রফিক প্লাবন
দিনাজপুর প্রতিনিধি।।
আগামী বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) উদযাপিত হবে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল-আজহা। দিনাজপুরে দক্ষিন এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ বড় ময়দান। ঈদুল আজহার প্রধান জামাত শুরু হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। বৃহৎ এই ঈদের জামাতে ঈমামতি করবেন মাওলানা শামসুল আলম কাশেমী। এবারও অন্তত ৫ লাখ মানুষ জামাতে নামাজ আদায় করবেন বলে মনে করছেন আয়োজকরা। ঈদের জামাতে মুসল্লীদের অংশগ্রহনের সুবিধার্থে এবারই প্রথম এই দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
“ঈদগাহ স্পেশাল ট্রেন” দু’টি চলাচল করবে ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও এবং পার্বতীপুর-দিনাজপুর-পার্বতীপুর রুটে। সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি মুসল্লিদের সুষ্ঠুভাবে নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে সবরকম প্রস্তুতি। সুষ্ঠুভাবে ঈদের জামাত সম্পন্নের জন্য নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গোড়-এ শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকেই এই মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে বড় কোন মিম্বর ছিলো না। ২০১৫ সালে স্থানীয় সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি মিনার নির্মানের পরিকল্পনা ও অর্থায়ন করেন। এরপর ২০১৭ সালে সম্পন্ন হয় নির্মাণকাজ। নির্মিত ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। গম্বুজগুলোর দুই ধারে ৬০ ফুট করে দুটি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাবের (যেখানে ইমাম দাঁড়াবেন) উচ্চতা ৪৭ ফুট। এর সঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। এছাড়া ৫১৬ ফুট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। দক্ষিন এশিয়ায় এত বড় ঈদগাহ মাঠ দ্বিতীয়টি নেই। এর আগে ঈদগাহের মধ্যে দিনাজপুর স্টেশন ক্লাব থাকলেও এবার তা সরানো হয়েছে। ফলে বেড়েছে ঈদগাহ-এর আয়তন।
পুরো মিনার সিরামিক্স দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলে ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে ওঠে। ২০১৭ সাল থেকেই প্রতিবারে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করছেন দিনাজপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
দিনাজপুর সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, মুসল্লীদের জন্য ৩’শটি ওজুখানা, ৪০টি টয়লেট ও খাবার পানি সরবরাহের জন্য ৫টি পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে ঈদগাহের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা। পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব-এর সমন্বয়ে ঈদগাহ মাঠে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। ঈদগাহ মাঠে স্থাপন করা হয়েছে ৫০টি সিসি ক্যামেরা। এছাড়াও মাঠের মাঝখানে স্থাপন করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার।
মঙ্গলবার (২৭ জুন ২০২৩) দিনাজপুর গোর এ শহিদ বড় ময়দানে এশিয়া মহাদেশের সর্বৃহৎ ঈদগাহে নামাজ আদায়ের জন্য ঈদগাহ মাঠ পরিদর্শন করেন সর্ববৃহৎ এই ঈদগাহ মিনারের উদ্যোক্তা ও পরিকল্পনাকারী এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি। এসময় উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ প্রমুখ।
হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি বলেন, আয়তনের দিক দিয়ে দিনাজপুর ঈদগাহ মাঠ চারগুণ বড়। গোর-এ শহীদ ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। উপমহাদেশে এত বড় ঈদগাহ আর নেই। আশা করছি এবারও অন্তত ৪/৫ লাখ মানুষ জামাতে নামাজ আদায় করবেন। এবার ঈদের জামাতে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা-উপজেলার মুসল্লীদের অংশগ্রহনের সুবিধার্থে এবারই প্রথম এই দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্পেশাল ট্রেনটি ঠাকুরগাঁও থেকে ট্রেন ছাড়বে ভোর ৫ টায়, দিনাজপুর রেল স্টেশনে পৌঁছাবে সকাল ৭ টা ১৫ মিনিটে। আবার নামাজ শেষে দিনাজপুর থেকে ছাড়বে সকাল ৯ টা ৩০ মিনিটে আর ঠাকুরগাঁও পৌঁছাবে সকাল ১১ টা ৩০ মিনিটে। মাঝে শিবগঞ্জ, পিরগঞ্জ, সেতাবগঞ্জ, মঙ্গলপুর, কাঞ্চন ষ্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে।
এদিকে পার্বতীপুর রেল স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়বে সকাল ৭ টায়, দিনাজপুর পৌঁছাবে সকাল ৭ টা ৪৫মিনিটে। আবার দিনাজপুর থেকে ছাড়বে সকাল ৯ টা ১৫ মিনিটে এবং পার্বতীপুর পৌঁছাবে ১০ টায়। মাঝে মন্মথপুর, চিরিরবন্দর, কাউগাঁ স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে।