আজ ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

কক্সবাজারে বন্যার তাণ্ডবে ৬২২ কোটি টাকার ক্ষতি

  • In সারাবাংলা
  • পোস্ট টাইমঃ ৩০ আগস্ট ২০২৩ @ ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ৩০ আগস্ট ২০২৩@১০:২৮ পূর্বাহ্ণ
কক্সবাজারে বন্যার তাণ্ডবে ৬২২ কোটি টাকার ক্ষতি

শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি।।

কক্সবাজারে ভয়াবহ বন্যায় যোগাযোগ, কৃষি, শিক্ষা, পর্যটন ও মৎস্য খাতে প্রায় ৬২২ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে। তবে বন্যায় চকরিয়া-পেকুয়ার অধিকাংশ মৎস্য ঘের, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হিসেব করলে টাকার অঙ্কে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে অনেকের ধারণা।

গত ৭ আগস্ট থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত টানা বন্যা পরবর্তী সময়ে জেলার ৬০টি ইউনিয়নে পর্যবেক্ষণ শেষে ৬২১ কোটি ৯১ লাখ ৭৭ হাজার টাকার ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান।

এ দূর্যোগে এক লাখ ২ হাজার ৬০৮টি পরিবারের ৫ লাখ ১৩ হাজার ৪০ জন লোক পানিবন্দি হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ সময় বন্যার পানিতে ডুবে এবং পাহাড়ধসের ঘটনায় ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) কাছে জেলা প্রশাসনের পাঠানো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ছবি- বিডিহেডলাইন্স

জেলা প্রশাসনের দূর্যোগ ও ত্রাণ শাখার দেওয়া তথ্যমতে, গেলো ৭ আগস্ট টানা বর্ষণ শুরু হলে কয়েকটি উপজেলায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। একইসঙ্গে পাহাড়ি ঢলের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। বিশেষ করে চকরিয়া এবং পেকুয়া উপজেলায় প্রায় সব ইউনিয়ন পানির নিচে তলিয়ে যায়। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং বিভিন্ন উপসড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা।

বন্যা পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসন কর্তৃক পাওয়া তথ্যমতে, জেলায় ৫০৬ দশমিক ২৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়। যেখানে ৩ হাজার ১৮০টি ঘর, ১২ হাজার ২৩৯ দশমিক ৫ হেক্টর ফসলি জমি, ২২টি কালভার্ট, ২৬টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ১২ হাজার ৬২৩টি নলকূপ এবং ২৮ হাজার ৯৩৬টি লেট্রিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া পানিতে ভেসে ৪২টি ছাগল, ৩২টি গরু, একটি মহিষ, এক হাজার ১১৬টি হাঁস এবং এক লাখ ৩৬ হাজার ৯১০টি মুরগি মারা যায়।

ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৪ দশমিক ৯৮ কিলোমিটার পাকা সড়ক, ৪৯ দশমিক ২৯ কিলোমিটার আধা-পাকা সড়ক এবং ১২৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক, ৭৭ দশমিক শূন্য ৫ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন, ৪৮টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও ১৮২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুকুর, দীঘি, খামার ও চিংড়ি ঘের। বন্যায় ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে ১৫টি।

চকরিয়া-পেকুয়াসহ রামু উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি-গর্জনিয়া এলাকায় সড়কের পাশে ভেজা ধান শুকাচ্ছিলেন কৃষক নুর জাহান বেগম। তিনি বলেন, মাঠের সব রোপন করা ধান চারা পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরে থাকা ধানও ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন এইগুলা শুকালেও এ থেকে ধান পাওয়া যাবে না।

সদর উপজেলার খরুলিয়া কোনার পাড়া এলাকার কৃষক নুরুল আলমের শশা ক্ষেত তলিয়ে গিয়েছিল। এবার তলিয়েছে তার ঢ়েঁড়শ ক্ষেত।

নুরুল আলম বলেন, শশা ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ার ক্ষতি পোষাতে ঋণ করেছিলাম। ৪০ শতক জায়গায় ঢ়েঁড়শ ক্ষেত করেছিলাম। এখন এটিও তলিয়ে গেল। না খেয়ে মরা ছাড়া এখন আর আমার সামনে কোনো পথ নেই।

একই এলাকার আব্দুস সালাম বলেন, সে যাত্রায় কিছু ধান রক্ষা করতে পারলেও শেষ রক্ষা আর হয়নি। কারণ এবার বানের পানিতে ঘরে মজুত সেই ধান ভেসে গেছে।

আক্ষেপ করে তিনি আরোও বলেন, পানি আমার সব নিয়ে গেছে। এত কষ্ট করে, এত টাকা খরচ করে ধান তুলেছিলাম। চোখের পলকেই ঢল এসে তা ভাসিয়ে নিয়ে গেল। এখন চাষাবাদ ফেলে আমার দিনমজুর হতে হবে।

ডিজি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কাছে পাঠানো পত্রে জেলা প্রশাসক উল্লেখ করেন, বন্যায় তাৎক্ষণিক কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। দুর্গত এলাকার ৩৫ হাজার ৭৫২ জন লোককে নিকটবর্তী ২০৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির পর আশ্রিত সবাই নিজ গৃহে ফিরে যান। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোতে মানবিক সহায়তায় এরইমধ্যে ২১০ মেট্রিক টন চাল, ১৩ লাখ টাকা, ৬ হাজার ব্যাগ শুকনা খাবার, ৬০০ বান্ডিল ঢেউটিন ও গৃহনির্মাণ বাবদ ১৮ লাখ টাকা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এছাড়াও মৃত ২০ জন ব্যক্তির পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে ৫ লাখ টাকা মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

আরও উল্লেখ করা হয়, দূর্যোগকালীন সময় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে ৩৭ হাজার ৫০০টি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, পানিসহ জেরিকেন ২০০টি এবং ৫ হাজার লিটার পানি সরবরাহ করা হয়। দুর্যোগ শেষ হওয়া পর্যন্ত আরও অর্ধলাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত ছিল।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, টানা কয়েকদিনের দূর্যোগের ভোগান্তি দেখে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুল হক ১১ আগস্ট কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায় দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে ৪টি স্পটে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করেছেন। এখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে জেলার সকল নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। সম্ভাব্য দুর্যোগ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলার চলমান সার্বিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে প্রশাসন।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights