।। বিডিহেডলাইন্স ডেস্ক ।।
কেন্দ্রীয় সরকারের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নেয়ার পরেও থামেনি সহিংসতা। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে সহিংসতার ঘটনায় ৬০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়া এ ঘটনায় আরও ২৩১ জন আহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সহিংসতায় গত কয়েকদিনে ধর্মীয় স্থানসহ ১ হাজার ৭০০ ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং গতকাল রাজ্যটির ইম্ফলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
গত ৩ মে থেকে ৫ মে’র মধ্যে সংগঠিত এ সহিংসতায় হতাহতের বিষয়টি এই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করা হয়েছে।
এন বীরেন সিং বলেন, ‘মণিপুরে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় ত্রাণ শিবিরে আটকে পড়া ২০ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আটকে পড়া আরও ১০ হাজার মানুষকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হবে।’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ১ হাজার ৪১টি বন্দুকের মধ্যে ২১৪টি উদ্ধার করা হয়েছে।’
যারা বন্দুক ছিনতাই করেছেন তাদের এসব বন্দুক নিকটবর্তী থানায় ফিরিয়ে দিতে বলেছেন তিনি। তা না হলে ‘চিরুনি অভিযান’ চালানো হবে বলেও সতর্ক করেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী।
মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা কুলদীপ সিং জানিয়েছেন, মণিপুরের পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হচ্ছে। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ২১৮টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে তফসিলি উপজাতি মর্যাদার দাবি জানিয়ে আসছে সমতলের মেইতেই সম্প্রদায়। তাদের দাবির প্রতিবাদে গত ৩ মে ১০টি পার্বত্য জেলায় ‘উপজাতি সংহতি পদযাত্রা’ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ভারতের এই উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে সহিংস সংঘর্ষ শুরু হয়।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের সুত্র বলছে, মণিপুরের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মেইতেই। তাদের বেশিরভাগই ইম্ফল উপত্যকায় বাস করেন। অন্যদিকে মণিপুরের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ নাগা ও কুকি এবং তারা পার্বত্য জেলাগুলোতে বাস করেন।
মনিপুর রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায় কয়েক বছর থেকে নিজেদের উপজাতি কোটায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করে আসছে। এতে করে বনভূমিসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চাকরির ক্ষেত্রে কোটা সুবিধা পাবে। কিন্তু ইতোমধ্যে তফসিলি উপজাতি যেসব সম্প্রদায় স্বীকৃত বিশেষ করে পাবর্ত্য জেলার কুকি সম্প্রদায়Ñ তারা মেইতেই সম্প্রদায়ের দাবি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে। কেননা মেইতি সম্প্রদায়ের দাবি মেনে নিলে কুকিরা পূর্বপুরুষের বনভূমি থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাবে। আর মেইতি সম্প্রদায় বলছে, অন্য উপজাতি সম্প্রদায়ের মতো সুরক্ষা না দেওয়ায় তারা নানা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে।
এ প্রেক্ষিতে গত ১৪ এপ্রিল মনিপুর হাইকোর্ট মেইতেই সম্প্রদায়ের দাবি খতিয়ে দেখতে মনিপুর সরকারকে নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের এই নির্দেশের পরেই এপ্রিলে মনিপুরজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপির একাধিক জনজাতি গোষ্ঠীর এমএলএ পদত্যাগ করেন। হাইকোর্টের নির্দেশের প্রতিবাদেই উপজাতি সম্প্রদায় প্রতিবাদ মিছিল বের করে। ওই মিছিল থেকেই সহিংসতার শুরু।