মোঃ মাহবুবুল আলম
কাহালু বগুড়া।।
ছোট বেলা থেকে নাট্যচর্চা ও পরবর্তীতে একজন ভালো নাট্য সংগঠক বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলার পৌর সদরের মোঃ আব্দুল হান্নান। সংস্কৃতি জগৎ ও থিয়েটার চর্চায় মূলত তাঁর জ্ঞান ভালো হওয়ায় এলাকায় তিনি থিয়েটার হান্নান নামেই সবার কাছে বেশী পরিচিত।
মোঃ আব্দুল হান্নান, কাহালু বাজারের মৃত নমির উদ্দীনের ছেলে। তাঁর জন্ম ১৯৫৭ সালের ৭ আগস্ট, ১৯৬৮ সালে তিনি ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র, তখন থেকেই তিনি নাট্যচর্চার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বড় ভাইদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সুবাদে মোঃ আব্দুল হান্নান পারিবারিক ভাবেই রাজনীতি ও সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন।
ছোটবেলা থেকেই নিজেকে সফল সংস্কৃতি ব্যাক্তি ও নাট্যকর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে স্বপ্ন দেখতেন। মুক্তিযুদ্ধত্তোর বাংলাদেশ নবনাট্য আন্দোলনের সাথে নিজেকে এক সময় সম্পৃক্ত করেন আব্দুল হান্নান।তিনি হয়ে উঠেন একজন ভালো সংস্কৃতি ও নাট্যকর্মী। অভিনয়ের মাধ্যমে ধীরে ধীরে গ্রাম থেকে শহরে অসংখ্য সংস্কৃতি ও নাট্যকর্মীদের সাথে তিনি যোগাযোগ গড়ে তোলেন।
১৯৮৩ সালের ২৩ মে কাহালু থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয় । কাহালু থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম একজন। কাহালু থিয়েটার প্রতিষ্ঠার পর তিনি গ্রাম থিয়েটারের সাথে যুক্ত হয়ে প্রায় ৪০ বছর ধরে অবিরাম গতিতে থিয়েটার চর্চা করছেন। ভালো পথ নাটক ও মঞ্চ নাটক, প্রদর্শনের মাধ্যমে তিনি কাহালু থিয়েটারের পরিচিতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ ওপার বাংলায় পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়েছেন।
গ্রামীণ মেলা পত্তন, বগুড়া থিয়েটার ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের আয়োজনে বৈশাখী মেলা শুরুতে তিনি সক্রিয় ভুমিকা রাখেন। নিজ এলকায় জ্যৈষ্ঠ মেলা, পৌষ মেলা, আচার্য্য ড. সেলিম আল দীন লোক মেলা, পত্তন করাসহ এই জনপদের মানুষকে সংস্কৃতির সাথে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। তিনি নিরলসভাবে নাট্য চর্চায় কাজ করছেন। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার একজন তৃণমূলের কর্মী হিসেবে গ্রাম থিয়েটার আন্দোলন সারা বাংলায় ছড়িয়ে দিতে গ্রাম থেকে গ্রাম শহর থেকে শহর ঘুরে গ্রাম থিয়েটাররে সংগঠন গঠনে তাঁর ভুমিকা এখন পর্যন্ত চলমান আছে।
আব্দুল হান্নান পর্যায়ক্রমে কাহালু থিয়েটারের সভাপতি থেকে গ্রাম থিয়েটারের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী, রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের কার্যনির্বাহী সদস্য হয়েছেন। বর্তমান তিনি কাহালু থিয়েটারের সভাপতি, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৮৫ সাল থেকে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাথে যুক্ত হয়ে বর্তমানে তিনি গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
বর্তমানে আব্দুল হান্নান কাহালু থিয়েটারের পূণ্যভুমি থেকে তৈরী করেছেন অনেক গুণী শিল্পী ও অভিনেতা। অনেকে আবার এই জনপদে রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বে দিচ্ছেন। এলাকার লোকশিল্পী, ও বাউল শিল্পীদের সাথে নিবিড় সম্পর্ক রেখে তাদের সুখ-দুঃখের সাথে পার্শ্বে আছেন আব্দুল হান্নান। করোনা মহামারীসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে তিনি অসহায় শিল্পীদের সঙ্গী হয়ে তাদের সাহস দিয়েছেন এবং জীবন-জীবিকার বিষয়ে সোচ্চার তিনি ।
বগুড়া জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোট গঠনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা আছে এবং এখন পর্যন্ত সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাথে সম্পৃক্ত আছেন। এ পর্যন্ত তিনি আপট্রেন, ইতিহাস কাঁদে, চাষির ছেলে, এ পৃথিবী টাকার গোলাম, অনুসন্ধান, মা-মাটি-মানুষ, শাস্তি, বাসনসহ ১৮ টি নাটকে অভিনয় করেছেন। তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন ১২ টি মঞ্চনাটক ও ২৪টি পথনাটকের। আব্দুল হান্নান টেলিভিশন নাটকের মধ্যে শাস্তি ও সোনাভান, নাটকে অভিনয় করেছেন। সংস্কৃতি ও নাট্যচর্চায় আব্দুল হান্নান পেয়েছেন অনেক মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান। পেয়েছেন সালেক উদ্দিন স্মৃতি প্রদক, তুলসী লাহিরী নাট্য পদক, পানুপাল নাট্য পদকসহ বেশ কিছু সম্মাননা। আব্দুল হান্নান বলেন পরিবার-পরিজন ও সংসার সচল রাখতে আমি সমবায় মৎস্য সমিতির সাথে যুক্ত থেকে মাছ চাষ করি।
আব্দুল হান্নান বলেন আমি যেন আমৃত্যু বাঙালি সংস্কৃতি লালন ও পালনের সাথে যুক্ত থেকে এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাই এই আমার প্রর্ত্যাশা।