লেখক: প্রণব চক্রবর্তী- সিনিয়র সাংবাদিক, একুশে টেলিভিশন,ঢাকা।
একুশে টেলিভিশনের সিনিয়র সাংবাদিক প্রণব চক্রবর্তীর প্রিয় শিক্ষক অরবিন্দ আচার্য স্যার আর নেই। গত ১৮ ই মে অসুস্থ জনিত কারণে ঢাকার একটি প্রাইভেট হসপিটালে প্রিয় শিক্ষক অরবিন্দ আচার্য ভর্তি হন। পরবর্তীতে ডাক্তারি পরামর্শে গত ২০শে মে অরবিন্দ স্যারের ব্রেইনে অস্ত্রপাচার সম্পূর্ণ করা হয়, কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সকলকে কাঁদিয়ে প্রিয় স্যার চলে গেলেন সবাইকে ছেড়ে এই পৃথিবী থেকে। ২২শে মে দুপুর ১২ঃ৩০ এ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রণব চক্রবর্তী তার প্রিয় স্যারকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে ফেসবুকে এক হৃদয়বিদারক স্ট্যাটাস পোষ্ট করেন। প্রণব চক্রবর্তীর ওয়াল থেকে হুবাহু নিচে দেওয়া হল।
অংকে আমি কখনই ভাল ছিলাম না। সে কারনে ক্লাস নাইনে থাকতে বাবা বললেন অরবিন্দু স্যারের (তিনি আমার বাবারও স্যার) সাথে কথা হয়েছে আমার তুমি ওনার কাছে প্রাইভেট পড়তে যাবে।
প্রতিদিন সকালে স্যারের বাড়িতে পড়তে যেতাম। একব্যাজে আমরা ৭-৮ জন পড়তাম, তারপর যেতাম স্কুলে। বাড়িতে একদিন স্যার খুবভাল করে শেখালেন জ্যামিতির অতিভুজ কাকে বলে? আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন বুঝেছিস তুই, সেটা মাথায় খুববেশি ঢুকলো না কিন্তু বললাম বুঝেছি স্যার।

প্রণব চক্রবর্তী- সিনিয়র সাংবাদিক, একুশে টেলিভিশন,ঢাকা।
ঠিক তার দুদিন পর অংক স্যারের অনুপস্থিতিতে অরবিন্দু স্যার ক্লাসে এলেন। জ্যামিতি পড়াতে গিয়ে অনেক সহপাঠীকে অনেককিছু ধরলেন। স্বভাবসুলভ ভাবেই আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি বলো অতিভুজ কাকে বলে? অনেক চেষ্টা করেও বলতে পারলাম।
সেদিন স্যার প্রচণ্ড রেগে আমার দুইগালে ৭-৮ টি চর মারলেন, এবং বোর্ডে এেঁকে শেখালেন (সমকোণী ত্রিভুজের সমকোনের বিপরীত বাহুকে অতিভুজ বলে) তারপর ক্লাস ছুটি দিলেন। পুর ক্লাসের সবাই স্যারের রাগ আর আমাকে দেখছিলো। আর ভাবছিলো স্যার কেন আমাকে এমন করে মারছেন। কারন তিনি সাধারনত কাউকে মারতেন না।
আমি ছাত্র ভাল ছিলাম না কিন্তু ক্লাসে পড়া টুকটাক করে যেতাম তাই বেশি মাইর খেতাম না কোন স্যারেরই।
যাইহোক সে চড়ের দাগ দুদিন ছিল মুখে। পড়দিন সকালে ভয়ে ভয়ে স্যারের বাড়িতে গেলে আদর করে স্যার বললেন খুব বেশি ব্যাথা পেয়েছিলি না রে। আয় তোকে আবার শিখিয়ে দি আমি বললাম মনে আছে স্যার। অতিভুজ কি তা বললামও আবার।
আমাকে স্যার বললেন অংক তোকে শিখতে হবেই। এই ছিলেন অরবিন্দু আচার্য স্যার। যার কাছে শুধু শিখেছি। তিনি লোহাগড়া পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন। নড়াইল জেলার লোহাগড়ায় সর্বচ্চ সম্মানীয়দের তিনি ছিলেন একজন।
আজ অনেককিছু ভুলে গেছি, কিন্তু অতিভুজ কাকে বলে ভুলিনি। ভুলবও না কোনদিন।
আজ মানুষ গাড়ার নিশ্বার্থ এই কারিগড়কে নিজের হাতে লাশবাহী গাড়িতে তুলে দিলাম। অনন্ত লোকে চলে গেলেন তিনি।
স্বর্গ থেকে আশির্বাদ করবেন স্যার যেন জীবনের অংকটা মেলাতে পারি।
প্রণাম স্যার।