নিজস্ব প্রতিবেদক
আহসান হাবীব।।
হিজরি সনের প্রথম মাসটি হলো মহররম মাস। ইসলামের দৃষ্টিতে মহররম একটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ মাস। মহররম মাস এটি আল্লাহর মাস। অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য ও রহস্যময় তাৎপর্য নিহিত আছে এ মাস ঘিরে। এ মাসের ১০ তারিখ মুসলিম বিশ্বের তাৎপর্যপূর্ণ আশুরার দিন। এ দিনের সর্বাপেক্ষা আলোচিত বিষয় হলো কারবালার মর্মান্তিক ইতিহাস। আশুরার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ও স্মরণীয় ঘটনার শীর্ষে স্থান পায় মুসা (আ.)-এর একটি ঘটনা। এই দিনে তিনি অত্যাচারী শাসক ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন।
এ ঘটনার বিবরণে ইমাম বুখারি (রহ.) সাহাবি হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন- ‘মহানবী (সা.) হিজরত করে মদিনায় পৌঁছে মদিনার ইহুদিদের আশুরার দিনে রোজা পালন করতে দেখেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের জিজ্ঞেস করেন- এই দিনে এমন কী ঘটেছে যে তোমরা রোজা পালন করো? তারা বলে- এই দিনে আল্লাহ তা’আলা মুসা (আ.) ও তাঁর সঙ্গীদের ফেরাউন থেকে মুক্ত করেছিলেন এবং ফেরাউন ও তার বাহিনীকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মুসা রোজা রাখতেন, তাই আমরাও আশুরার রোজা পালন করে থাকি। ইহুদিদের জবাব শুনে রাসুলে করিম (সা.) বলেন- মুসা (আ.)-এর কৃতজ্ঞতার অনুসরণে আমরা তাদের চেয়ে বেশি যত্নশীল হওয়ার অধিকারী। অতঃপর তিনি নিজেও আশুরার রোজা রাখেন এবং মুসলমানদের তা পালন করতে নির্দেশ প্রদান করেন।’ (বুখারি- হাদিস – ৩৩৯৭, মুসলিম- হাদিস : ১১৩৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) এই রোজা নিজে পালন করেছেন এবং উম্মতকে রাখার প্রতি নির্দেশ করেছেন, তাই তাঁর অনুসরণ করা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া অসংখ্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) আশুরার রোজার ফজিলত বর্ণনা করেছেন। কয়েকটি নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:
আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন- এই রোজা বিগত বছরের গুনাহ মুছে দেয়। (মুসলিম- হাদিস : ১১৬২)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন- রমজান মাসের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা মহররম মাসে আশুরার রোজা। (সুনানে কুবরা- হাদিস : ৮৪২১০)
মুসলিম শরিফে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত- মহানবী (সা.) যখন আশুরার দিনে রোজা রাখেন এবং অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করেন, তখন সাহাবিরা অবাক হয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, বিধর্মীরা তো এই দিনটিকে বড় দিন মনে করে। এই দিনে তারাও রোজা পালন করে। আমরা যদি এই দিনে রোজা রাখি তাহলে তো এদের সঙ্গে সামঞ্জস্য হবে। তাদের প্রশ্নের জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন- (তারা যেহেতু এদিন একটি রোজা পালন করে), আগত বছর ১০ তারিখের সঙ্গে ৯ তারিখ মিলিয়ে দুই দিন রোজা পালন করব, ইনশাআল্লাহ। (মুসলিম- হাদিস : ১১৩৪)
আরেক বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন- ‘তোমরা আশুরার দিনে রোজা রাখো, তবে এ ক্ষেত্রে ইহুদিদের সঙ্গে মিল না হওয়ার জন্য ১০ তারিখের আগের দিন অথবা পরের দিন আরো একটি রোজা রেখে নিয়ো।’ (মুসনাদে আহমদ- হাদিস : ২১৫৪)
উপরোক্ত হাদিসগুলোর আলোকে প্রমাণিত হয় যে আশুরার রোজা হবে দুটি। মহররমের ১০ তারিখ একটি, আর ৯ তারিখ অথবা ১১ তারিখ আরো একটি। উল্লেখ্য যে এবার আগামী ২৯ জুলাই (শনিবার) পবিত্র আশুরা ১০ মহররম পালিত হবে। ৯ , ১০ এবং ১১ ই মুহাররম ইংরেজি (২৮, ২৯ এবং ৩০ শে জুলাই]।