আজ ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

দুর্গন্ধের নগরীতে সবুজ কলোনি এখন ঝকঝকে

দুর্গন্ধের নগরীতে সবুজ কলোনি এখন ঝকঝকে

নাজমুস সাকিব
ময়মনসিংহ প্রনিনিধি।।

এ যেন শিল্পীর তুলিতে দেয়ালে আঁকা ছবিগুচ্ছ। ইট পাথরের এ নগরে ছোট্ট একটি সবুজের বাগান। বাহারি টবে সাজানো ভিন্ন রকম গাছ, ফাঁকে ফাঁকে শোভা পাচ্ছে হরেক রঙের ফুল। পুরো এলাকা সুরভি ছাড়াচ্ছে রাস্তার দুপাশের দেয়ালের নান্দনিকতা। এটি ময়মনসিংহ নগরীর বাঁশবাড়ি কলোনির চিত্র। বাসিন্দাদের ছোট্ট এক উদ্যোগ পাল্টে গেছে এর চিরচেনা চেহারা।

ময়মনসিংহ মহানগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের একটি এলাকা বাঁশবাড়ি কলোনি। নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস এই কলোনিতে। ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন কলোনির ভেতরের সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করায় আবর্জনায় নোংরা হয়ে থাকা সড়ক ঝকঝকে রুপ নেয়। পাল্টে যাওয়া ঝকঝকে পরিবেশ টিকিয়ে রাখতে এক হাজার ফুট দৈর্ঘের এ সড়কের দুপাশের দেয়ালগুলোতে বাগান করার পরিকল্পনা শুরু করেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। পুরো এলাকাটিকে নান্দনিক করে গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন মুরাদ হাসান কানন, মেহেদী হোসান মুহিত, সাইফুল ইসলাম।

ময়লা আবর্জনা আর দুর্গন্ধে মানুষ হাটা ছিলো দায় সেখানে দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে শতো প্রজাতির হাজারো গাছ। অথচ ক’দিন আগেও আবর্জনার গন্ধে যে এলাকায় টেকা দায় ছিল, সে এলাকায় এখন ফুলের সুরভি ছড়ায়। বাড়ির অব্যবহৃত ও ভাঙা ঝুড়ি, বালতি, মগ ইত্যাদি সংগ্রহ করে রশি বা তার দিয়ে দেয়ালে আটকে বানানো হয়েছে টব। লাগানো হয়েছে হরেক প্রজাতির গাছ। এর কোনোটির পাতায় সৌন্দর্য, কোনোটি ছড়াচ্ছে সুরভি। যা দেখতে প্রতিদিনিই দূর দূরান্ত থেকে ভীড় করছেন মানুষজন। বাসিন্দাদের তিন মাসের চেষ্টায় পাল্টে যায় কলোনির চিত্র। যা এখন, সবুজ কলোনি নামে মানুষের মুখে মুখে।

কলোনির বাসিন্দারা জানান, আগে রাস্তা ভালো ছিল না। দুই পাশে সবাই ময়লা ফেলত। এখন রাস্তাও সুন্দর হয়েছে এবং দেয়ালগুলোতে গাছ লাগিয়ে সুন্দর করা হয়েছে। গাছগুলোকে টিকিয়ে রাখতে ছোট-বড় সবাই খুবই উদ্যোগী। সবাই নিজেদের এলাকার বাগানকে বড় করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। অনেকে এখন ছুটেে আসেন বাগান দেখতে, ছবি তুলতে। এতে খুশি এলাকার শিশু-কিশোররাও।

মুরাদ হোসেন কানন বলেন, আমরা উদ্যোক্তা তিনজন হলেও এখানে কলোনির প্রায় সবাই বিভিন্ন ভাবে কাজ করেছে, সহযোগীতা করেছে। আমরা দৈনন্দিন কাজ শেষে বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করেছি। এক হাজার ফুট সড়কের দুপাশের দেয়ালে প্রায় কয়েক হাজার গাছ ঝুলছে। দেয়াল এছাড়াও রাস্তার পাশে একটু বড় সাইজের গাছ গুলো টবে রাখা হয়েছে। আমরা আগামী প্রজন্মকে সুন্দর নগরী উপহার দিতে এবং পরিবেশকে সুন্দর রাখতে এই পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।

মুরাদ হোসেন কানন আরও বলেন, মানুষ এখন পার্কের মতো এখানে ঘুরতে আসে, আমাদের বাহবা দেয়, তখন আমি যে আত্মতৃপ্তিটা পাই তা কোটি টাকায়ও পাওয়া যাবে না। সবার বাহবা আর প্রশংসায় অনুভব করছি আমাদের পরিশ্রম সফল হয়েছে।

মেহেদী হোসান মুহিত বলেন, আবর্জনায় নোংরা হয়ে থাকা রাস্তাটি যখন ঝকঝকে রুপ নিলো তখন আমাদের থুব ভালো লাগছিলো। এই ভালো লাগা থেকেই রাস্তাটিকে সুন্দর রাখার পরিকল্পনা। সে জন্য আমরা পরিবেশ বান্ধব গাছকেই বেছে নিলাম। এবং তিন মাসের পরিশ্রমে আমরা কলোনির চিত্র পাল্টে দিতে পেরেছি। এখন আমাদের দেখে অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছে।

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, শিক্ষণীয় ও অনুকরণীয় একটি কাজ করেছে কলোনির বাসিন্দারা। তারা এটিকে মডেল হিসেবে নিয়ে দেয়ালগুলোকে বাগানে রূপ দিয়েছেন। মানুষের ইচ্ছা থাকলেই চারপাশের পরিবেশ সুন্দর রাখা সম্ভব। আমরা আশা করব, নগরীর বাসিন্দারা তাদের বাসা বা এলাকাকে সবুজ ও ফুল দিয়ে সাজিয়ে তুলবেন। তাতে সুন্দর ও পরিবেশবান্ধব নগর গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights