আজ ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

জামায়াতকে ঘিরে রাজনীতিতে নতুন মোড়

  • In শীর্ষ
  • পোস্ট টাইমঃ ১১ জুন ২০২৩ @ ১১:১৩ অপরাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ১২ জুন ২০২৩@১২:০৮ পূর্বাহ্ণ
জামায়াতকে ঘিরে রাজনীতিতে নতুন মোড়

।।বিশেষ প্রতিনিধি।।

দীর্ঘ ১০ বছর পর জামায়াতে ইসলামীকে সমাবেশের অনুমতি দিয়ে আলোচনা উসকে দিয়েছে ক্ষমতাসীন সরকার। রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে উৎসুক চাঞ্চল্য। রাজনীতিসচেতন মানুষের মনে এখন অনেক প্রশ্ন? তাহলে কি যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত আবার প্রকাশ্যে রাজনীতিতে ফিরছে? মার্কিন ভিসানীতির কাছে নতি স্বীকার করেই কি তাদের সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে? নাকি সরকারের সঙ্গে তাদের কোনও আঁতাত হচ্ছে ভেতরে ভেতরে?সরকারের শীর্ষ দুইজন মন্ত্রী অবশ্য রোববার তেমন আশঙ্কার কথা অস্বীকার করেছেন। এদিকে জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। তাদের মতে এটি ৩০ লাখ শহীদের সঙ্গে বেইমানি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবি করেছেন, নির্বাচন সামনে রেখে আবারও আগুন সন্ত্রাসের প্রস্তুতি নিতে বিএনপিই জামায়াতকে মাঠে নামিয়েছে। অন্যদিকে, বিএনপির অবস্থান কৌশলী। তারা বলছে, সভা-সমাবেশের অনুমতি পাওয়া সব রাজনৈতিক দলেরই গণতান্ত্রিক অধিকার। এদিকে সূত্রকে উদ্ধৃত করে দেশের শীর্ষ এক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনটি শনিবারের জন্য ভাড়া নিয়েছিল জাতীয় পার্টির (জাপা) যুব সংগঠন জাতীয় যুব সংহতি। সেখানে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সম্মেলন ছিল। তবে জাতীয় পার্টিকে সরিয়ে সেখানে জামায়াতকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় পুলিশ। জানা গেছে, গত শুক্রবার মধ্যরাতে পুলিশ জাপার দায়িত্বশীল নেতাদের ডেকে নিয়ে মিলনায়তন ছেড়ে দিতে বলে। মিলনায়তনে সম্মেলনের জন্য নেওয়া ব্যানার-ফেস্টুনসহ জিনিসপত্র কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে নিয়ে যেতে বলে।

জাপার পক্ষ থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ভাড়া নিয়েছিলেন দলের যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম। তিনি দেশের শীর্ষ এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা অনেক টাকা খরচ করে হল সাজিয়েছিলাম। কিন্তু রাতেই পুলিশের কর্মকর্তারা সব জিনিস নিয়ে যেতে বাধ্য করেন। পুলিশ আমাদের ওপর জুলুম করেছে।’

সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যম বলছে, জামায়াত আগামী নির্বাচন পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার পরিকল্পনা করেছে। পর্যায়ক্রমে মহানগর ও জেলা পর্যায়েও কর্মসূচি পালনের অনুমতি চাইবে দলটি। দলটির নেতারা বলছেন, সমাবেশের অনুমতি দিলে ভালো। না দিলেও ক্ষতি নেই। তখন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যাবে, বিরোধী দলের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, মার্কিন নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর সৃষ্ট পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণেই জামায়াতকে প্রকাশ্যে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কারণ এই নীতিতে শান্তিপূর্ণভাবে সভা, সমাবেশ ও মতপ্রকাশের অবাধ সুযোগ দেওয়ার কথা বলা আছে। এমন পরিস্থিতিতে জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া না হলে মার্কিন ভিসা নীতির বরখেলাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কেউ কেউ আবার সরকারের সঙ্গে জামায়াতের আঁতাতের কথাও বলছেন। অবশ্য বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করতে নারাজ আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা। তাঁদের অভিযোগ, নির্বাচন সামনে রেখে আবারও আগুন সন্ত্রাসের প্রস্তুতি নিতে বিএনপিই জামায়াতকে মাঠে নামিয়েছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শনিবার রাজধানীতে এক শান্তি সমাবেশে বলেছেন, জামায়াত মাঠে নামেনি, তাদের নামানো হয়েছে। তাদের মাঠে নামিয়েছে তাদের বিশ্বস্ত ঠিকানা বিএনপি।

এদিকে সম্প্রতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ ভোট ছাড়াই আগামী নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির ছক কষছে। তাঁর ভাষ্য, ভোটের গুঞ্জন রয়েছে, সরকার জামায়াতকে বিভিন্ন দলের নামে কিছু আসন দেবে। জাপাকেও কিছু আসন বাড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে আসন ভাগাভাগির গুঞ্জনকে সরাসরি নাকচ করেছেন দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তার দাবি, জামায়াতের ওপর গত ১৪ বছরে যে অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে, তার পর সমঝোতার কোনো প্রশ্নই আসে না।

রাজপথে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে কৌশলী অবস্থান নিয়ে চলছে। দেশি-বিদেশিদের চাপের মুখে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতের সঙ্গে ২০ দলীয় জোটও ভেঙে দিয়েছে বিএনপি। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সমমনা দল ও সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করছে তারা। তবে প্রকাশ্যে না হলেও ভেতরে ভেতরে বিএনপির শীর্ষপর্যায়ে নেতৃত্বের সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগ রয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। সরাসরি জোট বা সমমনা দলের মধ্যে না রেখে দূর থেকেই ‘সম্পর্ক’ বজায় রাখার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। তবে নানা কারণে বেশ কিছুদিন যোগাযোগ বন্ধ রাখে দলটি।

সূত্রমতে, আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের তৎপরতা শুরুর পর বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে নতুন করে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। বিএনপির তরফ থেকেই এই যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জামায়াতের একজন দায়িত্বশীল নেতা দাবি করেছেন।

সরকারের সঙ্গে গুঞ্জনের আঁতাত নিয়ে দুই মন্ত্রীর বক্তব্য

সরকারের সঙ্গে আঁতাতের গুঞ্জন প্রসঙ্গে রোববার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, জামায়াতের বিচার করার জন্য যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। তবে বিচারে চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত দোষী বলা যাবে না। রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যেসব তথ্য এসেছে, তাতে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করার যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত আছে। এ-সংক্রান্ত আইনটি সংশোধনের জন্য কিছুদিনের মধ্যে মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাই এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করতে পারেন।

জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। রোববার রাজধানীর রাজারবাগে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জামায়াত একটি অনিবন্ধিত দল। তারা মাঝেমধ্যেই বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে অনুষ্ঠান করে। বিভিন্ন ইনডোরেও তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে। দলটি অনুষ্ঠান করতে মাঠের জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু তারা অনুমতি দেননি। দলটি আবদ্ধ স্থানে ইনডোরে মিটিং করতে চেয়েছে, তাঁরা তা দেননি। পরে মৌখিকভাবে কমিশনার (ডিএমপির) অনুমতি দিয়েছেন। এতে আওয়ামী লীগের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।

ক্ষুব্ধ নির্মূল কমিটি

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘একাত্তেরর গণহত্যার দায়ে উচ্চ আদালতের রায়ে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দলটি দেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বকে বিশ্বাস করে না। এই দলকে সরকার কেন সমাবেশ করতে অনুমতি দিয়েছে তা বোধগম্য নয়। আমরা ক্ষুব্ধ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক রায়েও জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় দলটির অবিলম্বে বিচার হওয়া উচিত।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights