আজ ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ১১ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

সরকার পতনের ছক কষছে বিএনপি, টার্গেট ঢাকা

  • In শীর্ষ
  • পোস্ট টাইমঃ ১১ জুলাই ২০২৩ @ ০৭:০৭ অপরাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ১১ জুলাই ২০২৩@০৭:০৭ অপরাহ্ণ
সরকার পতনের ছক কষছে বিএনপি, টার্গেট ঢাকা

।।বিশেষ প্রতিবেদক।।

সরকার পতনের ১ দফা ঘোষণা দিতে গিয়ে বুধবার (১২ জুলাই) বড় জমায়েতের পরিকল্পনা করেছে বিএনপি। অতীত আন্দোলনের অভিজ্ঞতায় দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, সরকার পতন সম্ভব করতে হলে ঢাকায় জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নাই। রাজধানীতে সফল আন্দোলন সংগঠিত করতে বেশকিছু কৌশল ও পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।

বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আগামীকাল ১২ জুলাই থেকে সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচি দেবে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনের সকল দলও এক দফা দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলন চূড়ান্ত করতে আগামীকালের সমাবেশ সফল করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। পাশাপাশি দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছে বিএনপির হাইকমান্ড। সমমনা জোট ও দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক চলছে। ধারাবাহিক এইসব বৈঠকে সরকার পতন নিশ্চিত করতে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। একদফা আন্দোলন ঘোষণার পর সরকার বিরোধীদের আন্দোলনে বাধা দিলে দলটির করণীয় কি হবে তারও আলোচনা হচ্ছে এসব বৈঠকে।

সূত্র জানিয়েছে, অতীতের নানা অভিজ্ঞতার আলোকে এবারের আন্দোলনের ছক অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে করছে বিএনপি। সে কারণে আন্দোলন কেমন হতে যাচ্ছে, তার বিস্তারিত জানা যায়নি। এক দফা ঘোষণার পর রাজপথের পরিবেশ ও সরকারের মুভমেন্ট বিবেচনা করে নতুন নতুন কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছে বিরোধীরা। অতীতের মতো কর্মসূচি না দিয়ে সচিবালয় বা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও, ঢাকায় অবস্থান ইত্যাদি কর্মসূচির কথা ভাবছে তারা।

গত দুইদিন যুগপৎ আন্দোলনের অন্য দলের সাথেও বৈঠক করে পরামর্শ নেয় বিএনপি। জানা গেছে, বিএনপি এসব বৈঠকে একদফা আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে ঢাকায় সমাবেশ ও ঘেরাওয়ের কথা ভাবছে জানিয়ে আরো কী কী কর্মসূচি দেয়া যেতে পারে জোট নেতাদের সেই প্রস্তাবনা দেয়ার আহ্বান জানায় দলটি। তখন কেউ কেউ ঢাকায় অবস্থান ধর্মঘট, সচিবালয় ঘেরাও, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও, গণভবন ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচির কথা বলেন। তবে বিএনপি হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস কর্মসূচিতে যেতে চায় না। অহিংস কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন শুরু করতে চায় দলটি।

বিস্তারিত না পাওয়া গেলেও এটুকু জানা গেছে, বিএনপির এক দফা আন্দোলনের মূল টার্গেট হচ্ছে ঢাকা। বড় সমাবেশ করে সরকার পতনের অভিন্ন একদফা আন্দোলন গড়ে তুলতেই নানা পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ দফা ঘোষণার পর প্রতিটি কর্মসূচিতে বিপুল সমাগম ঘটিয়ে সরকারকে ‘না’ বলে দেয়ার টার্গেট নেয়া হচ্ছে। অতীত আন্দোলনের অভিজ্ঞতায় দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, ঢাকায় জোরালো আন্দোলন ছাড়া সরকার পতন সম্ভব নয়।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, এক দফা ঘোষণাপত্রে থাকবে- সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি, নির্বাচনকাল নিরপেক্ষ সরকার গঠন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুনঃগঠন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তি, মিথ্যা ও গায়েবী মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশি সাজা বাতিল এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবিতে ১ দফা কর্মসূচি।

সমাবেশ সফলের লক্ষ্যে গতকাল সোমবার নয়াপল্টনে প্রস্তুতি সভা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষকদলসহ প্রায় সবগুলো অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সমাবেশ ঘিরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখন জমজমাট ও সরগরম। নয়াপল্টনে বুধবারের সমাবেশের জন্য পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে সোমবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে দেখা করেন। পরে খায়ের ভুঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে আমাদের বুধবারের সমাবেশের বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করেছি। আমরা সমাবেশ অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছি। আশা করি আমরা অনুমতি পাব।”

এছাড়াও কূটনৈতিকসহ বিভিন্ন মহলেও তৎপরতা বাড়িয়েছে দলটি। এমনিতেই পশ্চিমা কূটনীতিকদের অবস্থান বিরোধীদের পক্ষে রয়েছে। এর পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল যখন ঢাকায়, ঠিক তখনই সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে বিএনপি। আসলে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের চূড়ান্ত ঘোষণার জন্য ১৫ জুলাই দিনটি ঠিক করে রেখেছিল রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। সূত্র বলছে, হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত বদল করা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন বিষয়ক প্রতিনিধিদল ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরকে ঘিরেই এমন পদক্ষেপ। নতুন করে বেছে নেওয়া হয় ১২ জুলাই দিনটিকে। কেননা সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিএনপি বিদেশি প্রতিনিধিদের কাছে বার্তা পৌঁছাতে চায় যে, তারা এই সরকারের পতনের আন্দোলনে চূড়ান্ত ধাপে নেমেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এ সরকারের যে সময় শেষ তা আগামীকাল জনসমাগমের মধ্য দিয়ে দেখতে পাবেন। এখন থেকে সরকারকে কোন ছাড় দেয়া হবে না।’বিএনপি সূত্র দাবি করেছে, রাজধানী ঢাকার বাইরের আশেপাশের জেলাগুলো থেকেও আগামীকাল নেতাকর্মীরা যোগ দিবেন। সমাবেশটি নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে মহাসমাবেশে রূপ নিবে। ১ দফা ঘোষণার মধ্য দিয়ে আন্দোলনের তৃতীয় ঢেউ তৈরি হবে।

এরআগে শনিবারের এক ঘণ্টার এক বৈঠকে ১২ জুলাই দিনটিকে ঠিক করা হয় একদফা ঘোষণার সমাবেশের জন্য। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও জেলা ও অঙ্গসংগঠনের একজন শীর্ষ নেতা ছিলেন বৈঠকে। এ বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, চলমান আন্দোলনকে গণআন্দোলনে রূপ দিতে বিরোধী দলগুলোকে এক মঞ্চে নিতে চায় তার দল।

বিএনপির সমমনা দলগুলোও তৎপর। বিগত সময়ে সমমনা দলগুলো যেখানে কর্মসূচি পালন করেছে এবারও তারা প্রায় একই স্থান থেকেই একদফার ঘোষণা দেবেন। তবে জামায়াতে ইসলামী ওইদিন একদফা ঘোষণা দেবেন কিনা তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দলটির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ওইদিন ঘোষণা না দিলেও তারা একদফাকে সমর্থন জানাবে। একইদিন না হলেও দাবি আদায়ে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে তারা।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights