।।বিশেষ প্রতিবেদক।।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুনের শপথ নেওয়ার সময় তাঁর পাশে ছিলেন ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। সোমবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই শপথ অনুষ্ঠান হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন মেয়র এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম কাউন্সিলরদের শপথ পড়ান। সূত্র বলছে, শপথ অনুষ্ঠানে মা জায়েদা তার ছেলে জাহাঙ্গীরকে ক্ষমা করতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। প্রধানমন্ত্রীও তাকে ক্ষমা করে দেওয়ার কথা জানান। তবে জাহাঙ্গীর দলে ফিরছেন কিনা, সে ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি।
প্রধানমন্ত্রী প্রেস উইং সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শাপলা হলে বরিশাল, খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ অনুষ্ঠিত হয়।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। বাকি চার সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন- খুলনা সিটি করপোরেশনে তালুকদার আবদুল খালেক, বরিশালে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত), রাজশাহীতে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং সিলেটে মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত হয় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। ১২ জুন অনুষ্ঠিত হয় বরিশাল ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। খুলনায় আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক এবং বরিশালে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) বিজয়ী হন। জাতীয় সংবাদ সংস্থা বাসসের ছবিতে দেখা যায়, শাপলা হলের এই অনুষ্ঠানে তিন সিটির নবনির্বাচিত মেয়ররা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে শপথ নিচ্ছেন। শপথ নেওয়ার সময় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুনের পাশে তাঁর ছেলে জাহাঙ্গীরকে বসে থাকতে দেখা যায়।
দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশন গাজীপুরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেয়র হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর। এই সিটিতে গত ২৫ মের নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন জাহাঙ্গীর। কিন্তু দল মনোনয়ন দেয় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খানকে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী হতে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছিলেন জাহাঙ্গীর। পাশাপাশি তাঁর মা জায়েদা খাতুনের নামেও মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করা হয়েছিল। ঋণখেলাপির জামিনদার হওয়ায় জাহাঙ্গীরের প্রার্থিতা শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়। পরে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন।
সাধারণ গৃহিণী থেকে বিশেষ পরিস্থিতিতে মেয়রপ্রার্থী হয়ে আলোচনায় আসেন ৬১ বছর বয়সী জায়েদা খাতুন। তাঁর নির্বাচনী কার্যক্রমে প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন ছেলে জাহাঙ্গীর। তিনি মায়ের পক্ষে দিনরাত প্রচার চালান। ভোটের প্রচারে জায়েদা খাতুন নিজেকে জাহাঙ্গীরের মা হিসেবেই পরিচয় দেন। ফলে ভোটের লড়াইয়ে কার্যত আজমত উল্লার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাহাঙ্গীর।
নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী জায়েদা খাতুন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান। তিনি ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট পেয়েছিলেন। জায়েদা খাতুনের জয়ের পর ছেলে জাহাঙ্গীর তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার জয় হয়েছে, পরাজয় হয়েছে ব্যক্তির। তিনি তাঁর মাকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন।