আজ ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ৩১শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

কক্সবাজারে ধর্ষণের ‘মহোৎসব’, ৩০ দিনে ৬৭ ধর্ষণ

  • In জাতীয়, বিশেষ সংবাদ
  • পোস্ট টাইমঃ ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ @ ০৬:৩১ অপরাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩@০৬:৩৩ অপরাহ্ণ
কক্সবাজারে ধর্ষণের ‘মহোৎসব’, ৩০ দিনে ৬৭ ধর্ষণ

শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি।।

কক্সবাজারে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ধর্ষণের ঘটনা। শিশু থেকে বয়স্ক নারী পর্যন্ত কেউই পশুরূপী মানুষের ধর্ষণের কবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত কোথাও না কোথাও প্রায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। যেন ধর্ষণের মহামারি চলছে। এসব ঘটনার সামান্যই পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তারপরও এ সংখ্যাটি উদ্বেগজনক আকার ধারণ করেছে অভিযোগ সচেতন মহলের।

কেবল যেসব ঘটনা জানাজানি হয়, সেগুলোই প্রকাশিত হচ্ছে। এর বাইরে যে অসংখ্য ঘটনা রয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। সংঘবদ্ধ চক্রের দৌরাত্ম্যে অসহায় হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা।

শুধু আগস্টেই ধর্ষণের শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬৭ নারী। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক পরিসংখ্যানে গত মাসে ২৬ নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার তথ্য উঠে এসেছে।

সর্বশেষ ৪ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজার শহরের পৃথক দুটি কটেজে তিন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন নৃত্যশিল্পী ঢাকা থেকে কক্সবাজার এসেছিলেন একটি অনুষ্ঠানে। অপরজন কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুলের বাসিন্দা। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। আটক করা হয়েছে দুজনকে।

কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘কক্সবাজার শহরের পর্যটন জোনে পৃথক স্থানে তিন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা দুটি তদন্তের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশকে ভার দেয়া হয়েছে।’

আটককৃতরা হলেন- কক্সবাজার পৌরসভার মোহাজের পাড়া এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলামের ছেলে সোলাইমান শামীম (২৩) ও সদর উপজেলার খুরুশকুল মেহদী পাড়া এলাকার খালেক।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের ‘ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস’-এ (ওসিসি) দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনা লাইলা বলেন, ‘একমাসে ৬৭ জন ভূক্তভোগী ধর্ষণের চিকিৎসা সেবা নিতে হাসপাতালে এসেছেন।’

জেলা প্রশাসনের এক গোপন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, চলতি বছরের আগস্টে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৬ নারী।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রেম ঘটিত বিষয়, বিয়ের প্রলোভন কিংবা দুজনের সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্কের ঘটনায় ধর্ষণ মামলা করা হচ্ছে। আমরা যখন তদন্ত করি তখন এসব বিষয় উঠে আসে। তবে কিছু কিছু মামলায় ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায়।’

‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা কমে এলে ধর্ষণও কমে আসবে। সেই সঙ্গে নারীদের বেপরোয়া চালচলন ও অশ্লীল পোশাকও ধর্ষণের এক প্রকার উপকরণ’
– শাহেনা আক্তার পাখি, কাউন্সিলর, কক্সবাজার পৌরসভা

লিগ্যাল এইড কক্সবাজারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট বাপ্পী শর্মা বলেন, ‘একমাসে যে পরিমাণ ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে তা পর্যালোচনা করলে বিষয়টি উদ্বেগজনকই বলতে হয়।’

পুরুষের বিকৃত মানসিকতা, অভিযোগের পক্ষপাতমূলক তদন্ত আর বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ধর্ষণ প্রবণতা বাড়ছে বলেও মনে করছেন তিনি। আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং দ্রুত সময়ে বিচার নিশ্চিত করা গেলে ধর্ষণ প্রবণতা কমে আসবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

জেলা লিগ্যাল এইডে সেবা দানকারীরা মনে করছেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা না গেলে ধর্ষণের ব্যাপকতা কমবে না। এছাড়া, নিরাপত্তার অভাববোধ থেকে সংক্ষুব্ধ পরিবারের অনেকে মামলা দায়েরে আগ্রহ দেখান না।’

তিনি আরও বলেন, ‘একই সঙ্গে থানা প্রশাসন কর্তৃক মামলা গ্রহণে অনীহা, ক্ষমতার আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে থাকা ব্যক্তি ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত হলে প্রভাবশালী ব্যক্তি কর্তৃক তদন্ত ও বিচার কার্যক্রমকে প্রভাবিত করার ফলে আইনের সঠিক বাস্তবায়নও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তেমনই ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয়ে থাকেন ভুক্তভোগীরা। ফলে অনেকে গোপনে সামাজপতিদের মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনা মীমাংসা করেন।’

তবে সামাজিক অবক্ষয়কে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ বলে দায়ি করেছেন কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল (১)-এর সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সায়েম।

নারী নেত্রী কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর শাহেনা আক্তার পাখি বলেন, ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা কমে এলে ধর্ষণও কমে আসবে। সেই সঙ্গে নারীদের বেপরোয়া চালচলন ও অশ্লীল পোশাকও ধর্ষণের এক প্রকার উপকরণ।’

নারী আদালতের সহকারী পিপি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী তাপস রক্ষিত বলেন, ‘ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারন আইনের মারপ্যাঁচে বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রীতা ও নানান প্রতিবন্ধকতা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ও ৯(২) ধারায় ধর্ষনের দায়ে শাস্তির বিধান যাবজ্জীবন। আর মৃত্যু ঘটলে মৃত্যুদণ্ডের ও ২০(৩) ধারায় বিচারের জন্য মামলাপ্রাপ্তির ১৮০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ সমাপ্ত করার কথা রয়েছে। কিন্তু বিচার তো দূরের কথা, সঠিক সময়ে তদন্ত কাজও শেষ হয়না। এতে অপরাধীরা আইনকে যেমন তোয়াক্কা করছে না, তেমনি অপরাধ করতেও দ্বিধা করছে না।’

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights