আজ ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

দুই সিটিতেই নৌকার জয়, হাতপাখার ফল প্রত্যাখ্যান

  • In শীর্ষ
  • পোস্ট টাইমঃ ১২ জুন ২০২৩ @ ১০:২৫ অপরাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ১২ জুন ২০২৩@১০:৩২ অপরাহ্ণ
দুই সিটিতেই নৌকার জয়, হাতপাখার ফল প্রত্যাখ্যান

।।খুলনা ও বরিশাল প্রতিনিধি।।

অনেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনে খুলনা ও বরিশাল দুই সিটিতেই জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। খুলনা সিটি নির্বাচনে ৯৪ হাজার ভোটে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মো. আব্দুল আউয়ালকে হারিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক। এনিয়ে তিনি তৃতীয়বার এই নগরীর মেয়র হচ্ছেন তিনি। এদিকে বরিশালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের খোকন সেরনিয়াবাত ৫৩ হাজার ভোটে হারান ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতী ফয়জুল করীমকে। প্রথমবারের মতো নগরপিতা হচ্ছেন তিনি। অবশ্য ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তুলে দুই সিটিতেই ফল প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামী আন্দোলন। তবে ‘আনন্দমুখর’ পরিবেশে ভোট হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। যদিও নির্বাচনে বিক্ষিপ্ত কিছু সংঘর্ষ ও সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।

খুলনায় তালুকদার খালেকের জয়: খুলনা সিটিতে এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন। তার মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন; নারী ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন। মেয়র পদে ৫ জন ছাড়াও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের অনুপস্থিতির মধ্যে নিরুত্তাপ প্রচারের পর গোলযোগহীনভাবেই ভোটগ্রহণ হয়। খুলনায় ২৮৯টি ভোট কেন্দ্রের সবক’টিতে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়। বিকাল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষের ছয় ঘণ্টার মধ্যে খুলনা নগরীর শিল্পকলা একাডেমিতে স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে সমন্বিত ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন। ঘোষিত ফল অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার খালেক নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮২৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আউয়াল হাতপাখা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৬০ হাজার ৬৪টি।

খুলনায় মেয়র পদে অন্য প্রার্থীরা হলেন মো. শফিকুল ইসলাম মধু (জাতীয় পাটি, লাঙ্গল- ১৮০৭৪ ভোট), এস এম শফিকুর রহমান (স্বতন্ত্র, টেবিল ঘড়ি- ১৭২১৮ ভোট), এস এম সাব্বির হোসেন (জাকের পার্টি, গোলাপ ফুল- ৬৯৬ ভোট)।

বরিশালের নতুন মেয়র খোকন

বরিশাল সিটিতে মোট ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন এবং নারী ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন। মেয়র পদে ৭ জন ছাড়াও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৫ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বর্জনের পাশাপাশি বৃষ্টির বাগড়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ৫১ দশমিক ৪৬ শতাংশ ভোটগ্রহণ হয়েছে।

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের খোকন সেরনিয়াবাত মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন। সোমবার অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে তিনি ৫৩ হাজার ভোটে হারান ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতী ফয়জুল করীমকে। তিনি এবার প্রথম এই নগরীর মেয়র হচ্ছেন। বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের অনুপস্থিতির মধ্যে প্রচার নিরুত্তাপ হলেও ভোটের দিন উত্তাপ ছড়িয়েছিল মেয়র প্রার্থী ফয়জুলের উপর হামলা।

বরিশালে ১২৬টি ভোট কেন্দ্রের সবক’টিতে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়। বিকাল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষের ছয় ঘণ্টার মধ্যে নগরীর শিল্পকলা একাডেমিতে স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে সমন্বিত ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফয়জুল করীম হাতপাখা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮২৮টি। মেয়র পদে অন্য প্রার্থীরা হলেন- মো. ইকবাল হোসেন (জাতীয় পার্টি, লাঙ্গল-৬৬৬৫ ভোট), মো. আলী হোসেন হাওলাদার (স্বতন্ত্র, হরিণ- ২৩৮১ ভোট), মিজানুর রহমান বাচ্চু (জাকের পাটি, গোলাপফুল-২৫৪৬ ভোট), মো. আসাদুজ্জামান (স্বতন্ত্র, হাতি- ৫২৯ ভোট), মো. কামরুল আহসান (স্বতন্ত্র, টেবিল ঘড়ি- ৭৯৯৯ ভোট)।

ভোটগ্রহণের মধ্যে দুপুরে নগরীর ছাবেরা খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার পর হাতেম আলী কলেজ চৌমাথার কাছে হামলার মুখে পড়েন হাতপাখার মেয়র প্রার্থী ফয়জুল করীম।, যা নিরুত্তাপ ভোটে উত্তাপ ছড়ায়। চরমোনাই পীরের ছেলে ফয়জুল এই হামলার জন্য আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দায়ী করেছেন। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। ইসির নির্দেশের পর মূল হামলাকারীকে গ্রেফতারের কথা জানা গেছে।

ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের ফল প্রত্যাখ্যান ও ভোট বর্জন: সিটি নির্বাচনে মারাত্মক অনিয়ম হয়েছে দাবী করে বরিশাল ও খুলনার ফলাফল প্রত্যাখান করেছে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ। দলের আমীর মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম পীরসাহেব চরমোনাই সোমবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষনা দেন। সে সময় তিনি বলেন, প্রশাসন যখন সরকার দলীয় করণ হয়। তখন সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন কখনই আশা করতে পারি না। যার কারনে এই সরকার পতনের দাবী জানাচ্ছি। সেইসাথে নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করছি। তিনি বলেন, সিলেট ও রাজশাহী নির্বাচনে আমাদের প্রার্থী আছে। আমরা সেই নির্বাচনের প্রার্থীতা থেকে তাদেরকে বয়কটের ঘোষনা দিচ্ছি। ফলে তারা আর ওই নির্বাচন করবে না।কারন সুন্দর পরিবেশ নাই। তিনি বলেন, আজ নির্বাচনের অনিয়ম ও নায়েবে আমীরের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ প্রতিবাদ মিছিল করেছি। আর আগামী শুক্রবার বাদ জুমা সারাদেশ ব্যাপি এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মিছিল করবো। পাশাপাশি পরবর্তীতে আরও কর্মসূচি জাতির সামনে ঘোষণা করবো।

সিইসির সন্তুষ্টি

বরিশাল-খুলনা সিটি করপোরেশনসহ দুই পৌরসভায় ‘আনন্দমুখর’ পরিবেশে ভোট হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। দু’চারটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সার্বিকভাবে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ এ ভোটে খুলনায় গড়ে মেয়র পদে প্রায় ৪৫ শতাংশ এবং বরিশালে গড়ে প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পড়তে পারে বলে তারা ধারণা করছেন। পৌরসভা দুটিতে ভোটের এ হার হতে পারে ৫৫ শতাংশ। সোমবার ভোট শেষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

একজন মেয়র প্রার্থীকে রক্তাক্ত করা হলেও এ নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ বলা যায় কি না?- এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, “এটা আপেক্ষিক। রক্তাক্ত সব কিছু আপেক্ষিক, উনি কি ইন্তেকাল করেছেন? আমরা দেখেছি-না, উনি কি কতটা… উনার রক্তক্ষরণটা দেখিনি। যতটা শুনেছি-উনাকে কেউ পেছন থেকে ঘুষি মেরেছে। উনিও বলেছেন, ভোট বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না, তাকে আক্রমণ করা হয়েছে।”

বরিশালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থীর ওপর এ হামলার ঘটনার পর নির্বাচন শেষে যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না ঘটে সে বিষয়ে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। সিইসি বলেন, দু’চারটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সার্বিকভাবে সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights