আজ ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

রংপুর বিভাগে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ: সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান অব্যাহত

  • In সারাবাংলা, স্বাস্থ্য
  • পোস্ট টাইমঃ ২১ জুলাই ২০২৩ @ ০৪:১৯ অপরাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ২১ জুলাই ২০২৩@০৪:১৯ অপরাহ্ণ
রংপুর বিভাগে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ: সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান অব্যাহত

এম আর মিলন
বিশেষ প্রতিনিধি।।

প্রতিদিনই রংপুর মহানগরীসহ বিভাগের আট জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিভাগের ৮টি জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৫২ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা সেবা গ্রহন করছেন বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যেই রংপুরে একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিস সূত্রে জানা যায়, রংপুর বিভাগে এ পর্যন্ত ১৭৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তিকৃত ৫২ জন রোগী চিকিৎসা গ্রহন করছেন। এর মধ্যে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ২৪ জন, লালমনিরহাটে ৪ জন, কুড়িগ্রামে ৩ জন, নীলফামারীতে ৪ জন, গাইবান্ধায় ৩ জন, দিনাজপুরে ১০ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ২ জন এবং পঞ্চগড় হাসপাতালে একজন চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে গত ৪ জুলাই রমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গু আক্রান্ত এক রোগী মারা গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে জানা যায়।

এদিকে এডিস মশার লার্ভা নিধনে রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) অভিযান চলমান রয়েছে। পাশাপাশি বিভাগের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক প্রচার প্রচরণা অব্যাহত রয়েছে। বিভাগের আটটি জেলার সিভল সার্জনের কার্যালয়, আটটি জেলা তথ্য অফিস এবং রংপুর মহানগর পৃথকভাবে প্রচারাভিযান ও জনসচেতনতামূলক মাইকিং ও লিফলেট বিতরন অব্যাহত রেখেছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, রংপুর মহানগরের (সাবেক পৌরসভার) ১৫টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর রেড জোনে রয়েছে। কারণ এই ১৫টি ওয়ার্ড নিয়েই মুল শহর গঠিত এবং ঘনবসতিপূর্ণ। এখানে রয়েছে প্রচুর পরিমান এডিস মশার লার্ভা। রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে শহর কেন্দ্রীক ১৫টি ওয়ার্ডকে ইতিমধ্যে রেড জোন ঘোষনা করা হয়েছে। গত সপ্তাহে অভিযান চালিয়ে মহানগরীর ৩ টি স্থানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার পরে সিটি করপোরেশন, সিভিল সার্জন অফিস, স্বাস্থ্য বিভাগ ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের রমেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

রসিক স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডা.কামরুজ্জামান ইবনে তাজ এই প্রতিবেদক কে বলেন, মহানগরীর ১৫টি ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। নিমূলে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সচেতনতা মূলক প্রচারণা এবং ভ্রাম্যমাণ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। রংপুর সিভিল সার্জন ডাক্তার মোঃ জাহাঙ্গীর কবির জানান জেলায় ৬ জন ডেঙ্গুরোগী আছে, তারা ঢাকা ফেরত । এর মধ্যে পীরগঞ্জ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২জন মিঠাপুকুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২ জন এবং পীরগাছা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১ এবং রমেক হাসপাতালে ১ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে।

রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী জানান, এখন পর্যন্ত যারা ভর্তি রয়েছে, তাদের যথাসাধ্য চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিছু দিন আগে একজন মারা গেছেন। আমরা আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড করার চেষ্টা করছি। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় সাধারণ রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আমাদের ইউনিট এবং বেডের সমস্যা রয়েছে। রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডেঙ্গু শুধু রংপুর অঞ্চলে না সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। এখন আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। তবে হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের কাছ থেকে আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডেঙ্গু রোগীদের বিশেষ নজরে রাখারও আশ্বাস দেন তিনি।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ৪ জুলাই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান বুলেট লাল। পুরাতন সদর হাসপাতাল কলোনির বাসিন্দা বুলেট ঢাকায় একটি সরকারি অফিসে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসেই জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। পরে পরীক্ষা করে ডেঙ্গু নিশ্চিত হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বুলেট। এদিকে, রংপুর সিটি করপোরেশনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নগরীতে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করার অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে তারা কেরানিপাড়া এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে এবং কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় এডিস মশার লার্ভা শনাক্ত করেছেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধা জানান, প্রাথমিকভাবে তাদের সতর্ক করা হয়েছে। পরবর্তী অভিযানে লার্ভা শনাক্ত হলে জরিমানাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এরপর রমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে সব রোগীকে একসঙ্গে রাখা হলেও এখন কিছুটা তৎপর হয়েছে প্রশাসন। নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলার মেডিসিন বিভাগের ২৯ নং ওয়ার্ডের ৩ নম্বর এবং ৬ নম্বর ইউনিটে রাখা হয়েছে ডেঙ্গু রোগীদের। তবে এখনো ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় রমেক হাসপাতালে আলাদা কোনো ওয়ার্ড নির্ধারণ করা হয়নি। বর্তমানে সেখানে রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights