।।ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক।।
সমুদ্রের তলদেশে ডুবোজাহাজ টাইটানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ার পর উদ্ধার অভিযানের মূল মনোযোগ এখন ঘুরে গেছে। কিভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে তা বোঝাপড়ার জন্যই এখন চলবে উদ্ধার তৎপরতা।
মার্কিন নৌবাহিনীর রিয়াল অ্যাডমিরাল জন মগার বলেছেন, তারা যা খুঁজে পেয়েছেন সেগুলো ‘বিপর্যয়কর বিস্ফোরণের’ সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন ধ্বংসাবশেষগুলো মূলত দুই ধরনের। একটি টাইটানের লেজের দিকের অংশ এবং অপরটি টাইটানের অবতরণকারী কাঠামো। এথেকে ধারণা করা হচ্ছে সাবমেরিনটি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।
এমন কেন হয়েছে এবং তা ঠেকাতে কী করা উচিত ছিল তা জানতে কর্তৃপক্ষ সম্ভব সবকটি ধ্বংসাবশেষের টুকরো সংগ্রহ করবেন বলে জানিয়েছেন, ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর সাবেক সাবমেরিন ক্যাপ্টেন রায়ান রামসে।
সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, সাবমেরিনে কোনো ব্ল্যাক বক্স নেই, ফলে জাহাজটির শেষ মুহূর্তের গতিবিধি শনাক্ত করা সম্ভব হবে না। এর বাইরে বিমান দুর্ঘটনার পর যে ধরনের উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয় তার বাইরে এই অভিযানের বড় কোনো অসামঞ্জস্য নেই।
রায়ান রামসে জানান, তদন্তকারীরা যখন খুঁজে পাওয়া টুকরোগুলো ওপরে তুলে আনবেন, তখন তারা সেগুলোর মধ্য থেকে কার্বন ফাইবারের কাঠামোর ভেঙে যাওয়া অংশ বের করবেন। এথেকে তার শেষ মুহূর্তে টাইটানের সঙ্গে যা ঘটেছে তা জানতে পারবেন। প্রতিটি টুকরো মাইক্রোস্কোপে রেখে নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করা হবে। দেখা হবে কার্বন তন্তুগুলো কোনদিকে মুখ করে ভেঙেছে, ছিদ্র দেখা হবে সেখান থেকে ধারণা পাওয়া যাবে ঠিক কোন জায়গা থেকে ভেঙেছে।
সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নের উত্তর তদন্তকারীরা পাওয়ার চেষ্টা করবেন তাহলো কোনো অবকাঠামো ব্যর্থতার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে কিনা। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে ডুবোজাহাজটি পানির মারাত্মক চাপে পড়েছিল। এই চাপ একটা আইফেল টাওয়ার যে পরিমাণ চাপ দিতে পারে তার সমান বলে মনে করেন ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটনের অধ্যাপক ব্লেয়ার থ্রনটন। তিনি বলেন, ‘আমরা শূল ভবন ধসে পড়ার মতো খুবই শক্তিশালী বিস্ফোরণ নিয়ে কথা বলছি’।
জরুরি প্রশ্ন হলো এটা যদি হয়ে থাকে তার আসল কী? সাবমেরিনটি পরীক্ষায় কোনো ত্রুটি ছিল? কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ সেই প্রশ্নও তুলছেন।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক রদ্রিক এ স্মিথ বলেন, কার্বন তন্তু ভেঙে যেতে পারে নির্মাণের সময় এর অভ্যন্তরীণ ত্রুটির কারণে। কার্বন তন্তু এবং টাইটেনিয়ামের জোড়ার জায়গাগুলো ভালোভাবে পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে।
পরবর্তী তদন্তের নেতৃত্ব কোন সংস্থার হাতে থাকবে তা এই পর্যায়ে এখনো স্পষ্ট নয়। ডুবোজাহাজ নিয়ে এই ধরনের ঘটনার খুব বেশি নজিরও নেই। মার্কিন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা জন মগার বলেন, এট বিশেষ জটিল বিষয় কারণ ঘটনাটি ঘটেছে সমুদ্রের দুর্গম অংশে আর ঘটনায় বহু ভিন্ন জাতীয়তার মানুষ জড়িত।
তবে ঘটনার শুরু থেকে মার্কিন কোস্টগার্ড এখন পর্যন্ত এই অভিযানে মূল ভূমিকা রেখেছে, সেকারণে তারাই এই ভূমিকা অব্যাহত রাখতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে।