আজ ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ও ২৫শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এবং ৬ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বৈশ্বিক মন্দায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে

  • In জাতীয়, শীর্ষ
  • পোস্ট টাইমঃ ২২ জুলাই ২০২৩ @ ০১:১৯ অপরাহ্ণ ও লাস্ট আপডেটঃ ২২ জুলাই ২০২৩@০১:২০ অপরাহ্ণ
বৈশ্বিক মন্দায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে

।।নিজস্ব প্রতিবেদক।।

বৈশ্বিক মন্দায় বিশ্বের প্রায় সব দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে। ফলে ডলারের সংকট বেড়েছে। এতে ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার মান কমেছে। ফলে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। বৈদেশিক খাত বিবেচনায় বেশির ভাগ দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা দুর্বল অবস্থানে চলে গেছে। শক্তিশালী অবস্থানে আছে হাতেগোনা কয়েকটি দেশ। তবে আশার কথা হচ্ছে, প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুতগতিতে বৈশ্বিক অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) থেকে গত সপ্তাগের শেষের দিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের অন্য এক প্রতিবেদনে দেখা যায়- বাংলাদেশেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। একই সঙ্গে চলতি হিসাবে ঘাটতি বেড়ে গিয়ে এখন আবার কমতে শুরু করেছে। বৈদেশিক খাতের দিক থেকেই বিশেষ করে ডলার সংকটে টাকার মান পড়ে যাচ্ছে। টাকার মান ধরে রাখতে ও বৈদেশিক দেনা শোধে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়- ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বেশির ভাগ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে। যেসব দেশের বৈদেশিক মুদ্রা খরচের চেয়ে আয় বেশি ছিল তাদের আয় অনেক ক্ষেত্রে কমে গেছে। ফলে অনেকে ঘাটতির প্রান্তসীমায় (বর্ডার লাইন) পৌঁছেছে। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, জাপানসহ অনেক দেশের রিজার্ভ কমেছে। তবে বেড়েছে সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইডেন ও তুরস্কের।

বৈদেশিক মুদ্রা বা ডলার আয়ের চেয়ে খরচ বেশি হওয়ায় অনেক দেশে সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে ওই সব দেশ অর্থনৈতিকভাবে সংকটে পড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে আর্জেন্টিনা ও ইটালির অবস্থান দুর্বল। অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চীন, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্পেন, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি বেশ ভালোভাবেই দুর্বলতার দ্বারপ্রান্ত দিয়ে এগোচ্ছে। বেলজিয়াম ভালোভাবেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। কানাডা, ফ্রান্স, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এখন পর্যন্ত মাঝারি মানের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। জার্মানি, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, থাইল্যান্ড ও সুইডেন শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। ভারত, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়- ২০২২ সালে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৩৭৭ কোটি ডলার। ২০২১ সালে ছিল ৪৬১৫ কোটি ডলার। এক বছরের হিসাবে দেশের রিজার্ভ কমেছে ১২৩৮ কোটি ডলার। ২০২২ সালে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল ১৮৬৪ কোটি ডলার। বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভ ২৯৯৭ কোটি ডলার। এ হিসাবে রিজার্ভ কমেছে ১৬১৮ কোটি ডলার।

অস্ট্রেলিয়ার রিজার্ভ ২০২১ সালে ছিল ৫৮০০ কোটি ডলার, গত বছর তা কমে ৫৭০০ কোটি ডলারে নেমেছে। ওই সময়ে জিডিপির হিসাবে রিজার্ভ ৩ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ৩ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

ইউরোপীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মোট রিজার্ভ ২০২১ সালে ছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। গত বছর তা কমে ১ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে নেমেছে। এদিকে জিডিপির হিসাবে রিজার্ভ ৮ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে। কারণ গত বছর জিডিপির আকার কমে গেছে। যে কারণে ডিজিপির হিসাবে বেড়েছে।

জাপানের রিজার্ভ ২০২১ সালে ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। গত বছর তা কমে ১ লাখ ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার হয়েছে। তবে জিডিপির হিসাবে ২৮ দশমিক ১ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৯ শতাংশ হয়েছে। গত বছর অর্থনৈতিক মন্দায় জিডিপির আকার কমায় রিজার্ভের অনুপাত বেড়েছে।

সিঙ্গাপুরের রিজার্ভ আলোচ্য সময়ে ৪২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার থেকে কমে ২৮ হাজার ৯০০ কোটি ডলার হয়েছে। এই সময়ে জিডিপির হিসাবে রিজার্ভের অনুপাত ১০০ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমে ৬২ শতাংশ হয়েছে। রিজার্ভ কমার পাশাপাশি দেশটি অর্থনৈতিক মন্দায়ও কাবু হয়েছে।

সুইজারল্যান্ডের রিজার্ভ ১ লাখ ১১ হাজার থেকে কমে ৯২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার হয়েছে। জিডিপির হিসাবে ১৩৮ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমে ১১১ শতাংশ হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের রিজার্ভ আলোচ্য সময়ে ১৯ হাজার ৪০০ কোটি ডলার থেকে কমে ১৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলার হয়েছে। জিডিপির হিসাবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের রিজার্ভ ২০২১ সালে ছিল ৭১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। গত বছর তা কমে ৭০ হাজার ৭০০ কোটি ডলার নেমেছে। জিডিপির হিসাবে ৩ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ২ দশমিক ৮ শতাংশ হয়েছে।

আজেন্টিনার রিজার্ভ ওই সময়ে ৪ হাজার কোটি ডলার থেকে বেড়ে সাড়ে ৪ হাজার কোটি ডলার হয়েছে। জিডিপির হিসাবে ৮ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ৭ দশমিক ১ শতাংশ হয়েছে। দেশটির অর্থনৈতিক সংকট প্রকট হওয়ায় রিজার্ভ সামান্য বাড়লেও মুদ্রার মান ভয়াবহভাবে কমে যাচ্ছে। ফলে মূল্যস্ফীতির হারও বেড়ে যাচ্ছে।

ব্রাজিলের রিজার্ভ আলোচ্য সময়ে ৩৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার থেকে কমে ৩২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার হয়েছে। জিডিপির হিসাবে ২২ শতাংশ থেকে কমে ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছে।

চীনের রিজার্ভ ২০২১ সালে ছিল ৩ লাখ ৪২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। গত বছর তা ৩ লাখ ১২ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে নেমেছে। জিডিপির হিসাবে ১৯ দশমিক ৩ থেকে কমে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে।

ভারতের রিজার্ভ আলোচ্য সময়ে ৬৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার থেকে কমে ৫৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার হয়েছে। জিডিপির হিসাবে ২০ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার রিজার্ভ একই সময়ে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার থেকে কমে ১৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার হয়েছে। জিডিপির হিসাবে তা ১২ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমে ১০ দশমিক ৪ হয়েছে।

মালয়েশিয়ার রিজার্ভ ২০২১ সালে ছিল ১১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। সেখান থেকে কমে ১১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার হয়েছে। জিডিপির হিসাবে তা ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমে ২৮ দশমিক ১ হয়েছে।

রাশিয়ার রিজার্ভ ৬৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার থেকে কমে ৫৮ হাজার ২০০ কোটি ডলার হয়েছে। জিডিপির হিসাবে তা ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে কমে ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে।

থাইল্যান্ডের রিজার্ভ একই সময়ে ২৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার থেকে কমে ২১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে নেমেছে। জিডিপির হিসাবে তা ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমে ৪০ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে।

২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সৌদি আরবের রিজার্ভ ৪৭ হাজার ৪০০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ৪৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলার হয়েছে। অবশ্য জিডিপির হিসাবে তা ৫৪ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমে ৪৩ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে। ওই সময়ে তাদের জিডিপির আকার যেভাবে বেড়েছে সেভাবে রিজার্ভ বাড়েনি। ফলে জিডিপির অনুপাতে রিজার্ভ কমেছে।

একই সময়ে তুরস্কের রিজার্ভ ১১ হাজার কোটি ডলার থেকে বেড়ে ১২ হাজার ৯০০ কোটি ডলার হয়েছে। জিডিপির হিসাবে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার রিজার্ভ ৫৮০০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ৬১০০ কোটি ডলার হয়েছে। জিডিপির হিসাবে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছে।

সুইডেনের রিজার্ভ একই সময়ে ৬২০০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ৬৮০০ কোটি ডলার হয়েছে। জিডিপির হিসাবে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে।

নিউজ শেয়ারঃ

আরও সংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আলোচিত সংবাদ

নিউজ শেয়ারঃ
শিরোনামঃ
Verified by MonsterInsights