আজ ১৪ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ৬ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

সিরাজগঞ্জে মৃৎশিল্পের দুর্দিন

  • In শিল্প-সাহিত্য
  • পোস্ট টাইমঃ ২৯ নভেম্বর ২০২৩ @ ১০:০৬ অপরাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ২৯ নভেম্বর ২০২৩@১০:০৬ অপরাহ্ণ
সিরাজগঞ্জে মৃৎশিল্পের দুর্দিন
ছবি- বিডিহেডলাইন্স

উজ্জ্বল অধিকারী
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি।।

সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার মৃৎশিল্পের জন্য জমজমাট মুখরিত এলাকার নাম ছিল সারটিয়া পাল পাড়া। যেখানে মাটি পুড়িয়ে উৎপাদিত হত সাংসারিক জীবনের তৈজস মাটির জিসিনপত্র হাড়ি, পাতিল, শৈল্পিক মুর্তি, হাতি, ঘোড়া, পুতুল, দইয়ের হাড়ি, মিষ্টির হাড়ি, ভাত খাওয়ার খাদা, মাটির ব্যাংক সহ আরো কত কি।

এখন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে শিল্পটি অত্যাধুনিক সিরামিক্সে যুগে প্রবেশ করায় এ পেশাটির মুখ থুবড়ে পড়েছে। তার পরে আবার দেশে হরতাল-অবরোধের কারনে ঠিক মত গাড়ি চলাচল করতে না পারায় ঠিক মত অর্ডার নেওয়া দইয়ের হাড়ি সময় মত পৌছানো যায় না। প্রতিদিন গড়ে এই সরটিয়া পাল পাড়ায় দইয়ের হাড়ি তৈরি হয় ৩ থেকে ৪ হাজার। নিয়মিত ভাবে দইয়ের হাড়ি পৌছাতে না পাড়লেও বিপদে পড়তে হয় মৃত শিল্পের সাথে জড়িত সকলকে। একদিকে যেমন জায়গার প্রয়োজন অন্য দিকে অর্ডার নেওয়া ঠিক মত মাল ডেলিভারি করা। যা এই হরতাল-অবরোধের কারনে আরো বিপদে আছে পালপাড়ার মৃৎশিল্পীরা।

এ জন্য তাদের মনপুত না হওয়ায় এবং ব্যবসায়িক মন্দা ভাবের কারণে কয়েকটি পরিবার ছাড়া এই পেশা থেকে প্রায় সবাই চলে গেছে অন্য পেশায়। যে কয়েকজন আছে তাও আবার এই শিল্পের চাহিদার কারনে। ফলে আজ এই মৃৎ শিল্প ধ্বংসের দাড়প্রান্তে। সরটিয়া পালপাড়া ঘুরে দেখা যায় আঠারো বিশ ঘর এখনো এই শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছেন।

একটা সময় ছিল এই মৃৎ শিল্পই ছিল হাজারো মানুষের জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। এটি ছিল একটি দারুন শৈল্পিক পেশা। শৈল্পিক মন আর কল্পনা শক্তি দিয়ে শিল্পির হাতের নিপুন কারুকার্যে তৈরি হত সব দারুন জিনিসপত্র। পেশাটি ছিল সন্মানিত ও উচ্চ পর্যায়ের। তৎকালিন সময়ে এসব জিনিসের চাহিদাও ছিল ব্যাপক। প্রায় বাড়ীতেই বড় বড় মাটির চুলা তৈরি করে সেখানে পরিবারের প্রায় মানুষজন একযোগে রাত দিন কাজ করে জিনিসের চুড়ান্ত রুপ দিয়ে চুলা জ্বালাত। পরে এটি পুড়া হয়ে গেলে করা হত শৈল্পিক রং পরবর্তীতে এসব তৈজস জিসিনপত্র বাজারে তুলা হত এবং বিক্রি হত। এই ছিল এই পেশার অবস্থা।

এখন দিন পাল্টে গেছে। মানুষ অল্প আয়ের সাথে আর চলতে পারে না। ফলে অন্য পেশায় ঝুকে পড়েছে এই শিল্পের মানুষ। এখন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে শিল্পটি জাম্প করে সাদা মাটির তৈরি অত্যাধুনিক সিরামিক্স যুগে প্রবেশ করেছে।

এদিকে বিশ্ব বাজারে সাদা মাটির তৈরি শৈল্পিক নৈপূন্য কারুকাজ নিয়ে ইতালি, জাপান, চায়না সিরামিক্সের প্রতিযোগিতা চলছে ব্যপক ভাবে। সাথে সাথে আমাদের দেশের তৈরি সিরামিক্স ও মেলাইনও এখন বিশ্ব বাজারের সাথে পাল্লা দিচ্ছে। ফলে কাঁচের তৈজসপত্রের শৈল্পিক কারুকার্য মানুষকে মুগ্ধ করে ফেলেছে। এখন দেশের মানুষের প্রায় বাড়ীতেই ওয়াল সুকেসে বা সাধারন সুকেসে এই দামি সিরামিক্স জায়গা করে নিয়েছে। এর চাহিদাও এখন ব্যপক।

কিন্তু যা থেকে উৎপত্তি এই মৃৎ শিল্প তা থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এ পেশাটির প্রতি সরকারের মুখ্য ভূমিকা না থাকার কারনও অন্যতম বলে জানান এই শিল্পের সাথে জড়িত একজন মৃৎ শিল্পের মালিক

সরটিয়া পাল পাড়া গ্রামের মুকুল পাল, গোবিন্দ পাল, আনন্দ পাল, গোকুল পাল বলেন, বংশানুক্রমিক ভাবে আমার পরিবার এই মৃৎ শিল্পের সাথে জড়িত। আমি এই ব্যবসার শেষ অবলম্বন। আমার পরিবারের ৫জন সদস্য রাত দিন পরিশ্রম করে এই ব্যবসার কাজ পরিচালনা করছি। যেন তেন মাটি দিয়ে এই শিল্পের জিনিস তৈরি হয় না এর জন্য মাটি বিভিন্ন জায়গা থেকে কিনে আনতে হয়। মাটি কিনে এনে এটি চুক্তিভিত্তিক তৈরি করে খুব একটা পোষে না। কারণ ব্যপক ভিত্তিক পুজি খাটাতে হয়। আমাদের তেমন পুজি নেই। আমরা বিশেষ করে, পাইকারের চাহিদা অনুযায়ী মাটির হাতি, ঘোড়া, পুতুল, হাড়ি, পাতিল, দইয়ের কড়াই বেশি তৈরি করি। এরজন্য উপকরন হিসাবে বড় স্থান নির্ধারন, রৌদ্দুর জায়গা, চুলা তৈরি করা, লাকরি সংগ্রহ, রং ক্রয়, কারিগরসহ ব্যপক ভিত্তিক একটা খরচ হয়। এ গুলির প্রায় জিসিনই আমরা যোগান দিতে পারি না। প্রচুর ক্যাশের প্রয়োজন হয়। নিজে চলব নাকি এই পেশার উপকরন যোগাড় করব সব মিলিয়ে আমরা ভাল নেই। এইজন্য আমরা সরকারের অনুদান সহযোগিতা কামনা করছি।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights