আজ ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ ও ১২ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ এবং ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

কক্সবাজারে ‘পুলিশের সোর্স’ পরিচয়ে চলে কবিরের অপকর্ম

  • In অনুসন্ধান, সারাবাংলা
  • পোস্ট টাইমঃ ৩১ আগস্ট ২০২৩ @ ১১:২০ পূর্বাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ৩১ আগস্ট ২০২৩@১১:২০ পূর্বাহ্ণ
কক্সবাজারে ‘পুলিশের সোর্স’ পরিচয়ে চলে কবিরের অপকর্ম

শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি।।

কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশের সোর্স পরিচয় দেয়া এক যুবকের হাতেই জিম্মি হয়ে পড়ছে শত শত বিচারপ্রার্থী। এই যুবকের খপ্পরে পড়ে কেউ হচ্ছেন মিথ্যা মামলার আসামি আবার কেউ হারাচ্ছেন নগদ টাকা ও জমি-জমা। দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সোর্স পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে নানা ধরনের মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে কবির নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ আছে, কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সাথে কৌশলে সখ্যতা গড়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে একের পর এক হয়রানি করে যাচ্ছেন তিনি। নিজের কোনো ব্যবসা বা চাকরি না থাকলেও নিয়মিত শহরের কলাতলী হোটেল-মোটেল জোনে বসে প্রশাসনকে ধরিয়ে দেওয়াসহ মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে আদায় করছে অর্থও। স্থানীয় জনসাধারণের কাছে এইযেন মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছেন কবির। ইতোমধ্যে অনেকের কাছ থেকে টাকা আদায় করার তথ্যও পাওয়া গেছে কবিরের বিরুদ্ধে। এমনকি সদর থানায় আসা-যাওয়াসহ থানা কম্পাউন্ডে নিয়মিত ঘুরাঘুরি করতেও তাকে প্রায় সময় দেখা যায়।

কবির কক্সবাজার সদরের কলাতলী চন্দ্রিমা মাঠ এলাকার বাসিন্দা। পাশাপাশি সদর মডেল থানার চিহিৃত দালাল। তার রোষানলে পড়ে মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে ইতোমধ্যে বাড়িঘর ছাড়া হয়েছেন অনেকেই। অনেকে আবার মিথ্যা মামলা ও হয়রানি থেকে বাঁচতে সদর থানার ওসি বরাবরে আবেদন জানিয়েছেন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কবির সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই সদর থানার গেইটে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে। থানায় আগত সকল লোকদের সাথে সে দেখা করে বলে কি কারনে আসছেন আমাকে বলেন, আমি আ.লীগের নেতা এবং আমি ওসি সাহেবের লোক, আপনার কোন মামলা করাতে হলে আমি ওসি সাহেব কে বলে মামলা করিয়ে দিব। এইভাবে লোকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেয়। শুধু তাই নয়, পুলিশের ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে দালাল কবির। এলাকায় গিয়ে নিরীহ লোকজনকে নানাভাবে হুমকি প্রদান করে অমুককে পুলিশ খুঁজছে, তমুকের বিরুদ্ধে মামলা আছে বলে মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায় করছে।

আবদুর রহিম নামে এক ভুক্তভোগীর দেয়া লিখাত অভিযোগে জানা যায়, কবির প্রায় সময় নিরীহ মানুষকে থানায় ধরে নিয়ে যাবে বলে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে মানুষের অর্থ-সম্পদ হাতিয়ে নিচ্ছেন। ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। এমতাবস্থায় রহিমদের ২৩টি টমটম গাড়ী এবং ১২টি টমট ম গাড়ীর লাইসেন্স আছে। মেরিন ড্রাইভ সড়কে রহিমের বাবার স্টার কোম্পানী নামে গাড়ীর গ্যারেজে তাদের টমটম গাড়ী রাখা হয়। দালাল কবিরের নেতৃত্বে একটি চক্র কয়েকদিন আগে ওই গ্যারেজ থেকে চাঁদা দাবী করে। তা দিতে অনীহা প্রকাশ করলে ভুক্তভোগী আবদুর রহিমকে প্রকাশ্যে প্রাণ নাশের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। এমতাবস্থায় রহিমের পিতা অসুস্থ থাকায় তার সৎ মা নুর বেগমকে সাথে নিয়ে দালাল কবির একটি চক্র গড়ে তুলে। অথচ নুর বেগমের উৎশৃঙ্খল আচরণের কারণে পিতা আকতার হোছন ব্রেইন স্টোক করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে দালাল কবির নুর বেগমকে সাথে নিয়ে গ্যারেজে হামলা করে টমটম গাড়ীসহ গ্যারেজটি জোর পূর্বক দখল করার পায়তারা করে আসছিল। গত ২৮ আগষ্ট সন্ধ্যা ৬ টার দিকে কবির-নুর বেগমসহ অজ্ঞাত ৫/৬ জন হাতে লোহার রড, দা, কিরিচ, হকিস্টিক নিয়ে গ্যারেজটিতে হামলা চালায়। এসময় ভুক্তভোগী আবদুর রহিম ও তার ছোট ভাই আবুল কাশেম, ওয়াশিম আকরাম, ইমরান হোছেন ইমনকে এলোপাতাড়ি হামলা করে নগদ ৫০ হাজার টাকাসহ গ্যারেজে থাকা যাবতীয় কাগজপত্র ছিনিয়ে নেন। এসময় তাদের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এঘটনার পর থেকে দালাল কবির তাদের প্রাণে মারাসহ মিথ্যা মামলার হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন।

এই ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা এএসআই হাকিম বলেন, কবির পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে নানা অপকর্ম করছেন বলে আমিও শুনেছি। আবদুর রহিম নামের এক ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্তে গিয়ে কবিরকে দেখে খুব বকাঝকা করেছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।

ভুক্তভোগী আবদুর রহিম বলেন, কবিরের অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ট। তাকে ৫০ হাজার টাকা না দিলে সে আমাদের টমটম গ্যারেজ দখল করার হুমকি দিয়ে আসছিলো। সেজন্য আমি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি, যা বর্তমানে থানায় বিচারাধীন রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন অপরাধী গ্রেফতারে পুলিশ মাঝেমধ্যে তাদের সহযোগিতা নেয়। আর এ সুযোগে কবিরদের মতো সোর্সের অপরাধ ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। আর পুলিশের সঙ্গে সখ্য থাকার সুযোগে এসব সোর্স অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই, যা সোর্সরা নিয়ন্ত্রণ করছে না। আবার কখনও কখনও মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়েও এরা নিরপরাধ মানুষের অর্থকড়ি হাতিয়ে নেয়। কলাতলীসহ আশেপাশের পাড়া-মহল্লায় এখন আতঙ্কের নাম পুলিশের সোর্স ও থানার দালাল কবির।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে কবির বলেন, আমি থানায় কোনদিন যায়নি। তাছাড়া কোনো সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেছি বা মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করেছি এমন কোনো প্রমাণ নেই।

থানায় ঘুরাঘুরি করার কয়েকটি ছবি-ভিড়িও রয়েছে প্রতিবেদকের কাছে এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, নিজের জমি সংক্রান্ত বিষয়ে কয়েকবার থানায় গেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

এবিষয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) নাজমুল হুদা বলেন, ব্যাক্তিগতভাবে তাকে আমি চিনিনা। পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।

জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ কল চালু হওয়ার পর থেকে মানুষ অনেক সচেতন বলে তিনি আরোও বলেন, আমাদের দরজা সবার জন্য খোলা, কোন দালালের প্রয়োজন নেই। যারা থানার সামনে ঘুরাঘুরি করে তাদের সব ধরনের অপরাধ-অপকর্মের ব্যাপারে পুলিশ কর্মকর্তাদের কঠোর ভূমিকা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোথাও পুলিশের নাম ব্যবহার করে হয়রানি করেছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে এইসব পুলিশের সোর্সদের এতটাই দাপট যে তাদেরকে রীতিমতো ভয় পায় দাগি সন্ত্রাসীরাও। সোর্সদের তারা রীতিমতো সমীহ করে চলে। তাদের ধারণা উল্টাপাল্টা করলে যেকোনো সময় তাদেরকে ধরিয়ে দিতে পারে সোর্সরা। সন্ত্রাসী ও পুলিশের সঙ্গে সখ্যের কারণে সাধারণ মানুষ তাদের নিয়ে থাকেন আতঙ্কে।###

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
Verified by MonsterInsights