।।ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক।।
আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশকে বেশি চাপ দেয়া প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে ভারত। দেশটির সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, ওয়াশিংটন বাংলাদেশ সরকারের ওপর বেশি চাপ প্রয়োগ করলে শেষ পর্যন্ত উগ্রবাদী শক্তির হাত শক্তিশালী হতে পারে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে আক্রান্তকে করতে পারে।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি আলাপচারিতায় যুক্তরাষ্ট্রকে এমন বার্তা দিয়েছে ভারতীয় পক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাতে খবরে বলা হয়েছে, দিল্লি বিশ্বাস করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ইস্যুতে মার্কিন চাপে বাংলাদেশ চীনের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠতে পারে। এতে এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব বাড়তে পারে।
এছাড়া ভারতীয় পক্ষ স্পষ্ট করেছে, তারাও বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া চায়। তবে মার্কিন নেতৃত্বকে বলা হয়েছে, এই ইস্যুতে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা হলে কেবল উগ্রবাদী ও মৌলবাদী গ্রুপ উৎসাহিত হবে। এই গ্রুপগুলোকে শেখ হাসিনা সরকার সফলতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
বাংলাদেশের আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) এবং কয়েকজন সিনিয়র র্যাব কর্মকর্তার ওপর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ এর মে মাসে বাংলাদেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্তকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেয়। যারাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ বা মিডিয়াকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা সঙ্গে জড়িত বলে বিশ্বাস করা হবে তাদের বিরুদ্ধেই এই নিষেধাজ্ঞা ব্যবহার করবে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণে সৃষ্টি হওয়া পরিস্থিতির সুযোগ চীন নিচ্ছে বলে ভারতের উদ্বেগ বেড়েছে। জোহানেসবার্গের ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মন্তব্যের পর ভারতের উদ্বেগ আরও বেড়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি বলছে, শি বলেছেন বাংলাদেশের ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরোধিতাকে’ সমর্থন করে চীন। এছাড়া মূল স্বার্থগুলোতে পরস্পরকে সমর্থন জানাতে ঢাকার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে বেইজিং।
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, হাসিনা বলেছেন বাংলাদেশ-চীনের সম্পর্কের ভিত্তি পারস্পারিক শ্রদ্ধা এবং পরস্পরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।
২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা নজিরবিহীন টানা চতুর্থ মেয়াদের দিকে চোখ রাখছেন। প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যে তাকে ভারতের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র মনে করা হয়। ভারতবিরোধী বিদ্রোহী গ্রুপ দমনের পাশাপাশি তার সরকার জ্বালানি এবং বাণিজ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে ভারতের সঙ্গে সংযোগ বাড়িয়েছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশি বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
আগামী ২০২৪ সালের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। এতে জোর পেয়ে বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) একের পর এক বড় মিছিল আয়োজন করছে। ভারতীয় সূত্র মনে করে, ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করা বিএনপি ২০১৯ মাত্র সাত আসন পায়। এবারের নির্বাচনে তারা বেশ কয়েক ডজন আসন পাওয়ার আশা করছে।
বিএনপির ঘনিষ্ঠ মিত্র জামায়াত-ই-ইসলামীর পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠা নিয়েও ভারতের উদ্বেগ রয়েছে। ভারত এই দলটিকে ভারতবিরোধী এবং পাকিস্তানের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখা দল বলে মনে করে। গত ১০ জুন জামায়াত ঢাকায় দশ বছরে প্রথম বিশাল সমাবেশ আয়োজন করে।
ভারতীয় পক্ষ আরও বিশ্বাস করে যে, শক্তিশালী হলে জামায়াত চরমপন্থী শক্তিকে উৎসাহিত করতে পারে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত থাকা ভারতের পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল এই মাসের শুরুতে দিল্লি সফর করেছেন। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে এই সফরে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।