আজ ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

১৫ বছরে কাঠুরিয়া থেকে কোটিপতি উখিয়ার শ্রমিক দল নেতা!

  • In বিশেষ সংবাদ
  • পোস্ট টাইমঃ ২২ অক্টোবর ২০২৩ @ ০৪:১৫ অপরাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ২২ অক্টোবর ২০২৩@০৪:১৫ অপরাহ্ণ
১৫ বছরে কাঠুরিয়া থেকে কোটিপতি উখিয়ার শ্রমিক দল নেতা!

শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি।।

মাত্র ১৫ বছর আগে তিনি কখনো রিকশা চালিয়ে, কখনো বন থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে বাজারে এনে বিক্রি করতেন। কিন্তু বর্তমানে দৃশ্যমান কোন ব্যবসা বানিজ্য না থাকলেও তিনি গড়ে তুলেছেন বহুতল ভবণ, গুদাম ঘর পাশাপাশি দূরপাল্লার বাসের কয়েকটির শেয়ারও কিনেছেন। টাকার জনপ্রতিনিধিও নির্বাচিত হয়েছেন। ইয়াবা ও অস্ত্র কারবার করেই কয়েক কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারন সম্পাদক নুরুল আমিন এমনটাই জোরে একবার দাবী করেছেন এলাকাবাসীসহ প্রশাসনের একাধিক সূত্র।

র‍্যাব, পুলিশ, ইউনিয়ন পরিষদ ও এলাকাবাসী থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারন সম্পাদক নুরুল আমিন পালংখালী ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের কাশেম আলী ও ছকিনা খাতুন দম্পত্তির ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে ফেনী সদর থানায় একটি ইয়াবা মামলা এবং কক্সবাজার সদর থানায় একটি অস্ত্র আইনে মামলা রয়েছে। এছাড়া তাঁর ভাই রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় মাদকের মামলা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৮ সালের নুরুল আমিন ও তার বাবা কাশেম আলী কাঠুরিয়ার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কখনো কখনো তাঁরা রিকশা চালিয়ে সংসারের হাল ধরতেন। ২০১২ সালের দিকে পালংখালীর থাইংখালী বাজারে ছোট একটি চায়ের দোকান কাম মুদির দোকান দেন পরিবারটি। দোকানটি ২০১৬ সাল পর্যন্ত চালু থাকলেও এরপর থেকে বন্ধ রয়েছে। দোকান বন্ধ হওয়ার পর
উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারন সম্পাদক নুরুল আমিন স্থানীয় ইউপি সদস্য নিরবাচিত হন। সেই থেকে তিনি রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকলেও চলতি বছরে এসে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন নুরুল আমিন। এই দীর্ঘ সময়ে তাঁর দৃশ্যমান কোন ব্যবসা বানিজ্য না থাকলেও গড়ে তুলেছেন কোটি টাকার পাহাড়।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, ২০১২ সালের ১৬ মে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে আইনের মামলার এজাহারভুক্ত আসামী নুরুল আমিন। এছাড়া তিনি ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজার শহর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র সহ আটক হয়। এই মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী তিনি। তাছাড়া তাঁর ভাই রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় মাদকের মামলা রয়েছে।

এবিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পালংখালীর ইউনিয়ন পরিষদের এক প্যানেল চেয়ারম্যান বলেন, এক সময় নূরুল আমিন ও তাঁর পরিবার দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করতেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থান বদলে গেছে। তাদের পরিবার ইয়াবা ও অস্ত্র কারবার করেই টাকার পাহাড় গড়েছেন। এদের বিরুদ্ধে ইয়াবা মামলাও রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, নুরুল আমিন কিংবা তার পরিবারের দৃশ্যমান কোন ব্যবসা বানিজ্য নেই। তবে বর্তমানে তাদের রয়েছে বহুতল ভবন,গুদাম ঘর ও ঢাকা- টেকনাফ রোড়ের চলাচলকারী এসি বাসের শেয়ার সহ আরো অনেক সম্পদ।

একই ইউপির আরেক সদস্য বলেন, উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারন সম্পাদক নুরুল আমিন ও র‍্যাবের হাতে ইয়াবা সহ আটক হওয়া বাবুল মেম্বার একটি ইয়াবা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। এদের গ্রুপে আরো অনেকে রয়েছে। র‍্যাবের বিরুদ্ধে হওয়া সংবাদ সম্মেলনের পেছন থেকে অর্থ জোগান দিয়েছে নুরুল আমিন।

এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা শ্রমিকদলের সভাপতি আবদুল মালেক মানিক বলেন, সাধারন সম্পাদকের মাদকের মামলা রয়েছে বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এক সময় তাঁর বিরুদ্ধে ইয়াবা সংশ্লিষ্ঠতার অভিযোগ শোনা গেলেও এখন তা নেই। এছাড়া নুরুল আমিন ইউপি সদস্য থাকা অবস্থায় রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকলেও এখন সক্রিয় রয়েছে।

এবিষয়ে জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, নুরুল আমিনের ইয়াবা সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। এখন তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

তবে অভিযুক্ত উখিয়া শ্রমিক দলের সাধারন সম্পাদক নুরুল আমিন বলেন, আমার মুদির দোকান, বালু ইজারা ব্যবসা রয়েছে। এছাড়া আমি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাপ্লাই দেই। তাছাড়া দুটি গোডাইন ভাড়া পাই।

তিনি আরো বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে। তবে দুদিন সময় দেওয়া হলেও তিনি ট্রেড লাইসেন্স দেখাতে পারেননি।

ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল গফুর বলেন, নুরুল আমিনদের পারিবারিক অবস্থা একসময় খুবই খারাপ ছিল। তবে এটা অনেকটা পরিবর্তণ হয়েছে। তাদেরকে এখন মধ্যবিত্ত পরিবার বলা চলে।

তিনি আরো বলেন, তারা পরিষদ থেকে কোন ট্রেড লাইসেন্স নেইনি। তবে নুরুল আমিন দুটি গুদাম ভাড়া দিয়েছে বলে জানি। এছাড়া তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কিছু কাজকর্ম করে বলেও শুনেছি।

এ ব্যাপারে উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় কোন মামলা না থাকলে ফেনী সদর থানায় মাদক মামলা ও কক্সবাজার সদর থানায় অস্ত্র আইনে মামলা রয়েছে। তাছাড়া তাঁর ভাই রুহুল আমিন উখিয়া থানায় মাদক মামলার আসামী।

তিনি আরো বলেন, মাদক কারবারে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। তবে কারবারীদের সামাজিক ও রাজনৈতিক বয়কট করা দরকার।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights