বিশেয প্রতিনিধি:
ম্যারিকা মানেই যেন জৌলুস আর সমৃদ্ধি। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় দুনিয়ার অনেক মানুষের কাছে স্বপ্নের গন্তব্যও বটে! তবে কেমন আছে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ? উত্তরটা কিন্তু চমকে যাবার মতো! দিনকে দিন সেখানকার মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও দারিদ্র্য বাড়ছে।
২০২১ সালের পরিসংখ্যান বলছে, সামগ্রিকভাবে: যুক্তরাষ্ট্রের ৩ কোটি ৭৯ লাখের বেশি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে, যা সামগ্রিক জনসংখ্যার ১১.৬ শতাংশ। অর্থাৎ এই কোটি কোটি মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার খেতে পাননি। দেশটা কিন্তু ম্যারিকা, ভুলবেন না! সরকারি তথ্য আরও বলছে, ২০২০ সালে ৩ কোটি ৭২ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৩৩ লাখ বেশি। এ সময়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের আয় ২.৯ শতাংশ কমেছে। ২০১৯ সালে এমন ধরনের পরিবারগুলোর আয় ছিলো ৬৯ হাজার ৬০০ ডলার। ২০২০ সালে এই আয় কমে ৬৭ হাজার ৫০০ ডলারে নামে। ২০১১ সালের পর সেই প্রথম মার্কিন অর্থনীতির ব্যাপক পতন ঘটে।
সুপার পাওয়ার আর বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল সংখ্যক নাগরিক ক্ষুধার্ত পেটে বিছানায় ঘুমোতে যান। প্রতি ২৬ পরিবারের মধ্যে একটি চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীন। তারা প্রায় সময়ই প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবার খায় অথবা কোনও এক/দুই বেলা খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। প্রান্তিক মানুষজন তাদের জীবনমানের একটুখানি উন্নতি ঘটাতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে। গ্রামীণ এলাকার পরিবারগুলোকে মেট্রো এলাকার তুলনায় ক্ষুধার সঙ্গে লড়তে হয়েছে বেশি।
আপাত সভ্য আমেরিকাজুড়ে যে বর্ণবাদী ঘৃণার চাষাবাদ হয়, তা এখন আর তেমন কারও অজানা হয়। সঙ্গত কারণেই সেখানে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আর দারিদ্র্যের ক্ষেত্রেও তারাই বড় ধরনের ভিক্টিম। সামগ্রিক জনসংখ্যার ক্ষেত্রে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা যেখানে ১০শতাংশের কিছু বেশি, সেখানে কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিনদের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার হার যথাক্রমে ১৯.৮ শতাংশ এবং ১৬.২ শতাংশ। এদিকে শ্বেতাঙ্গদের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার হার ৭ শতাংশ। ২০২০ সালের বাস্তবতাও ছিল একইরকম। সে সময় শ্বেতাঙ্গদের দারিদ্র্যের হার যেখানে ১০.১ শতাংশ ছিল, সেখানে কৃষ্ণাঙ্গদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ১৯.৫ শতাংশ। আর ল্যাটিনদের ক্ষেত্রে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার হার ছিল ১৭ শতাংশ।
ক্ষুধা থেকে রেহাই নেই মার্কিন শিশুদেরও। সেখানকার কত কত শিশুকে যে না খেয়ে থাকতে হয়! ২০২০ সালে পাওয়া সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেখানকার খাদ্যনিরাপত্তাহীন শিশুর সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ। শিশু রয়েছে, এমন প্রতি ৮টি পরিবারের মধ্যে একটি পরিবার প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্য সংগ্রহে ব্যর্থ হয়। প্রতি ৬ জনের মধ্যে একজন শিশু দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। যা ২০১৯ সালের তুলনায় ১৪.৪ শতাংশ বেশি।
আমেরিকার হাল যদি এই হয়, তাহলে ভাবুন তো, গোটা বিশ্বের চিত্রটা কেমন? জাতিসংঘের সদস্যভূক্ত ১৯৩টি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ার অঙ্গীকার করে একটি চুক্তি সই করেছে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে: “ক্ষুধা মুক্ত বিশ্ব, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন ও পুষ্টিমান উন্নত করা এবং টেকসই কৃষির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। জাতিসংঘ বলছে, ২০১৫ সালে এই লক্ষ্য নির্ধারণের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে ক্ষুধা বাড়ছে। সুতরাং বিশ্ব ক্ষুধামুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ পথে নেই। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ৮৪ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।