আজ ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ২০শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিয্যবাহী রেশম কারখানা চালু: আশার আলো দেখছেন শ্রমিকরা

ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিয্যবাহী রেশম কারখানা চালু: আশার আলো দেখছেন শ্রমিকরা

।।নিজস্ব প্রতিবেদক।।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রায় ২০ বছর পর চালু হতে যাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী এই রেশম কারখানাটি। কারখানাটি আবার চালু হওয়ার মাধ্যমে রেশমশিল্পে সুদিন ফিরবে বলে মনে করছে খাতসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকরা।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস বাংলাাদেশ ১৯৭৫-৭৬ সালে ঠাকুরগাঁওয়ের গোবিন্দনগর বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় ৩ দশমিক ৩৪ একর জমির ওপর স্থাপন করে ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানাটি। পরবর্তীতে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ১৯৮১ সালে কারখানাটি রেশম বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এর পর থেকেই দুর্বল হতে থাকে কারখানাটি। ২০০২ সালে লোকসান দেখিয়ে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে সে সময় কারখানাটির ১৩৪ জন শ্রমিক ও প্রায় ১০ হাজার রেশমচাষি বেকার হয়ে পড়েন। ১৯৯৬ সাল থেকে ১৯৯৯ সালে ১৬৩ দশমকি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে বিএমআরই প্রকল্পের অধীনে কারখানাটির ভবন বর্ধিতকরণসহ অতিরিক্ত ২০টি শক্তিচালিত তাঁত ও কিছু আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সংস্থাপিত করা হয়। তারপরেও আবর্তক তহবিলের অভাবসহ নানাবিধ সমস্যায় কারখানাটি পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে মূলধন না থাকায় কারখানাটি পরিচালনার যাবতীয় অর্থ বোর্ডের উন্নয়ন তহবিল থেকে ঋণ হিসাবে প্রদান করা হয়েছে। কারখানাটিতে দীর্ঘদিন কাজ করে আসা জুলেখা বেগম বলেন, শুরু থেকে এই রেশম কারখানায় আমি কাজ করেছি। আমি সব কাজ জানি। আশা করছি পুরোনো কর্মীদের নিয়ে কাজ করবে কর্তৃপক্ষ। ২০০২ সালে কোম্পানি বন্ধ হওয়ার পর থেকে আমি বেকার হয়ে পড়েছি। কারখানাটি চালু হলে কর্মসংস্থান ফিরে পাব বলে আশা করছি। কারখানার আরেক শ্রমিক আসমা বেগম বলেন, যখন কারখানাটি চালু হয়, তখন আমি শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলাম। বন্ধ হওয়ার পর আমার মতো আরও অনেকে বেকার হয়ে পড়েন। এখন আমাদের বয়স হয়েছে, কাজ করতে পারব কি না তাও জানি না। তবে এটা চালু হবে শুনে অনেক ভালো লাগছে। অনেক মহিলার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।

এ বিষয়ে রেশমশ্রমিক আকাশ আলী বলেন, এই রেশম কারখানায় আমি শ্রমিক ছিলাম। অনেক দিন বেতন পাইনি। ২০০২ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আমি রিকশা চালানো শুরু করে থাকি। শুনলাম এটা আবার চালু হচ্ছে। আমিসহ অনেক শ্রমিক আরডিআরএস এ আন্দোলন করে ১৯৮১ সালে সরকারিভাবে জাতীয়করণ করি। মাঝে কিছু অনিয়মের কারণে অস্থায়ীভাবে কারখানাটি বন্ধ ছিল।

পরবর্তীতে সরকার জাতীয়করণ করলেও ২০০২ সালে আবারও বন্ধ হয়ে যায়। এখন আবারও নতুন করে চালু হবে শুনে আমরা সবাই আনন্দিত। এ বিষয়ে কারখানাটি লিজ নেওয়া সুপ্রিয় এন্টারপ্রাইজের জিএম মেহেদী হাসান বলেন, ‘গত মে মাসে আমরা এই রেশম কারখানা লিজ নিয়েছি। চলতি মাসের মধ্যেই কারখানাটি আমরা চালু করতে পারব বলে আশা করছি । কারখানাটি চালু হলে স্থানীয় অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।’ রংপুর অঞ্চলের উৎপাদন কর্মকতা আবুল কালাম আজাদ বলেন, পাঁচ বছরের জন্য সুপ্রিয় এন্টারপ্রাইজকে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা চুক্তিতে কারখানাটি দেওয়া হয়েছে। তারা শুধু বিল্ডিং এবং যন্ত্রগুলো ব্যবহার করতে পারবে।

জেলার অর্থনীতিতে রেশম কারখানা ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘রেশম কারখানার কর্মকতারা আমার কাছে এসেছিলেন। তারা আমাকে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। কারখানাটি চালুর বিষয়ে আমি অবগত আছি। কারখানা চালু হলে জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights