আজ ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ২০শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

আইসিসি কি শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার করতে পারবে

  • In শীর্ষ
  • পোস্ট টাইমঃ ৮ জুলাই ২০২৩ @ ১২:২৩ পূর্বাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ৮ জুলাই ২০২৩@১২:২৩ পূর্বাহ্ণ
আইসিসি কি শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার করতে পারবে

।।বিডিহেডলাইন্স ডেস্ক।।

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারে সংগঠিত অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সফরে রয়েছেন সংস্থাটির প্রধান প্রসিকিউটর করিম আসাদ আহমেদ খান। সম্প্রতি তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকও সেরেছেন। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, করিম আসাদ রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের পক্ষে সাক্ষ্য ও তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করবেন এই সফরে। এখন প্রশ্ন হলো আইসিসি শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার করতে পারবে কিনা। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রায় বাস্তবায়ন নির্ভন করবে মিয়ানমারের সদিচ্ছার ওপর।

মিয়ানমারে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে সেখান থেকে পালিয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ২০১৭ সালে। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর ফাতো বেনসোদা সংস্থাটির প্রি-ট্রায়াল চেম্বারে একটি আবেদন করেন। এই আবেদনে তিনি আইসিসির বিচারিক ক্ষমতার আওতার মধ্যেই এই অপরাধের বিষয়ে তদন্ত শুরুর আহ্বান জানান। এর অংশ হিসেবে একই বছরের ১৪ই নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের বিষয়ে পূর্ণ তদন্তের অনুমোদন দেয়।

১৯৯৮ সালে রোম সনদের আওতায় প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত সাধারণত যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা এবং আগ্রাসনের মতো অপরাধের বিচার করে থাকে। তবে যেসব দেশ রোম সনদের অনুমোদন দেয় বা এই সনদে সই করেছে সেসব দেশে সংগঠিত অপরাধেরই বিচার করতে পারে এই আন্তর্জাতিক আদালত। রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের বিষয়টির সাথে দুটি দেশ জড়িত। প্রথমত এই অপরাধ সংগঠিত হয়েছে মিয়ানমারে। আর নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ রোম সনদে সই করলেও মিয়ানমার করেনি। ফলে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের এই ঘটনা আইসিসির বিচারিক ক্ষমতার আওতাভূক্ত নয় কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। এমন পরিস্থিতিতেই আবেদন করেন সংস্থাটির প্রধান প্রসিকিউটর ফাতো বেনসোদা। তিনি তার আবেদনে যুক্তি তুলে ধরে বলেন যে, যেহেতু এই ঘটনা শেষ হয়েছে বাংলাদেশে এসে এবং বাংলাদেশ আইসিসির সদস্য তাই এই অপরাধের তদন্তের ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। পরে তার এই আবেদন গ্রহণ করে আইসিসি।

তবে, রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের বিষয়ে আইসিসির শুরু করা এই তদন্ত এখনো বিচার-পূর্ব অবস্থা বা প্রি-ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানান আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ রায়হান রশীদ। তিনি বলেন,কয়েক ধাপে আইসিসিতে একটা ইনভেস্টিগেশন ইনিশিয়েট হয়, কেস না কিন্তু, কেস আরো পরের বিষয়। পুরো রোহিঙ্গা ইস্যুটা এখনো প্রি-ট্রায়াল স্টেজে আছে, এখনো ফুল ট্রায়াল স্টেজে যায়নি।

রায়হান বলেন, তদন্ত শেষে এটির বিচার শুরু হবে। বিচারের পর আপিলের বিষয়টিও রয়েছে। এই পুরো প্রক্রিয়া কতদিন ধরে চলবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। আদালত নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে যে তারা কতদিন ধরে এটা পরিচালনা করবে। অনেক ক্ষেত্রে এটি সাত-আট বছর ধরে চলতে পারে। আবার খুব দ্রুতই শেষও হয়ে যেতে পারে।

চলমান তদন্ত শেষে দুটি ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানান মি. রশীদ। একটি হচ্ছে, প্রসিকিউটর বলতে পারেন যে, অপরাধের কোন তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে এটি আর সামনে আগাবে না। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে প্রসিকিউটর কয়েক জনের নাম উল্লেখ করে আইসিসিতে জমা দিতে পারেন। এমন অবস্থায় আইসিসি জড়িতদের নামে প্রথমে সমন জারি করবেন। আর তারা এতে সাড়া না দিলে পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করবেন। তবে আইসিসিতে অভিযুক্তরা হাজির হবে কি না সেটা পুরোপুরিই নির্ভর করবে মিয়ানমারের সহযোগিতার উপরে। তারা সারেন্ডার করবে কি না, তারা আসবে কি না কোর্টের সামনে- সেটা পুরোপুরি মিয়ানমারের উপর ডিপেন্ড করে, বলেন রায়হান রশীদ।

কারণ মিয়ানমার রোম সনদে সই না করার কারণে তারা আইসিসির নিয়ম মানতে বাধ্য নয়। একই কারণে তারা আইসিসিকে সহযোগিতা করতেও বাধ্য নয়। আর এটিই রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের ঘটনার বিচার করার পথে আইসিসির সামনে সবচেয়ে বড় বাধা।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights