হারুন-অর-রশীদ
ফরিদপুর প্রতিনিধি।।
দুই মাস ধরে পানিবন্দী রয়েছে ফরিদপুর পৌরসভার ব্রাহ্মণকান্দা এলাকার শতাধিক বাসিন্দা। পাশাপাশি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মসজিদ প্রাঙ্গণ ও সড়কের কিছু অংশ পানিতে নিমজ্জিত থাকায় শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ফরিদপুর পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের ব্রাহ্মণকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠও পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে দুই মাস যাবত। দূর থেকে দেখে মনে হবে কোনো ফসলী মাঠ। দুই মাস ধরে মাঠে অ্যাসেম্বলি করতে পারছেনা শিক্ষার্থীরা। জলাবদ্ধতার কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমে গেছে। স্কুলে আসা শিক্ষার্থীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পানি থাকায় খেলাধুলা করতে পারছেনা শিশুরা। পানি মাড়িয়ে আসতে গিয়ে শিশুরা চর্মরোগেও আক্রান্ত হচ্ছে।
এদিকে পানিবন্দী হয়ে রয়েছে ওই এলাকার অন্তত ৩০টি পরিবার। কোনো বাড়ির ভেতরে পানি রয়েছে। কোনো কোনো বাড়ির উঠান এবং কোনো কোনো বাড়ির রান্নাঘর পানিতে ডুবে আছে। ঘর থেকে বের হলেই পানি মাড়াতে হয়। জুতা-স্যান্ডেল হাতে নিয়া পানি মাড়িয়ে সড়কের শুকনা অংশে উঠতে হয় তাদের।
একটি মসজিদের প্রাঙ্গণও পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। নামাজ পড়তে মসজিদে পানি মাড়িয়ে যেতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে মুসল্লিদের। পাশাপাশি দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কের ৫’শ মিটার অংশ পানিতে ডুবে আছে। সড়কে যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
ব্রাহ্মণকান্দা এলাকার বাসিন্দা বেলায়েত হোসেন বলেন, প্রায় দুই মাস যাবত পানিবন্দী হয়ে রয়েছি আমরা। এই এলাকার ৩০টি পরিবার এখনো পানিবন্দি রয়েছে। ঘর থেকে বের হতে গেলে সেন্ডেল হাতে নিয়ে পানি পার হয়ে শুকনা অংশে গিয়ে সেন্ডেল পরে রওনা দিতে হয়।
আরেক বাসিন্দা আসলাম হোসেন বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর এই জলাবদ্ধতার সমস্যা। বাইপাস সড়ক হওয়ার কারণে জলাবদ্ধতার নিরসন হচ্ছে না। বৃষ্টির সময় বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। এলাকাবাসীর চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
আরেক বাসিন্দা রওশন আহমেদ বলেন, এই এলাকায় একটি স্কুল ও একটি মসজিদের সামনের মাঠ পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এছাড়া একটি সড়কের ৫’শ মিটার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। স্কুলে শিক্ষার্থীরা আসতে পারছেনা। আসলেও রিক্সায় আসা লাগে। এ কারণে গরীব মানুষের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারছেনা। জলাবদ্ধতা নিরসনে একটা স্থায়ী সমাধানের দাবী জানান তিনি।
ব্রাহ্মণকান্দা মসজিদের ইমাম আব্দুল্লাহ মাহফুজ বলেন, দুই মাস যাবত মসজিদের সামনের অংশে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
ব্রাহ্মণকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র আরশাদ জানায়, স্কুলে আসতে হয় পানি পার হয়ে। এ কারণে অনেকেই স্কুলে আসছে না। খেলাধুলা করতে পারি না আমরা।
ব্রাহ্মণকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক কামরুন্নাহার বলেন, স্কুলের মাঠে প্রায় তিন মাস যাবত পানি রয়েছে। একারণে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
ব্রাহ্মণকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক আমিনুর রহমান তুহিন জানান, স্কুলের মাঠে বৃষ্টির পানি আটকে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি বের হওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। পানির কারণে স্কুলে শিক্ষার্থীরা আসছে না। জলাবদ্ধতার কারণে শিক্ষাক্রম ব্যহত হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, পানি অপসারণের স্থায়ী ব্যবস্থা করা না হলে পানি স্থায়ী হয়ে যাচ্ছে। স্কুলে প্রায় আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। বর্তমানে একশ শিক্ষার্থী স্কুলে আসে। বিশেষ করে পানি মাড়িয়ে আসায় অনেক শিক্ষার্থীর পায়ে চর্মরোগ হয়েছে। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে না।
আমিনুর রহমান তুহিন আরো জানান, মাঠে জলাবদ্ধতার কারণে অনেকদিন যাবত এ্যাসেম্বলি করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া খেলাধুলাও করতে পারছেনা শিক্ষার্থীরা। পানি নিরসনে দ্রুত স্থায়ী সমাধান করা না হলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ব্যহত হবে।
এব্যাপারে ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোসের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আরাফাত রহমান রাজিব জানিয়েছেন, ওই এলাকার ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিগুলো বালু দিয়ে ভরাট করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জমি কেটে পাইপ দিয়ে পানি অপসারণের কাজ শুরু করা হয়েছে। দ্রুতই জলাবদ্ধতার নিরসন হবে।