।।কূটনৈতিক প্রতিবেদক।।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের পাইলট প্রকল্প নিয়ে মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়কে জাতিসংঘ দূত টম এন্ডু যে ভাষায় মন্তব্য করেছেন তা এই সঙ্কট নিয়ে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে খাটো করেছে এবং অসম্মান প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ বিষয়টি জাতিসংঘকে জানাবে। আর এই সঙ্কট সমাধানের উদ্যোগ নিয়ে কারো বিরোধিতা করার কোনো কারণ থাকার কথা নয়। মিয়ানমারে যাওয়ার পর রোহিঙ্গারা যদি সেখানে অস্বস্তিবোধ করে, তবে আবার ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে। রোহিঙ্গাদের পাইলট প্রত্যাবাসন নিয়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূতের বক্তব্য এবং উদ্যোগটি সম্পর্কে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এমন মন্তব্য করেন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে, বাংলাদেশ পাইলট প্রত্যাবাসনের জন্য যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সেখানে অতি সম্প্রতি ৪টি রোহিঙ্গা পরিবার প্রত্যাবাসনে রাজি হয়ে ভাসানচর থেকে কক্সবাজারে আসলে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা তাদের খাবার বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় থেকে তাদের খাবার দেয়া হয়। বিষয়টি জানার পর জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার বাংলাদেশ প্রধান জোহানেস ভ্যান ডারকে গত মঙ্গলবার বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে বলা হয় চুক্তি অনুযায়ী শরণার্থী সংস্থা প্রত্যাবাসনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় এমন কিছু করার অধিকার রাখে না এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সে জন্য সতর্ক করা হয়। এরপরই মিয়ানমার মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার টম এন্ডু গত বৃহস্পতিবার জেনেভায় দেওয়া এক বার্তায় বলেন যে মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমিতে ফেরত যাওয়ার জন্য পাইলট প্রত্যাবাসনের নামে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ‘প্রতারণামূলক ও জবরদস্তিমূলক ব্যবস্থা’ ব্যবহার করছে। অবিলম্বে পাইলট প্রত্যাবাসন স্থগিত করা প্রয়োজন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রবিবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান যে প্রকৃতঅর্থে পাইলট প্রত্যাবাসন নিয়ে কী হচ্ছে, জাতিসংঘের র্যাপোর্টিয়ার প্রত্যাবাসন নিয়ে নেতিবাচক বক্তক্য দিল কেন, জাতিসংঘ কী প্রত্যাবাসনে বাধা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে? জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটি একটি ট্রায়াল হচ্ছে। এটি বড় ধরনের কোনও প্রত্যাবাসন নয়। এটি যদি সফল না হয়, তাহলে আমরা তাদেরকে ফেরত নিয়ে আসতে পারব। সেক্ষেত্রে এটির বিরুদ্ধে যাওয়ার আমরা কোনও যুক্তি দেখি না। রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় যাচ্ছেন। এটি দেখার জন্য জাতিসংঘের সঙ্গে যে প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেটি বলবৎ আছে। তবে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার সার্টিফিকেট নিয়ে রোহিঙ্গাদের যেতে হবে এ ধরনের কোনও চুক্তি করা হয়নি। কিন্তু আমাদের প্রচেষ্টা সম্পর্কে তাদের জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার টম এন্ডৃ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিনি মিয়ানমার-বিষয়ক র্যাপোর্টিয়ার। তার কার্যক্রম মিয়ানমারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। তিনি কক্সবাজার ঘুরে গেছেন। কিন্ত যে বিষয়গুলো তিনি বলেছেন এবং যে ভাষায় বলেছেন, এটি আমাদের প্রচেষ্টাকে খাটো করে এবং অসম্মান প্রকাশ করে। আমরা বিষয়টি জাতিসংঘকে জানাবো।
প্রত্যাবাসনে রাজি হওয়ায় রোহিঙ্গা ৪টি পরিবারকে বাংলাদেশের শরণার্থী সংস্থা খাবার দেয়নি এবং তারপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শরণার্থী সংস্থার প্রধানকে তলব করেছিল, এই জন্যই কী জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার জেনেভা থেকে পাইলট প্রত্যাবাসন নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য দিয়েছে? জানতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ৪ রোহিঙ্গা পরিবারের খাবার সরবরাহ বন্ধ করার বিষয়টি দু:খজনক। ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা রোহিঙ্গারা জাতিসংঘ থেকে খাবার পায়নি। জাতিসংঘের সদর দপ্তর এটি নজরে নেবে। পরবর্তীতে এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা যেন না ঘটে।