আজ ১৪ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ৬ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

কাস্টমসের অনিয়ম দূর্নীতি হয়রানি বন্ধে বন্দর সংশ্লিষ্ট ৪ সংগঠনের যৌথ সভা, ডেপুটি কমিশনারের প্রত্যাহার দাবি

  • In অনুসন্ধান, জাতীয়
  • পোস্ট টাইমঃ ৪ নভেম্বর ২০২৩ @ ০৫:৩৫ অপরাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ৪ নভেম্বর ২০২৩@০৫:৩৫ অপরাহ্ণ
কাস্টমসের অনিয়ম দূর্নীতি হয়রানি বন্ধে বন্দর সংশ্লিষ্ট ৪ সংগঠনের যৌথ সভা, ডেপুটি কমিশনারের প্রত্যাহার দাবি
ছবি- বিডিহেডলাইন্স

হাবিবুর রহমান পলাশ
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি।।

সাতক্ষীরা ভোমরা কাস্টমস্ এখন দূর্নীতি আর অনিয়মের আখড়ায় পরিনত হয়েছে। প্রতি মাসে আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে জোর পূর্বক হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা। যে কারনে ব্যবসায়ীরা ভোমরা বন্দর দিয়ে পন্য আমদানীতে আগ্রাহ হারাচ্ছেন। ফলে দিন দিন রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বন্দরে পন্য আমদানীতে কাস্টমস কর্মকর্তাদের এ সকল অনিয়ম দূর্নীতি বন্ধে ভোমরা বন্দর সংশিলিষ্ট ৪টি সংগঠন জরুরী সভা করে কমিশনারের নিকট অভিযোগ করেছেন। ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশন ভবনে সিএন্ডএফ এ্যাসোসিয়েশন, সাতক্ষীরা চেম্বার অব কর্মাস, কর্মচারি এ্যাসোসিয়েশনসহ বন্দর সংশিলিষ্ট ৪টি সংগঠন ২৯ অক্টোবর যৌথ সভা করে বন্দরের ডেপুটি কমিশনার মোঃ এনামূল হকের প্রত্যাহার দাবি করেছেন।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ বৈধকাগজ পত্র থাকা সত্বেও ভারত থেকে আমদানিকৃত পন্যে বিল অব এন্ট্রি প্রতি পন্যের প্রকার ভেদে ২ থেকে ৩০ হাজার টাকা আদায় করছে কাস্টমসের হাতে গোনা দুই একজন কর্মকর্তা। প্রতিদিন প্রায় ৮০ থেকে শতাধিক সংখ্যক বিল অব এন্ট্রিতে গড়ে ১০ লক্ষ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এতে মাসে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ভোমরা কাস্টসসের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। অবৈধ এসব ঘুষের টাকা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন আমদানিকারকরা। ফলে ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে পন্য আমদানিতে আগ্রহ হারিয়ে পাশ্ববর্তী অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

কাস্টমসের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত এই ঘুষের টাকা দিতে গিয়ে লসের কারনে অনেক ব্যবসায়ী ভারত থেকে পন্য আমদানি বন্ধ রেখেছে। এতে করে বিপুল পরিমান রাজস্ব কমে যাচ্ছে সরকারের। ফলে কাস্টমসে হয়রানি ও অনিয়ম বন্ধের জন্য জরুরি ভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস্ এসোসিয়েশনের সভাপতি নওশাদ দেলওয়ার রাজু, সাধারন সম্পাদক মাকসুদ খান, সাবেক সভাপতি আশরাফুজ্জামান আশু, শেখ এন্টারপ্রাইজের শেখ হাসান হক মোস্তফা ও কর্মচারি এ্যাসোসিয়েশনের মহাসিন কবির জানান, আমদানিকৃত ভারতীয় ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশকরার পর বিল অব এন্ট্রি করার জন্য কাস্টমস্ অফিসে অগ্রিম ২ হাজার টাকা না দেয়া পর্যন্ত বিল অব এন্ট্রি নাম্বার ফেলতে দেয়া হয় না।

পণ্য ভেদে হলুদের ক্ষেত্রে ট্রাক প্রতি ২ হাজার টাকা, শুকনা মরিচের ক্ষেত্রে বিল অব এন্ট্রি প্রতি ৩ হাজার টাকা, খৈলসাপটার ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ মেট্রিক টনে ১৫ হাজার টাকা, ভুষির ক্ষেত্রে বিল অব এন্টিপ্রতি ৫ হাজার টাকা, ভুষি সাপটার ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ মেট্রিকটনে ৩০ হাজার টাকা, সিরামিক পণ্যের ক্ষেত্রে বিল অব এন্ট্রিপ্রতি পরীক্ষণের ভয় দেখিয়ে ১০ হাজার টাকা এবং পিঁয়াজের ক্ষেত্রে ট্রাক প্রতি ২০০ টাক জোর পূর্বক আদায় করা হচ্ছে।

ভারতীয়ট্রাক বন্দর থেকে বের করার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৪০টির অধিক স্ট্যাম্প কর তেহয়। স্ট্যাম্প প্রতি ডেপুটি কমিশনারকে নগদ ২ হাজার টাকা এবং পরীক্ষণে দায়িত্বর কর্মকর্তাকে ৫০০ টাকা প্রদান না করা পর্যন্ত স্ট্যাম্পে সাক্ষর করেন না।
রপ্তানীকৃত পণ্যের ক্ষেত্রেও বিল অব এন্ট্রি প্রতি অগ্রিম এক হাজার টাকা প্রদান না করলে বিল অব এন্ট্রি নাম্বার ফেলতে দেয়া হয়না এবং পণ্যের ডলার মূল্য বাড়ানোর ভয় দেখিয়ে বিল অব এন্ট্রি প্রতি ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অবৈধ ভাবে আদায় করছে।

এসব টাকা উত্তোলনের জন্য নির্ধারিত লোকও ঠিক করে দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে সরাসরি টাকাগুলো সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা রাজিব হোসেনের তত্বাবধায়নে উত্তলোন করে থাকেন খুলনার গোবিন্দ, বদরুল ও বাবলুর রহমান এবং আব্দুর রউফ। তাদের হাতে টাকা না পৌছানো পর্যন্ত কোন ফাইল ছাড় হয় না। অফিস চলাকালিন সময়ে গোবিন্দ সব সময় কাস্টমস অফিসার দের রুমের সামনেই তাকে অবস্থান করতে দেখা যায়।

পন্যের ডলার মূল্য বাড়ানোর ভয় দেখিয়ে বিল অব এন্ট্রি সংখ্যা বৃদ্ধি করে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য পাথরের ক্ষেত্রে ১০ ট্রাকে একটি এবং অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে ৫ ট্রাকে ১টি বিল অব এন্ট্রি নর্ধারণ করে দিয়েছে, যা এ বন্দর প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত কখনো পরিলক্ষিত হয়নি। ব্যবসায়িদের এসব হয়রানির ফলে অনেক ব্যবসায়ি এই বন্দর থেকে মূখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন।

আমদানিকারক মিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজের শাহ আলম শিমূল জানান, সার্কভূক্ত দেশ গুলোতে সাপঠার ক্ষেত্রে ডিউটি ফ্রি পন্য যেমন খৈল ও ভূষি। ক্ষেত্রও জোর পূর্বক বিল অব এন্ট্রি প্রতি ৩০ হাজার টাকা করে সম্পূর্ন অবৈধ ভাবে আদায় করা হচ্ছে। যা সম্পূর্ন বেআইনি। টাকা না দিলে ফাইলে সাইন করেন না ডেপুটি কমিশনার এনামূল হক। এসব বিষয়ে বেশি কথা কললে ব্যবসায়িদের লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দেন তিনি। সভায় উপরোক্ত অবৈধ টাকা আদায় এবং ডেপুটি কমিশনারের অনিয়ম বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অন্যথায় ভোমরা বন্দরে এ বিষয়ে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং আন্দোলনের প্রক্রিয়া তৈরী হলে ভোমরাসি এন্ড এফএজেন্টস্ এসোসিয়েশন কোন প্রকার দায়ভার গ্রহণ করবে না বলে জানান ব্যবসায়িরা।

এবিষয়ে সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডস্ট্রিজ এর সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু বলেন, ভোমরা স্থল বন্দরের ডেপুটি কমিশনারের এনামূল হকের অনিয়ম দূর্নীতি চরম আকার ধারন করেছে। ভারত থেকে পন্য আমদানিকারক ব্যবসায়িরা বিষয়টি তাকে জানিয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে খুলনার কাস্টমস কমিশনারকে বিষয়টি অবগত করেছেন। অবিলম্বে তাকে ভোমরা বন্দর থেকে অপসারণসহ ব্যবসায়িদের হয়রানি ও অনিয়ম বন্ধের জোর দাবী জানান।

সহকারি কাস্টমস কর্মকর্তা রাজিব হোসেন বলেন, এখানে কোন দূর্নীতি হয় না। কেউ যদি আমাদের নাম করে ঘুষ নেয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। কাগজপত্র ঠিক থাকলে তাকে কোন হয়রানি হতে হবে না। আমরা সেবা দিতে আসছি সেবা দিয়ে যাবো।

এসব বিষয়ে ডেপুটি কমিশনার মোঃ এনামুল হক জানান, তার বিরুদ্ধে আনীত এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন পন্য আমদানী-রপ্তানীর ক্ষেত্রে স্কেলে এখন জিরোটলারেন্সনীতি গ্রহন করা হয়েছে। যে কারনে ব্যবসায়িরা অবৈধ সুযোগ না পেয়ে এসব অভিযোগ তুলছেন। আমি যোগদানের পর থেকে রাজস্ব আদায় দ্বিগুন হয়েছে।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights