আজ ১৪ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ৬ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

সাংবাদিক নাদিম হত্যার নেপথ্যঃ বাবুর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ

  • In অনুসন্ধান, গণমাধ্যম
  • পোস্ট টাইমঃ ১৬ জুন ২০২৩ @ ০৬:০১ অপরাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ১৬ জুন ২০২৩@০৬:০১ অপরাহ্ণ
সাংবাদিক নাদিম হত্যার নেপথ্যঃ বাবুর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ

।। নিজস্ব প্রতিনিধি।।

জামালপুরের বকশিগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহামুদুল আলম বাবুর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্ত্রী, সন্তান ও সহকর্মীবৃন্দ। তিনি এর আগেও নানাভাবে আক্রমণ ও হেনস্তা করার চেষ্টা করেছেন বলে জানান স্ত্রী মনিরা বেগম।

২৪ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানসহ এ ঘটনায় জড়িত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নিহতের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন।

বৃহস্পতিবার (১৫জুন) দুপুর আড়াইটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিক নাদিমের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়। এর আগে, বুধবার (১৪জুন) রাত ১০ টার দিকে বকশীগঞ্জ উপজেলার পাটহাটি এলাকায় হামলার শিকার হন তিনি।

নিহতের সহকর্মীরা জানান- বুধবার অফিসের কাজ শেষে রাত ১০ টার দিকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম ও তার সহকর্মী আল মুজাহিদ বাবু। পথে বকশীগঞ্জ পাথাটিয়ায় পৌঁছালে সামনে থেকে অতর্কিত আঘাত করে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে তাকে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর দেশীয় অস্ত্রধারী ১০-১২জন দুর্বৃত্ত তাকে সড়ক থেকে মারধর করতে করতে টেনেহিঁচড়ে অন্ধকার গলিতে নিয়ে যায়। তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। সে সময় সহকর্মী মুজাহিদ তাদের আটকাতে গেলে তাকেও মারধর করে দুর্বৃত্তরা। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় সহকর্মী মুজাহিদ ও নাদিমকে স্থানীয়রা হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু আঘাত গুরুতর হওয়ায় সেখানকার চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।

বুধবার রাত ১০ টার দিকে বকশীগঞ্জের পাথাটিয়ায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বুথের সামনে ঘটে যাওয়া ওই নৃশংস হামলার বর্ণনা দেন সাংবাদিক নাদিমের সহকর্মী আল মুজাহিদ বাবু। তিনি বলেন- সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর অপকর্ম নিয়ে নাদিমসহ আমরা কয়েকজন নিউজ করেছিলাম। তারপর থেকেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন আমাদের উপর। পরে আমাদের নামে ডিজিটাল আইনে মামলাও করেন তিনি। সেই মামলা গতকাল ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল খারিজ করে দিয়েছেন। এ নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছিল। এর দুই তিন ঘণ্টা পর রাতে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে নাদিমের ওপর হামলা হয়।

তিনি আরো বলেন- নাদিমকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। তারপর তাকে মারতে মারতে পাশের একটি অন্ধকার গলিতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবুর লোকজন। ঘটনার সময় ওই গলিতে অন্ধকারে আড়ালে দাঁড়িয়েছিলেন চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবু। সেসময় তার ছেলে ফয়সাল, রিফাত, রেজাউল, মনির, সাইদসহ আরও কয়েকজন ছিলেন। মারধরের সময় আমি আটকাতে গেলে আমাকেও তারা মারধর করেন। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী চলে যায়। পরে নাদিমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

১০মে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। এ নিয়ে বাংলানিউজে ‘‘দুইবার বিয়ের পরও সন্তান-স্ত্রীকে অস্বীকার করছেন ইউপি চেয়ারম্যান” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে ১৪মে তার স্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে ‘আমি আমার স্বামী চাই, একসঙ্গে সংসার করতে চাই’ শিরোনামে বাংলানিউজে আরও একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

পরে ২০মে সাবিনা ইয়াসমিন তার স্বামী মাহমুদুল আলম বাবুকে আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কার অথবা পদ থেকে তার অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। বাবু জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ নিয়েও বাংলানিউজে “আ.লীগ থেকে স্বামীর বহিষ্কার চেয়ে স্ত্রীর আবেদন” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।

এর আগে গত ১৪মে ময়মনসিংহ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে জামালপুরের নাদিমসহ দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। ১৪জুন আদালত মামলাটি খারিজ করেন।

নিহত সাংবাদিক গোলাম রাব্বানীর স্ত্রী মনিরা বেগম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন- সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম তার (গোলাম রাব্বানী) ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। আগেও তিনি নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করেছেন। ওই ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজনই হামলা করে তাকে হত্যা করেছেন। তিনি এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামালপুরের পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন- নিহত সাংবাদিকের ওপর হামলাকারীদের সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশের পাঁচটি দল মাঠে কাজ করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে। ওই সাংবাদিকের স্বজনেরা ব্যস্ত থাকায় এখনো থানায় মামলা হয়নি।

এর আগেও জামালপুরে বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমের ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট গোলাম রাব্বানী নাদিমের ওপর হামলা হয়। ১১এপ্রিল রাত সাড়ে ১০ টার দিকে বকশীগঞ্জ উপজেলার মধ্যবাজার এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। সেসময় স্থানীয়রা জানায়, পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফিরছিলেন সাংবাদিক নাদিম। পথে মধ্যবাজার এলাকায় পৌঁছালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগমের সমর্থক যুবলীগনেতা শামীম খন্দকার, স্বপন মণ্ডল, শেখ ফরিদের নেতৃত্বে কয়েকজন তার ওপর হামলা করে। হামলাকারীরা তাকে মারধর করে। এতে আহত হলে তাকে উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম ওই হামলা নিয়ে বলেন, রাজাকার ইস্যুসহ আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করায় আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগমের নির্দেশে তার সমর্থক স্বপন, শেখ ফরিদ, শামীম আমার ওপর হামলা করে।

সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম খুনের ঘটনায় শোকাহত বাংলানিউজ পরিবার। বাংলানিউজের সম্পাদক জুয়েল মাজহার এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights