।।নিজস্ব প্রতিবেদক।।
চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি ও আউটসোর্সিংয়ের প্রতিবাদে রাজধানীর এফডিসি সিগন্যালে রেললাইন অবরোধ করে আন্দোলন করছেন রেলওয়ের অস্থায়ী নিয়োগকৃত শ্রমিকরা। এর ফলে ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের রেল-যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। রোববার (১৬জুলাই) সকাল ১০ টায় এফডিসি রেলগেট এলাকায় রেললাইনের ওপর ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে অস্থায়ী শ্রমিকবৃন্দ’ ব্যানারে অবস্থান শুরু করেন তারা। এসময় তিতাস কমিউটার ট্রেন আটকে দেন শ্রমিকরা।
জানা যায়- বাংলাদেশ রেলওয়েতে নিয়োগ পাওয়া অস্থায়ী শ্রমিকদের (টিএলআর) চাকরি ফেরত দেওয়া, স্থায়ীকরণ, আউটসোর্সিং প্রথা বাতিল করা এবং নিয়োগবিধি ২০২০ সংশোধন করে আগের মতো ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ৮ম শ্রেণি পাশ বহাল রাখার দাবিতে ট্রেন আটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন অস্থায়ী শ্রমিকরা। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা রেলওয়ে শ্রমিকরা বলেন- গত ১ জুলাই থেকে আমাদের চাকরি থাকছে না বলে জানিয়ে দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া জুলাই ও আগস্ট এ দুই মাস আমাদের বিনা বেতনে চাকরি করতে হবে। বিনা বেতনে চাকরি করলে যেন থাকি আর না করলে যেন চলে যাই- এ নির্দেশনা দিয়েছে রেলওয়ের ডিআরএম’রা (বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার)।
রেলওয়ে শ্রমিক মোঃ এমরান আক্ষেপ করে বলেন- রেলওয়েতে আমার চাকরির বয়স সাত বছর। আমরা এখানে অভিজ্ঞ। অথচ আমাদের বাদ দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে। আমাদের এখানে একেক জনের কাজের বয়স ৫ থেকে ১০-১২ বছর পর্যন্ত। এতদিন আমরা রেলওয়েতে সার্ভিস দিলাম, কিন্তু রেলওয়ে আমাদের মূল্যায়নই করল না।
গেটকিপার হীরা বলেন- আমরা বারবার রেল ভবনে এ বিষয়ে স্মারক লিপি দিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমাদেরকে বাদ দিয়ে তারা ঠিকাদারের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা করেছে। আমরা চাই আমাদের চাকরিটা ফেরত দেওয়া হোক। কারণ এ মুহূর্তে আমাদের আর অন্য কোনো চাকরি করার বয়স নেই। এতদিন রেলওয়ের সঙ্গে থেকে শেষ বয়সে এসে না খেয়ে মরব, সেটা তো হতে পারে না।
আন্দোলনকারী শ্রমিকদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, রেলওয়ের জনবল সংকট নতুন কিছু নয়। জনবল সংকট দূরীকরণে শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি শূন্য পদের বিপরীতে এতদিন অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে আসছিল। কিন্তু বর্তমানে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লোক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়া বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন অস্থায়ী শ্রমিকরা। বাংলাদেশ রেলওয়ের অস্থায়ী কর্মরত শ্রমিকদের পদগুলো হচ্ছে- মেকানিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং (গেটকিপার, ওয়েম্যান, লোকো খালাসী, ক্যারেজ খালাসী) সিগন্যালিং ইলেকট্রিক্যাল ও ট্রান্সপোর্টেশন (গেটকিপার, পোর্টার, পয়েন্টসম্যান) ইত্যাদি।
শ্রমিকরা বলেন- রেলের ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন পদে অস্থায়ীভাবে মোট ৭ হাজার শ্রমিক কর্মরত আছেন। আমাদের মধ্যে অনেকের চাকরির বয়স ৩-১০ বছর। বর্তমানে অনেকের বয়স ৩৫-৪০ বছরের মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের অন্য কোথাও চাকরি করার বয়স নেই। তারা আরো বলেন- বাংলাদেশ রেলওয়েতে কখনোই আউটসোর্সিং পদ্ধতি ছিল না। বর্তমানে আমাদের অস্থায়ী শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করার জন্য এটা চালু করা হয়েছে। যা আমাদের জীবন ধ্বংস করার পদ্ধতি বলে বিবেচিত। আমরা এই আউটসোর্সিং প্রথা বাতিল ও চাকরি ফেরত পাওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস বলেন- আমরা সকাল ১০টায় খবর পেয়েছি যে, এফডিসি সিগন্যালে রেললাইন অবরোধ করে রাখা হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন রেলওয়ে পুলিশের সদস্যরা।