।।বিশেষ প্রতিবেদক।।
ঈদকে কেন্দ্র করে সড়কে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। বাসটার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেল স্টেশন ও ফেরিঘাটে উপচে পরা ভীড়। অবশ্য ঈদ যাত্রায় উৎসবের আমেজ থাকলেও বাদ সেধেছে বৃষ্টি ও যানজট ভোগান্তি। ফলে পথে পথে ভোগান্তি নিয়েই বাড়ি ফিরেছে মানুষ। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য বলছে, এবারের ঈদে ঢাকা ছাড়বে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ। এরমধ্যে ২৬ ও ২৭ জুন দুই দিনে গড়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ মানুষ রাজধানী ছাড়বে। এছাড়া ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ আশেপাশের অঞ্চল থেকে এক কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে। এবং এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরও প্রায় চার কোটি মানুষ ঈদে বাড়ি যেতে পারে। এছাড়া মোটরসাইকেলে রাজধানীর ৮ থেকে ১০ লাখ বাইকার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে পারে। তবে সড়কপথে ৮ থেকে ১০ লাখ, নৌপথে ৮ থেকে ১০ লাখ ও রেলপথে দেড় লাখ যাত্রীর যাতায়াতের সক্ষমতা আছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘরমুখো মানুষ যানজট ও বৃষ্টির কবলে পড়ছেন। তবে নৌপথে তেমন একটা চাপ দেখা যায়নি।
সোমবার থেকে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। ফলে ওই দিন সন্ধা থেকেই ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়ে যায়। মঙ্গলবার সকাল থেকে এই চাপ আরও বাড়তে থাকে। যারা অগ্রিম টিকেট কেটেছিলো তারা কিছুটা নিশ্চিন্তে থাকলেও ভোগান্তিতে পড়ে অন্য যাত্রিরা। এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। ফলে যানজট, পরিবহনের টিকেট সংকট ও বৈরী আবহাওয়া যাত্রিদের গুনতে হয়েছে বাড়তি ভাড়া। সবচে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে সড়ক পথের যাত্রিরা। যানজটের কারণে চন্দ্রা, গাজিপুরসহ বিভিন্ন মহাসড়কে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজট দেখা গেছে। এছাড়া ট্রেনে ছাদেও ছিলো যাত্রিদের ভির। কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা জামালপুর ও রাজশাহির কমিউটার ট্রেন কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসার পর বিমামবন্দর স্টেশনে দেড় থেকে দুই ঘন্টা পর্যন্ত থামানো ছিলো। এসময় ট্রেনের সবজায়গায় যাত্রিতে ঠাসা ছিলো।
ট্রেন থামা মাত্র সবাইকে হুরহুরি করে ট্রেনে উঠতে দেখা গেছে। মঙ্গলবার রাজধানীর গাবতলি টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, ঈদে প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ফিরছেন ঘরমুখো মানুষ। আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ও গাবতলী হাটের কারণে সড়কে যানবাহনে ধীরগতি দেখা গেছে। সিগনাল পড়লেই লেগে যায় যানজট। টেকনিক্যাল থেকে গাবতলী পার হতে সময় লাগছে প্রায় ঘণ্টাখানেক। এত যানবাহনের চাপ সামাল দিয়ে ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। মঙ্গলবার (২৭ জুন) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর টেকনিক্যাল মোড়, মাজার রোড, গাবতলী রজব আলী মার্কেট, গাবতলী আন্তর্জাতিক বাস টার্মিনাল ও গাবতলী পর্বত সিগনালসহ প্রত্যেকটি পয়েন্টে আটকে যাচ্ছে গাড়ি। একটি পয়েন্ট ক্লিয়ার করতে বাকি পয়েন্টে থমকে যাচ্ছে যানবাহন। প্রত্যেক পয়েন্টে থামছে যাত্রীবাহী বাস। এছাড়া কাউন্টারের সামনে সারি সারি গাড়ি পার্কিং করা অবস্থায় দেখা যায়। হাজারো যাত্রী বৃষ্টি উপেক্ষা করে কর্দমাক্ত রাস্তায় হেঁটে সড়কেই ভাড়া নিয়ে দর কষাকষি করে উঠে পড়ছেন যানবাহনে।
অনেককে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় কাঙ্খিত ও গন্তব্যের যানবাহনের জন্য। রাজধানী টেকনিক্যাল, মাজার রোড, রজব আলী মার্কেট এবং পর্বত সিগনালে যানবাহন ও হাটে আসা যাত্রীর চাপ অনেক বেশি। যানজট দেখা গেছে গুলিস্থান, সায়েদাবাদ ও মহাখালি বাসটার্মিনালেও।
নৌপথ: সড়ক ও রেলপথে ঘরমুখো মানুষের চাপ থাকলেও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের চিত্র একটু ভিন্ন। সকাল থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত টার্মিনালে যাত্রীর উপস্থিতি এতটাই কম যে, নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে না লঞ্চগুলো। তবে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঈদের ছুটি হয়েছে মঙ্গলবার। সে কারণে বিকেল থেকে যাত্রীদের সন্ধা পর্যন্ত টার্মিনালে চাপ বাড়তে থাকে। লঞ্চের ছাদেও যাত্রি ঠাসা দেখা গেছে।
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) রেজাউল করিম: রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাটে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের চাপ বাড়লেও ঘাট এলাকায় কোনো দুর্ভোগ নেই। মানুষ নদী পার হয়ে বিভিন্ন যানবাহনে নির্বিঘ্নে তার গন্তব্যে যেতে পারছে। মঙ্গলবার (২৭ জুন) সকালে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ঘাট এলাকায় ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের চাপ রয়েছে। পাটুরিয়া ঘাট থেকে ফেরি অথবা লঞ্চে যাত্রীরা দৌলতদিয়া ঘাটে আসছে। যাত্রীরা কোনো ভোগান্তি ছাড়াই ফেরি অথবা লঞ্চে দৌলতদিয়া ঘাটে আসছে। এদিকে কোনো ঝামেলা ও ভোগান্তি ছাড়াই দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক পার হতে দেখা গেছে। যাত্রীবাহী যানবাহনের পাশাপাশি অধিক মটরসাইকেল পারাপার হতে দেখা গেছে। লঞ্চগুলোও পাটুরিয়া ঘাট থেকে যাত্রী বোঝাই করে দৌলতদিয়া ঘাটে আসছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে দুই ঘাটেই যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকে। রবিন বিশ্বাস নামের এক যাত্রী বলেন, ঈদের ছুটিতে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাচ্ছি। পরিবহনের টিকিট না পেয়ে গাবতলী থেকে বাসে পাটুরিয়া পর্যন্ত সেলফি পরিবহনে এসেছি। তারপর লঞ্চে নদী পার হয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে এসেছি। এই পর্যন্ত আসতে কোনো ঝামেলা হয়নি। তবে যানবাহনগুলো অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে।
ঈদযাত্রায় সড়ক ও নৌপথের বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে বলে অভিযোগ করে অনতিবিলম্বে ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, জেলা প্রশাসনের ভ্রামমাণ আদালতের তৎপরতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। মঙ্গলবার সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ দাবি জানান। তিনি বলেন, টিকিট অব্যবস্থাপনা, কালোবাজারি, অপরিকল্পিত যানবাহন ব্যবস্থাপনাসহ নানা ক্ষেত্রে গলদ থাকায় যাত্রীরা পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে বিআরটিএ ও বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে প্রতিবছর ঈদে গতানুগতিক পদ্ধতিতে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হলেও প্রকৃতপক্ষে কোথাও তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের পথে বিভিন্ন রুটে সোমবার থেকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া নেয়া হয়। মঙ্গলবার সকাল থেকে এ ভাড়া আরও বাড়তি আদায় করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে ভোলা, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীসহ উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীদের থেকে দিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। নৌপথেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে প্রশাসনের কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।