আজ ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ২০শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

মেলেনি চামড়ার প্রত্যাশিত দাম, ক্ষতিগ্রস্ত মাদ্রাসা ও এতিম খানা

  • In শীর্ষ
  • পোস্ট টাইমঃ ৩০ জুন ২০২৩ @ ০৮:১৪ অপরাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ৩০ জুন ২০২৩@০৮:১৪ অপরাহ্ণ
মেলেনি চামড়ার প্রত্যাশিত দাম, ক্ষতিগ্রস্ত মাদ্রাসা ও এতিম খানা
ছবি- বিডিহেডলাইন্স

বিশেষ প্রতিবেদক

চলতি বছর দেশে কোরবানির চামড়ার দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তবে দাম গতবছরের তুলনায় খুব একটা বেড়েছে বলে খবর পাওয়া যায়নি। যার কারণে মাদ্রাসা ও এতিমখানার মতো প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। কেননা তাদের আয়ের একটি অন্যতম উৎস কোরবানির পশুর চামড়া। এতিমখানা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার তারা গতবারের তুলনায় কিছুটা কম চামড়া সংগ্রহ করেছেন। আর দামও ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৭৫০টাকার মধ্যেই উঠানামা করেছে। যার কারণে খুব একটা আয়ের মুখ তারা দেখতে পারেননি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, এ বছর সারা দেশে ঈদ-উল আযহা উপলক্ষ্যে এক কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি পশু কোরবানি হয়েছে। এরমধ্যে ৪৫ লাখ ৮১ হাজার ৬০টি গরু। বাকি পশুদের মধ্যে মহিষ, ছাগল ও ভেড়া উল্লেখযোগ্য। গত বছরের তুলনায় এবার ৯১ হাজারের বেশি পশু কোরবানি করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি পশু কোরবানি হয়েছে ঢাকা বিভাগে। প্রতিটি গরুর চামড়া গড়ে ৬০০ টাকা করে হিসাব করলেও দেশে এবার শুধু গরুর চামড়ার বাজারের আকার ২৭৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকার বেশি। সরকার এবছর লবণযুক্ত চামড়ার দাম ঢাকায় প্রতি বর্গফুট ৫০-৫৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও বাস্তবে বিক্রি করতে গিয়ে এর চেয়ে কম দাম পেয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ।

রাজধানী ঢাকার তেজতুরী বাজার এলাকায় অবস্থিত রহমতে আল ইসলাম মিশন এতিমখানার সুপারিনটেনডেন্ট মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে ১৩০০ মতো ছেলে-মেয়ে আবাসিকভাবে পড়াশুনা করেন। এদের কারো কাছ থেকেই বেতন বা থাকা-খাওয়ার খরচ নেন না তারা। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় আট শতাধিক শিক্ষার্থী এতিম। পুরো প্রতিষ্ঠানটির অর্থের বড় যোগান আসে সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকজনের সার্বিক সহযোগিতা এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট থেকে। খরচের কিছু অংশ আসে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থ থেকে, যদিও এর পরিমাণ বর্তমানে খুবই কম। তিনি আরও বলেন, এবছর ৯৫৮টি চামড়া শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করেছেন তারা। এসব চামড়া প্রতিটি ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন তারা। “এবছর আমরা হয়তো সাত লাখের মতো হয়তো সাড়ে সাত লাখ পাবো আরকি। এবছর তেমন একটা আয় হয়নি,” বলেন তিনি। এই আয় এই প্রতিষ্ঠানটির মোট বার্ষিক খরচের তুলনায় খুবই নগন্য বলে জানান তিনি।

গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের কোরবানির ঈদে তাদের সংগ্রহে ছিল ১০১২টি চামড়া। তবে সেবছরও দাম অনেকটা একই রকম গেছে বলে জানিয়েছেন নজরুল। কত বছর আগে চামড়ার দাম ভাল পেয়েছেন জানতে চাইলে মি. ইসলাম বলেন, চার-পাঁচ বছর আগে তারা চামড়ার বেশ ভাল দাম পেয়েছেন। সেসময় প্রতিটা চামড়া তারা দুই হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২৩০০-২৪০০ করে বিক্রি করেছেন বলে জানান। “ওই সময় যা হইতো(টাকা) এখন তো তার অর্ধেকও পাওয়া যায় না।” তিনি বলেন, “এসময়(কোরবানির সময়) আমরা ১৮ লাখ, ১৬ লাখ, এই রকম বেশিও পাইতাম আরো। এখন তো কয়েকটা বছর ধইরা এতো আপনার দাম কম, একেবারেই কম। দাম তো বেশি যাইতেছে না।”

রাজধানীর আজিমপুরে অবস্থিত স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা। এই প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ মাহমাদুল এহসান বলেন, বর্তমানে তাদের অধীনে ১৪০ জনের মতো ছেলে মেয়ে রয়েছে। এবছর তারা একেবারেই চামড়া সংগ্রহ করতে পারেননি। যেখান থেকে খবর পেয়েছেন সেখান গিয়ে নিয়ে এসেছেন চামড়া। তবে সেটাও হাতে গোনা কিছু। তাদের সংগ্রহ করা চামড়ার পুরোটাই গরুর চামড়া। এহসান জানান, যে চামড়া তারা সংগ্রহ করেছিলেন সেগুলো বিক্রিও করেছেন খুব কম দামে। “খুব বেশি দামে বিক্রি করতে পেরেছি এমন না। চারশ, সাড়ে চারশ এমন দামে চামড়া বিক্রি হয়েছে(প্রতিটি গরুর চামড়া)। ” তিনি জানান, বর্তমানে চামড়া সংগ্রহ কমে যাওয়ার নানা রকম কারণ রয়েছে। এছাড়া মাদ্রাসা এবং এতিমখানা শহরের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠার কারণে একই এলাকায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চামড়া ভাগ হয়ে যাচ্ছে। ফলে কমে যাচ্ছে পরিমাণ। আর এর সাথে পাল্লা দিয়ে কমেছে চামড়ার দামও। এহসান বলেন, চার-পাঁচ বছর আগেও তারা বেশ চড়া দামে চামড়া বিক্রি করেছেন। চামড়া থেকে লাখ টাকা আয় হলেও সেটি কমে এখন হাজারে নেমে এসেছে। “চামড়া থেকে আমার তেমন টাকা আসতেছে না। খুব সামান্য আসতেছে,” বলেন তিনি।এতিমখানা পরিচালনায় যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে সেটি পূরণ করতে এই মাদ্রাসার কিছু নিজস্ব সম্পত্তি ও দোকানপাট ভাড়া দেয়া হয়েছে যেটি থেকে কিছুটা আয় আসে। এছাড়া দান থেকে এতিমখানা পরিচালনার কিছু অর্থ আসে যার উপর নির্ভর করতে হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।

মুহাম্মদিয়া জামিয়া শরিফ মাদ্রাসা ইয়াতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং- প্রতিষ্ঠানটি রাজারবাগ দরবার শরীফের অধীনে পরিচালিত হয়। এই দরবার শরীফের মুখপাত্র মোহাম্মদ মাহবুব আলম বলেন, কোরবানির চামড়ার দাম কমে যাওয়ার কারণে মাদ্রাসা ও এতিমখানার বরাদ্দ কমে যায় অনেক ক্ষেত্রে।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির টাকাটা ব্যবহার করা হয় মূলত এতিমখানার শিশু ও দুস্থ শিক্ষার্থীদের বিনাবেতনে পড়াশুনার খরচ চালানোর জন্য। কোরবানির চামড়া বিক্রির টাকা বেশি হলে এসব খাতে বরাদ্দ বাড়ে। ফলে বেশি পরিমাণে দুস্থ ও এতিম শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। আর এই আয় কমে গেলে এই খাতে বরাদ্দ কমে যায়। মাহবুব বলেন, গ্রামাঞ্চলে যে ছোট ছোট মাদ্রাসা ও হেফজখানা থাকে, সেসব প্রতিষ্ঠানেরও আয়ের একটি বড় অংশ আসে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির টাকা থেকে। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের খরচ খুব একটা বেশি হয় না। কিন্তু চামড়ার দাম কমে যাওয়ার কারণে এধরণের প্রতিষ্ঠানের আয় কমে গিয়ে সেগুলোর অনেকগুলো বন্ধ হয়ে গেছে বলেও তারা জানতে পেরেছেন।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights