আজ ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ২০শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

রাবি অধ্যাপক তাহের হত্যা: ফাঁসি স্থগিতের আপিলও খারিজ

  • In জাতীয়
  • পোস্ট টাইমঃ ২৫ জুলাই ২০২৩ @ ০৭:১১ অপরাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ২৫ জুলাই ২০২৩@০৭:১১ অপরাহ্ণ
রাবি অধ্যাপক তাহের হত্যা: ফাঁসি স্থগিতের আপিলও খারিজ

।।নিজস্ব প্রতিবেদক।।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধ্যাপক ড. এস তাহেরকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের প্রাণভিক্ষার আবেদনও রাষ্ট্রপতি নাকচ করে দিয়েছেন। মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচার সর্বশেষ এই ধাপ পার হওয়ার পরও ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে আবেদন করা হয়। নজিরবিহীন এই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ আবেদনটি খারিজ করে। সংশ্লিষ্ট এক রিট খারিজের বিরুদ্ধে করা আবেদন খারিজ করে মঙ্গলবার এই আদেশ দেয় আদালত।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এন গোস্বামী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মো. মোরশেদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলম। আর শুনানিতে অধ্যাপক তাহেরের আইনজীবীকন্যা শেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

শুনানিতে আইনজীবী এস এন গোস্বামীকে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘একটা বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল- রিভিউ সব শেষ হলো, অবজারভেশনে সব বলে দেয়া হলো। তারপর আবার এটার বিরুদ্ধে রিট নিয়ে হাইকোর্টে গেলেন কেন? এখানে রিট করার কি কোন সুযোগ আছে? এরকম কোন ডিসিশন দেখাতে পারবেন?

উত্তরে আইনজীবী বলেন, এরকম ডিসিশন নেই। তবে আমাদের আপত্তির জায়গাটা হচ্ছে আসামিকে আটক ও আদালতে হাজিরের ক্ষেতে সংবিধানের বিধান মানা হয়নি। তখন প্রধান বিচারপতি এই আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে হাজিরের বিষয়টি তো আপিলের রায়ে উত্তর দেয়া হয়েছে। তাহলে এখন এসে প্রসেসটাকে কে বাধাগ্রস্ত (ইন্টারআপ) করছেন? এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, এখানে একজন প্রফেসরকে যে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো সেটা ৭১ সালের বর্বরতাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। আর আগেও বলেছি যে, যখন আমরা কোন বিচার করি তখন ঘটনাটা আমাদের সামনে রাখতে হয়। এক্ষেত্রে অধ্যাপক তাহেরের লাশটি আমাদের সামনে, এমনটা দেখেই আমরা বিচার করেছি।

এ পর্যায়ে বেঞ্চের আরেক বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম আইনজীবীকে বলেন, ক্লায়েন্টকে সৎ পরামর্শ দেয়াটাও কিন্তু একজন আইনজীবীর দায়িত্ব। বেঞ্চের আরেক বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম এই আইনজীবীকে বলেন, আপনি যে বিষয়ে রিট করেছেন তার উত্তর তো রায়েই দেয়া হয়েছে। বেঞ্চের অপর বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এরকম বিষয় নিয়ে এসে আদালতের সময় নষ্ট করায় কস্ট করা উচিৎ।

শুনানি নিয়ে আবেদনটি খারিজ করে আদেশ দেয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে এই চার বিচারপতির বেঞ্চ
প্রসঙ্গত প্রায় দেড় যুগ আগে ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় নিহতের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এক বছর পর ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত ওই মামলায় ৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ২ জনকে খালাস দেত। পরবর্তীকালে হাইকোর্ট দুই আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে অন্য দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা দুই আসামি হলেন একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম।

রায়ে সাজা কমিয়ে হাইকোর্ট নাজমুল আলম ও আব্দুস সালামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করেন। অন্যদিকে সাজা কমিয়ে দু’জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। সে সব আপিলের শুনানি শেষে গত ৫ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যায় হাইকোর্টের দেয়া আগের রায়ই বহাল রাখে। রায়ের ফলে ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের তৎকালীন সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড এবং নাজমুল আলম ও আব্দুস সালামের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল থাকে।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত নাজমুল আলম বাদে অপর তিন দণ্ডিত আপিল বিভাগে (রিভিউ) আবেদন করে। গত ২ মার্চ সে রিভিউ খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। পরবর্তীতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি প্রাণভিক্ষার আবেদন করলে তা নাকচ করে দেন রাষ্ট্রপতি।
এরপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে তার ভাই হাইকোর্টে রিট করলে সে রিট সরাসরি খারিজ করে দেয় বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি মো. আলী রেজার সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ। এরপর এই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। যা শুনানি নিয়ে খারিজ করে সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights