। ফলে বহু চাষী জমি ছেড়ে পালিয়ে এসেছিলেন। গত বছরেও তারা নিজেদের জমিতে ফসল ফলাতে পারেননি।

যুদ্ধের কারণে বহু জমি নষ্ট হয়েছে। তারই মধ্যে মিসাইলের আঘাতে বাঁধটি ভেঙে যায়। এই বাঁধের পানি পূর্ব ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ চাষের জমিতে যেমন সেচের পানির পৌঁছে দেয়, ঠিক তেমনই ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখল করা ক্রিমিয়া অঞ্চলেও পানি পৌঁছে দেয়। বাঁধ ভাঙার ফলে ক্রিমিয়ার কৃষকেরাও পানি পাবেন না। ভ্যাসাইল নিজের সম্পূর্ণ নাম জানাতে রাজি হননি সাংবাদিককে। খেরসনের এই চাষি এখন নিজের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন। কিন্তু তার বাবা-মা এখনও সেখানেই আছেন। ভ্যাসাইল জানিয়েছেন, ২০২২ সালে রাশিয়া আক্রমণ চালানোর কিছুদিনের মধ্যেই তাদের এলাকা রাশিয়ার দখলে চলে যায়। রাশিয়ার সেনা জানিয়ে দেয়, সমস্ত জমি রাষ্ট্রায়ত্ত করা হবে। অত্যাচারের ভয়ে সে সময়েই তারা পালিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু বৃদ্ধ বাবা-মা-কে নিয়ে আসতে পারেননি।

ভ্যাসাইল স্পষ্টই জানিয়েছেন, গ্রামে ফিরে যেতে পারলেও তার বিরাট জমিতে এরপরে চাষ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। কারণ, সেচের পানি মিলবে না। আর পানি ছাড়া ফসল ফলবে না। গোটা ইউক্রেনের মোট জমির পরিমাণের মাত্র দুই শতাংশ আছে ওই অঞ্চলে। কিন্তু ইউক্রেনের মোট ফসলের ১২ শতাংশ উৎপন্ন হয় সেখানে। খেরসন অঞ্চলে মাটি উর্বর। সেখানে সবচেয়ে ভালো হয় আনাজপাতি। ওই অঞ্চলের টমেটো বিশ্ববিখ্যাত।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী কিছুদিনের মধ্যে এর প্রভাব বোঝা না-ও যেতে পারে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে ধীরে ধীরে প্রভাব পড়তে শুরু করবে। খাদ্যশস্যের দাম তিন শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। তার চেয়েও বড় সমস্যা, ইউক্রেন পরিমাণ মতো খাদ্যশস্য রপ্তানি করতে পারবে না। ফলে আফ্রিকা এবং ইউরোপের দেশগুলো ফের খাদ্য সংকটে পড়তে পারে।

বস্তুত, এর প্রভাব পড়ছে কৃষ্ণসাগরীয় চুক্তিতেও। তুরস্কের মধ্যস্থতায় কৃষ্ণসাগরের বাণিজ্যপথ খুলে রাখার চুক্তি করেছে ইউক্রেন এবং রাশিয়া। ইতোমধ্যেই সেই চুক্তির মেয়াদ আর না বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। কারণ হিসেবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করছেন, পশ্চিমারা এখনো মস্কোর সঙ্গে প্রতারণা করছে। বিশ্ববাজারে রাশিয়ার কৃষিপণ্য পৌঁছানোর পথে তারা বাধা সৃষ্টি করছে। বাঁধ ভাঙার পাশাপাশি ব্যাপক হামলা ও শস্য চুক্তি প্রত্যাহারের কারণেও বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights