।।নিজস্ব প্রতিবেদক।।
সিন্ডিকেটের ফাঁদ থেকে বেরুতে পারছেনা চামড়ার বাজার। টানা দর পতনের পর গত বছর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ৭ টাকা বাড়ানোর পর এবার আরও ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তারপরও বাজার সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এবারও বগুড়ায় ছাগলের চামড়া বেচা বিক্রি হয়নি। ছাগলের চামড়া বিনা পয়সাতেও কেউ নিতে চায়নি। ফলে ছাগল কোরবানিদাতারা ছাগলের চামড়া ফেলে দিয়েছে ভাগারে। তবে চামড়া ব্যবসাযীরা বলছেন, এবার তারা সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনেছেন।
এক দশক আগেও বগুড়ায় গরুর চামড়ার দাম গড়ে ১৫শ’ থেকে ২হাজার টাকা ছিলো। এরপর দাম পড়তে থাকে। ২০১৬সাল থেকে ইউরোপে চামড়া রফতানি কমে যাওয়ায় গত ২০১৭সালের পর থেকে চামড়ার দাম কমতে থাকে। করোনার সময় এই দাম আরও কমে যায়। গরুর চামড়ার দাম ৪শ’ থেকে ৫শ’ তে নেমে আসে। মাঠ পর্যায়ে এই দাম ৩’শ থেকে ৪’শ টাকায় বেচাকেনা হয়।
বগুড়া শহরের চামড়াপট্টি, থানামোড়, বাদুড়তলা, চেলোপাড়া, চকসুত্রাপুর, চকযাদু ক্রসলেন, শহরের বাহিরে ঠনঠনিয়া, কলোনি, বনানী, মাটিডালি, শাকপালাসহ কমপক্ষে অর্ধশত স্পটে কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করেছেন ব্যবসায়ীরা। রিক্সা-ভ্যান, অটোরিক্সা ও ভটভটি যোগে চামড়া নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া নিয়ে আসেন মৌসুমীরা। বগুড়া শহরের মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া বেঁচেছেন চকসুত্রাপুর রাস্তার দু‘পাশে গড়ে ওঠা অস্থায়ী কাঁচা চামড়ার দোকানগুলোতে। মৌসুমি ব্যবসায়ী এবং আড়তদারেরা গত বছর যে দামে চামড়া কিনেছেন, এবারও সেই দামে কিনছেন। অনেক স্থানে চামড়া কেনার জন্য কেউ যাননি। যারা চামড়া বিক্রি করতে বের হয়েছেন, তারা বিভিন্ন স্থানে ঘুরে কাঙ্খিত দাম পাননি। আড়তদারেরা সিন্ডিকেট করে দাম নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ চামড়া বেচতে আসা লোকজনের।
বগুড়া শহরের সুত্রাপুরের মৌসুম চামড়া ব্যবসায়ী রাজিব জানান- তিনি ঈদের দিন এক লাখ টাকার কম দামের গরুর চামড়া তারা কিনেছেন ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ টাকা এবং এক লাখের উপর দামের গরুর চামড়া কিনেছেন ৫শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা তার বেয়ে বেশি দামের গরুর চামড়া ৬ শ’ ৭শ টাকা দরে কিনেছেন। এই চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে স্বল্প লাভে বেঁচেছেন। আরও কয়েকজন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী জানান- বাড়ি ঘুরে ঘুরে চামড়া কিনে সিন্ডিকেটের কারণে লাভ কতে পারেননি। এদিকে বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলা থেকে বগুড়ায় চামড়া নিয়ে আসা ব্যবসায়ীরা জানান- থানা মোড় এলাকায় ভটভটি আটকানোর কারণে এক রকম জোর করে কম দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।
শহরতলির নারুলী নাটাইপাড়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল হুদা জানান তার লাখ টাকার গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন ৬শ টাকায়। তিনি বলেন- বেশি দামে চামড়া বিক্রি করতে না পারায় গরীবদের হক আদায় করতে পারবেন না। এতিমখানাতেও দিতে পারবেন না। বগুড়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি একেএম আসাদুজ্জামান খান বলেন- তারা ভালো দামে চামড়া কিনেছেন। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে কিনেছেন। পাড়া মহল্লায় মৌসুমী ক্রেতারা কম দামে কিনলে বা কোন কোরবানিদাতা কম দামে বিক্রি করলে তাদের করার কিছু নাই। মৌসুমী ব্যবসায়ীদের তারা ভালো দাম দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন- নগদ টাকার সংকটের কারণে অনেক ব্যবসায়ী ঝুঁকি নিয়ে চামড়া কিনেছেন। এবার তারা সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনেছেন। এপর্যন্ত বগুড়ায় কত চামড়া কেনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- তারা এখনো হিসাব করেন নি। দুই একদিন পর সব ব্যবসায়ীর কাছে খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে জানা যাবে।
বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের অন্যান্যস্থানেও চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। এবারও সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে চামড়ার বাজার। আর ছাগল ও ভেড়ার চামড়ার কোনো ক্রেতাই ছিল না। তাই এসব চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেকেই মাটিতে পুঁতে রাখেন। আবার অনেকে এতিমখানা সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসায় দিয়ে আসেন।