আজ ১৪ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ৬ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

বরাদ্দ পাওয়া ১০টি ঘর বিক্রির অভিযোগ

  • In অনুসন্ধান, সারাবাংলা
  • পোস্ট টাইমঃ ১১ আগস্ট ২০২৩ @ ০৯:২৩ অপরাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ২৬ আগস্ট ২০২৩@১১:১৪ অপরাহ্ণ
বরাদ্দ পাওয়া ১০টি ঘর বিক্রির অভিযোগ

আইয়ুব আলী,
নীলফামারী প্রতিনিধি॥

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর বিক্রির অভিযোগ উঠেছে সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে। বরাদ্দকৃত ঘরের মধ্যে ১০টি ঘর প্রতিটি ঘর ৪০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। এসব ঘরগুলোতে এখন বসবাস করছেন ক্রয়কৃত মালিকরা এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

সূত্রে জানা যায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ২০২০ সালে ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের কেল্লাপাড়া গ্রামে নির্মাণ করা হয় ৫০টি ঘর। ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ওইসব ঘর হস্তান্তর করা হয় সুবিধাভোগীদের মাঝে। কিন্তু ওই ৫০ ঘরের মধ্যে ১০টি ঘর সম্পদশালীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে বরাদ্দপ্রাপ্তরা। দুই শতক জমিসহ প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা।

স্থানীয় ও এলাকাবাসীরা জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দে অনিয়ম করেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তারাই জমি থেকে ঘর পর্যন্ত সব কিছু বুঝে দেওয়ার কাজ করেছেন। নিজের নামে জমি আর ঘর বাড়ি থাকার পরে অনেকে ঘর পেয়েছেন। এমনও অভিযোগ করেছেন তারা। ফলে প্রকৃত ভূমিহীনরা পাননি সরকারের বরাদ্দ দেয়া ঘর। যাদের সব কিছু আছে তারাই আজ ঘর বিক্রি করে দিচ্ছে দুই টাকা লাভের আশায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি জানান, আমি একটা ঘর কিনে নিতে চেয়েছিলাম, সেখানে অন্যজনকে দিবো বলে। যার কাছে নিতে গেলাম, তিনি আমার কাছ থেকে চাইলেন ৯৮ হাজার টাকা। আমি শুনে অবাক হয়ে গেলাম। পরে ওই ঘর বিক্রি হলো লাখ টাকায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের কেল্লাপাড়া গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩২ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন রমিছা বেগমে। অথচ ওই ঘরে বসবাস করছেন আফাজ উদ্দিন ও আকতারা দম্পতি। সরকারের বিভিন্ন নথিতে রয়েছে রমিছা বেগমের নাম। তাহলে কিভাবে ওই ঘর পেলে আফাজ উদ্দিন ও আকতারা দম্পতি। জানতে কথা হয় আকতারা বেগমের সাথে। তিনি জানান, এই ঘর চুক্তিপত্রের মাধ্যমে ৯৫ হাজার টাকায় কাগজে কলমে থাকা রমিছা বেগমের কাছে নিয়েছেন।

২৫ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন সুফিয়া খাতুন ও নূর ইসলাম দম্পতি। সেই ঘর ৫৫ হাজার টাকায় চুক্তিপত্রের মাধ্যমে কিনে বসবাস করছেন শাহ আলম। একই ঘটনা, ২৬ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন সিদ্দিকুর রহমান ও মমেনা খাতুন দম্পতি। চুক্তিপত্রের মাধ্যমে এই ঘর ৫০ হাজার টাকায় কিনে সেখানে বসবাস করছেন সোকজান বেগম।

৫০ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন সুরুজ্জামান আলী ও হালিমা খাতুন দম্পতি। চুক্তিপত্রের মাধ্যমে এই ঘরও ৫৭ হাজার টাকায় কিনে বসবাস করছেন মহছেনা বেগম ও মমিনুর রহমান দম্পতি। একই অবস্থা ১২, ৩০, ৩৩, ৩৭,৩৯ ও ৪৪ নম্বর ঘরেও। তবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা বলেন, যাদের নামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ হয়েছিল, তারা এখানে কেউ থাকেনা। কারণ তারা টাকা নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে। তবে, জমি ও ঘর বাড়ি না থাকায় এবং আবেদন করেও যারা ঘর পাননি তারাই এসব ঘর কিনে নিয়ে বসবাস করছেন।

২৫ নম্বর ঘর বরাদ্দ পাওয়া নূর ইসলাম ঘর বিক্রির কথা স্বীকার করে বলেন, শাহ আলম ভূমিহীন হওয়ায় তার কাছে ৪০ হাজার টাকায় ঘরটি বিক্রি করেছি। ২৬ নম্বর ঘর বরাদ্দ পাওয়া সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আশ্রয়ণের ঘর বিক্রি করিনি। যেহেতু আমি বাড়িতে থাকিনা, তাই বাড়িটিতে থাকতে দিয়েছি সোকজান বেগমকে।

ঘর বরাদ্দে অনিয়মের বিষয়ে তৎকালীন ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানিনা। তবে, সে সময়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যরা ঘর বরাদ্দের তালিকা তৈরী করেছিলেন। তারাই হয়তো এটা করতে পারে। এখানে আমার কোন ভূমিকা বা স্বার্থ নেই।

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন বলেন, ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের কেল্লাপাড়া গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পে যে ১০টি ঘর বিক্রির কথা বলা হচ্ছে তা বিক্রি বা হস্তান্তরের কোন সুযোগ নেই। এর পরেও আমরা সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত করবো। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights