।।ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক।।
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো সামরিক অনুশীলন এয়ার ডিফেন্ডার ২০২৩শুরু হলো আজ৷ জোটের কোনো সদস্য আক্রান্ত হলে ন্যাটোর জবাব কেমন হবে মহড়ায় তা দেখানো হবে৷ ১৯৪৯সালে সামরিক জোট গঠিত হওয়ার পর এটি ন্যাটোর সবচেয়ে বড় মহড়া৷ জার্মানি এই মহড়ার “হোস্ট” এবং “লজিস্টিক্যাল হাব” হিসেবে কাজ করবে৷
চার বছরের প্রস্তুতির পর ন্যাটো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এ বিমান প্রতিরক্ষা মহড়া হচ্ছে আজ ১২জুন৷ জার্মানির আকাশে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ তিনটি ফ্লাইট এলাকা বেসামরিক বিমান চলাচলের জন্য অস্থায়ীভাবে বন্ধ থাকছে৷ এতে বেসামরিক ফ্লাইট চলাচলে দেরি হতে পারে৷ ১২থেকে ২৩জুন পর্যন্ত- ২৫০টি বিমান ছয়টি সামরিক ঘাঁটি জুড়ে অবস্থান করবে৷ মহড়ায় ২৫টি দেশ অংশ নেবে৷ যুক্তরাষ্ট্র একাই আটলান্টিকজুড়ে ১০০টি বিমান পাঠিয়েছে৷ আকাশ-মহড়ায় অংশগ্রহণকারীরা তিনটি ফ্লাইট অঞ্চলে সংকট পরিস্থিতিতে কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে তার প্রশিক্ষণ হবে আজ। উত্তর সাগরে উত্তর জার্মানির উপর, পূর্বে এবং দক্ষিণ জার্মানির একটি ছোট স্ট্রিপে এই মহড়া চলছে৷ এই অঞ্চলগুলিতে দৈনিক পর্যায়ক্রমে কয়েক ঘণ্টা বেসামরিক বিমান চলাচল বন্ধ আছে৷ ইউরোপের আকাশ বিশ্বের ব্যস্ততম উড়ানপথের একটি৷ এয়ার ডিফেন্ডার-২৩ এর পাশাপাশি বেসামরিক বিমানের চলাচল যাতে প্রভাবিত না হয় তা নিশ্চিতের চেষ্টা করে মহড়া চলছে।
১০দিনের সামরিক মহড়া চলাকালীন জার্মান বিমানবন্দরগুলি তাদের পরিচালনার সময়ও রাত অবধি বাড়িয়েছে৷ জার্মান বিমান বাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইঙ্গো গারহের্ৎজ বলেন- আশা করি, এই সমস্ত ব্যবস্থা কার্যকর হলে, কোনো ফ্লাইট বাতিল হবে না৷ তবে বিমান চলাচলে দেরি হওয়ার বিষয়টি তিনি উড়িয়ে দেননি। জার্মান বিমান চালনা বিশেষজ্ঞ ক্লেমেন্স বলিনজারের মতানুসারে, জার্মান বেসামরিক এবং সামরিক নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার অপারেটরদের কাজে সমন্বয় করা হয়েছে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন- ফ্লাইট কন্ট্রোলাররা বিমানবাহিনীতে তাদের সহকর্মীদের সঙ্গে একটানা যোগাযোগ বজায় রাখছেন৷
ফরাসি বিমান বাহিনী সাধারণ কোনো মহড়া বা অভিযান চলাকালীন নির্ধারিত ফ্লাইটের জন্য বারবার পুরো ফ্লাইট জোন বন্ধ করে দেয়৷ সেক্ষেত্রে জার্মানিতে বেসামরিক এবং সামরিক ফ্লাইটগুলি প্রতিদিন একে অপরের সঙ্গে সমন্বয় করে চলে৷ ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় জার্মান এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের এটি একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের টরবেন আর্নল্ড বলেন- ন্যাটো তার এয়ার ডিফেন্ডার মহড়ার মাধ্যমে শত্রু পক্ষকে প্রতিরোধের একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা পাঠাতে চায়৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন- ‘তারা স্পষ্ট রাজনৈতিক সংকেত দিতে চায়৷ তারা বোঝাতে চায়, যদিও এই আকাশসীমা অত্যন্ত ব্যস্ত। তবু আমরা এর প্রতিটা কোনা রক্ষা করতে চাই৷
ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর ১০হাজারেরও বেশি সেনা বহু মহড়ায় অংশ নিচ্ছে৷ বিমান বাহিনীর তরফে গেরহার্ৎজ বলেন- এর মধ্যে কিছু মহড়া স্থলভিত্তিক হবে, যার মধ্যে একটি হলো “এয়ারফিল্ড থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া”। ২০২১সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা আফগানিস্তানে তাদের মিশন দ্রুত শেষ করার পরে কাবুল বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়৷ সেই সময়েই এই অনুশীলনটি সময়সূচিতে রেখেছিল ন্যাটো৷ আকাশ থেকে স্থল সেনাদের সমর্থন, শত্রু জোটের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিমান এবং ন্যাটোর ফাইটার বোমারু বিমানের মধ্যম-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের বাঁধা এ জাতীয় পরিস্থিতিও মহড়ার অংশ হিসাবে চলছে৷ মার্কিন বাহিনী মহড়ায় অংশ নিতে জোটের সবচেয়ে আধুনিক ফাইটার জেট এফ-৩৫ স্টিলথ কমব্যাট এয়ারক্রাফট পাঠিয়েছেন৷ নর্থ সি এলাকায় শত্রু সাবমেরিন বা জাহাজের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক মহড়া দেখা হচ্ছে৷ আর্নল্ড উল্লেখ আরো করেছেন- শত্রু মহাদেশ ছাড়া অন্য অঞ্চল থেকেও আক্রমণ করতে পারে।
এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে, যখন এই ‘শত্রু’ এর কথা আসে, তখন ইউরোপের অনেকেই প্রথমে রাশিয়ার কথাই ভাবে৷ ২০২২সালের ২৪ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে৷ তারপর থেকে একটানা তারা ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে৷ গত ৭জুন বার্লিনে মিডিয়ার কাছে এয়ার ডিফেন্ডার ২৩-এর পরিকল্পনা উপস্থাপন করার সময়, লেফটেন্যান্ট জেনারেল গেরহার্ৎজ একবারও রাশিয়ার কথা উল্লেখ করেননি৷ জার্মানিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আমি গুটমান বলেন- বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছেও শক্তি প্রদর্শনের একটি দিক এই মহড়া৷ মার্কিন কর্মকর্তা বার্লিনে সাংবাদিকদের বলেন- ন্যাটোতে আমাদের মিত্র বাহিনীর তৎপরতা প্রদর্শন করবে এটি৷ রুশ প্রেসিডেন্টকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন- আমি খুব অবাক হই, যদি কোনো বিশ্বনেতা এই জোটের শক্তির বিষয়টি, একাত্মতার দিকটি খেয়াল না করে৷ পুতিনও এর মধ্যে রয়েছেন৷
সূত্রঃ ডয়চে ভেলে।